× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

শিক্ষকের শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক

মামুন রশীদ

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:১১ পিএম

শিক্ষকের শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক

বই লেখেননি, আনুষ্ঠানিক আলোচনাসভাতে অংশ নিতেও ছিল অনাগ্রহ। প্রায় এক দশক আগে পেরিয়েছে জন্মশতবর্ষ। মৃত্যুর পরও সময় গড়িয়েছে দুই দশকেরও বেশি। যতই দিন গড়াচ্ছে, ততই তিনি উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন আমাদের চিন্তার জগতে। তাকে অভিহিত করা হয়, ‘শিক্ষকদের শিক্ষক’ অভিধায়। তাকে ঘিরে জ্ঞানপিপাসুদের বাড়ছে আগ্রহ ও কৌতূহল। ক্রমশ স্বমহিমায় আলোকিত হয়ে উঠছেন অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। তার জন্ম ১৯১৪ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায়। পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানার আলীনগর গ্রামে। শৈশব কেটেছে গ্রামে। বাবার চাকরির সুবাদে চলে আসেন ঢাকায়। ঢাকার মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগ থেকে ১৯৩৬ সালে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন। পিএইচডি করার জন্য যান লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে। এখানে তার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন জগৎখ্যাত অধ্যাপক হ্যারল্ড লাস্কি। অধ্যাপক রাজ্জাক তার পিএইচডি শেষ করার আগেই মারা যান হ্যারল্ড লাস্কি। তার গবেষণা কর্ম মূল্যায়নের কেউ নেইÑ এই বিবেচনায় তিনি থিসিস জমা দেননি। ফিরে আসেন দেশে। প্রভাষক পদে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক-অর্থনীতি বিভাগে। পরবর্তীকালে অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান নামে আলাদা দুটি বিভাগ হলে তিনি যোগ দেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে।

ষাটের দশকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ও অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছিলেন। ১৯৬৬ সালে আদালত দুটি মামলাতেই অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের পক্ষে রায় দেন। আদালতের এ রায়ের মাধ্যমে আইয়ুব খানের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেওয়া বিজ্ঞপ্তি বাতিল হয়। সেই সঙ্গে অক্ষুণ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ততার কারণে পাকিস্তান সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং সম্পত্তির ৫০ ভাগ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়। তারা হলেনÑ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, খান সরওয়ার মুরশিদ ও অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে কর্মচ্যুত করেছিল।

১৯৫০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে আব্দুর রাজ্জাকের লেখা থিসিস, ২০২২ সালে ‘পলিটিক্যাল পার্টিস ইন ইন্ডিয়া’ (ভারতের রাজনৈতিক দল) শিরোনামে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশ পায়। যেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন কোনো সামাজিক, অর্থনৈতিক নীতি বা পরিকল্পনা নেই। এদের কর্মসূচি নেতিবাচক। তাই এদের আসলে রাজনৈতিক দল বলা যায় না; বরং এরা হলো রাজনৈতিক আন্দোলন।’ তার সম্পর্কে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘তিনি (অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক) জ্ঞানের তপস্যা ও সাধনা করে জ্ঞান অর্জনে সারাজীবন অতিবাহিত করেছেন, সেজন্যই তাকে ‘জ্ঞানতাপস’ বলতে হয়।’

অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাস করতেন, ‘মাটি, পানি ও মানুষ বাংলাদেশের প্রধান সম্পদ।’ যদি দেশের উন্নয়ন করতে হয়, তাহলে সেই প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রে থাকতে হবে এই তিন সম্পদের উন্নয়ন। তিনি ছিলেন দেশ ও সমাজের প্রতি নিঃশর্ত অঙ্গীকারবদ্ধ; যা তাকে আলাদা করে তোলে অন্যদের থেকে। অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম তার সঙ্গে আলাপচারিতার ভিত্তিতে লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ : অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের আলাপচারিতা’। সাধারণের সঙ্গে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের চিন্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন আহমদ ছফা তার ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ে। ১৯৭৫ সালে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ২৮ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে মারা যান। ‘বাংলার মনীষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন’ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।

 

 

  • কবি, সাংবাদিক

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা