× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

আলু নিয়ে ফের সাপলুডু খেলা!

সম্পাদক

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:২৬ এএম

আলু নিয়ে ফের সাপলুডু খেলা!

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি চলছেই। আমাদের স্মরণে আছে, গত সেপ্টেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ে সাংবাদিকরা পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেছিলেন, ‘সাপের খেলা যে জানে, সে ঠিকই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।’ মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনার গলদের চিত্রই ফের উঠে এসেছিল। একই সঙ্গে এ-ও সামনে এসেছিল, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা, যে মহলটি ‘সিন্ডিকেট’ নামে বহুল পরিচিত, তাদের কারসাজির কথা। আমাদের এ-ও স্মরণে আছে, প্রায় একই সময়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী জাতীয় সংসদে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে যা বলেছিলেন, তা অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ আমরা জানি, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সব সময়ই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত ‘আবারও ঊর্ধ্বমুখী আলুর বাজার’ শিরোনামের প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে তা আমাদের আবারও সাপলুডু খেলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে ভোক্তার সাপের খেলা শেখার প্রয়োজন নেই, বরং অজুহাত দাঁড় না করিয়ে মানুষকে নিত্যপণ্যের তাপ-চাপ মুক্ত করতে সাপুড়েদের খুঁজে বের করার দায়দায়িত্ব যাদের তারা যদি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল হতো। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারত থেকে ২৯ টাকা কেজি আমদানি ব্যয়ে যে আলু আনা হয়েছে, তা বাজারে ৩০ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। কোথাও কোথাও আবার ৫০ টাকা কেজি দরে। সেপ্টেম্বর মাসেই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, দেশের হিমাগারগুলোতে যে পরিমাণ আলু সংরক্ষিত আছে, তা দিয়ে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ঘাটতি হবে না। কিন্তু এরপরও আলুর দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় সরকার আলু আমদানির অনুমতি দেয়। বিপুল পরিমাণ আলু ইতোমধ্যে আমদানি হয়েছেও বটে। অন্যদিকে নতুন আলুও বাজারে আসতে শুরু করেছে। তবু দামের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকতা ফিরে না আসার বিষয়টি বিস্ময়কর যুগপৎ প্রশ্নবোধক। আমরা ইতঃপূর্বে এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই বহুবার প্রশ্ন রেখেছি, বাজার কারসাজির অর্থাৎ সিন্ডিকেটের হোতাদের হাত কি আইনের হাতের চেয়েও লম্বা? দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকারের মন্ত্রীরা বারবার সিন্ডিকেটের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করছেন, ভোক্তা সিন্ডিকেটের কারসাজিতে নাকাল কিন্তু এর কোনো প্রতিবিধান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না! আমরা ফের প্রশ্ন রাখতে চাই, সিন্ডিকেটের শক্তির উৎস কোথায়?

গত পনেরো দিনের ব্যবধানে আলুর কেজিতে যে হারে দাম বেড়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। বাজারে ইতোমধ্যে নতুন আলুর সরবরাহ বাড়লেও তা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সংবাদমাধ্যমেই জানা গেছে, উৎপাদন পর্যায়ে নতুন আলুর দাম অনেক কম। বাজার ব্যবস্থাপনায় জিইয়ে থাকা গলদের বিরূপ ফল যে এরও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন। সংবাদমাধ্যমে আমরা এ-ও দেখেছি, আমদানিকারক এবং হিমাগার মালিকদের সংগঠন পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করার পাশাপাশি উভয় পক্ষই পাইকারি-খুচরা অসাধু ব্যবসায়ীদের সমালোচনা করেছে। বিষয়টি যেন ঠিক সেই সুই আর চালুনির গল্পের মতো। আমরা এক্ষেত্রেও প্রশ্ন রাখতে চাই, অসাধু ব্যক্তিদের অপতৎপরতা বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলগুলো কি ব্যর্থতার খতিয়ান দীর্ঘ করেই চলবে? তারা কি থেকে যাবে জবাবদিহির ঊর্ধ্বে?

আমরা আরও জানি, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আলু, পেঁয়াজ, তেল, ডালসহ আরও কিছু নিত্যপণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রির নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেছে। টিসিবির তরফে বলা হয়েছে, সারা দেশে পর্যায়ক্রমে এর পরিসর বাড়ানো হবে। কিন্তু এ-ও দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলোতে টিসিবির ট্রাক দাঁড়ানোমাত্র সাধারণ ভোক্তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন এবং পণ্য বিক্রয় শুরু হতে না হতেই ফুরিয়ে যায়। দুই দিন আগে প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনেই এই তথ্যও উঠে এসেছে। টিসিবি সিন্ধুর মাঝে বিন্দুর মতো যে কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন প্রেক্ষাপটে পরিসর বাড়ানো তো দূরের কথা, রাজধানীতেই সামান্যসংখ্যক ভোক্তার চাহিদাও মেটানোও তাদের পক্ষে কঠিন।

বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়ে মূলত চাহিদা অনুসারে জোগান কম হলে, অর্থনীতির সরল বিশ্লেষণ তা-ই বলে। কিন্তু আলুর ক্ষেত্রে উল্টো ঘটনা ঘটে চলেছে। সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে একদিকে হিমাগারে চাহিদার অনুপাতে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আলু সংরক্ষিত আছে, অন্যদিকে ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ আলু আমদানিও হয়েছে এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন আলুও। একসময় বলা হতো, ‘বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান’। এখন কিন্তু বৃহদাংশের পক্ষে এটা বলা কঠিন। বাজারের সাপুড়েকে খুঁজে বের করে ভোক্তার স্বস্তি নিশ্চিতকল্পে কথা নয়, আমরা কাজের কাজ দেখতে চাই। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা