প্রজন্মের ভাবনা
মীর ইমরান আলী
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:০৯ এএম
ইন্টারনেটে শুধু
তথ্যই নয়, যেকোনো মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা বিনোদন চাহিদা পূরণ সহজ হয়। অবসর সময়ে
একাকিত্ব ঘোচানোর জন্য ইন্টারনেটের পরতে পরতে সাজানো আছে নানা আয়োজন। আছে সিনেমা, গান,
নাটক, কার্টুন, খবর, টকশো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ শত বিনোদনের ঝুলি। ইন্টারনেট গোটা
বিশ্বকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। আবার ইন্টারনেটই এখন দুশ্চিন্তার বড় কারণ। শিশুর সোনালি
শৈশব সম্পর্কে প্রথাগত ধারনা বদলে যাচ্ছে। তাদের জগতে জায়গা নিয়েছে ইন্টারনেটের ডিজিটাল
এন্টারটেইনমেন্ট। বলা যায়, শিশুরা জীবনের শুরুতেই এক ভয়াবহ আসক্তির শিকার হচ্ছে। বাবা-মার
ইন্ধনেই শিশুর ইন্টারনেট ব্যবহারে হাতেখড়ি। বাইরে নানা সংকট থেকে শিশুকে রক্ষার কথা
বিবেচনা করতে গিয়ে অলক্ষ্যে যেন ক্ষতিই করছেন তারা।
শিশুদের ইন্টারনেট
আসক্তি শৈশবেই বিপদ ডেকে আনছে। চিকিৎসকদের মতে, মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে থেকে নীল আলোর
বিকিরণে চোখের সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। নানা ঘটনা কিংবা পরিস্থিতির
মুখে বাচ্চাদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দেয়া হলেও তাদের কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে
না। ক্লান্ত হলে তারা ফোন রেখে দেবে এমন ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে অনেক অভিভাবকের। অথচ ঘণ্টার
পর ঘণ্টা ডিজিটাল ডিভাইসে বুদ থাকলেও ক্লান্ত হয়না শিশুরা। উল্টো আসক্তি বাড়তে থাকে।
যা শিশুর জন্য খুবই বিপজ্জনক। দেখা যায়, খাওয়ার সময়েও শিশু দেখছে কার্টুন কিংবা ভিডিও
গান। পরবর্তী সময়ে ফোন বা ট্যাব ছাড়া শিশুকে সামলানো যায় না। না দিলেই শুরু হয় রাগ,
জিদ, চিৎকার কিংবা ভাঙচুর। এটা এমন আকার ধারণ করে, এর জন্য বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায়
না, বাইরে খেলতে যায় না, কোনো বন্ধু গড়ে ওঠে না। তাদের একটাই বন্ধু ইন্টারনেট-ইউটিউব।
এ সমস্যা ক্রমেই শিশুকে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শিশুদের ইন্টারনেট
এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে নিয়ন্ত্রণটা করতে হবে কৌশলে।
যেন তারা মনে করে, তাদের ভালোর জন্যই করা হচ্ছে। তাদের কৌশলে বোঝাতে হবে। তারা যদি
অযৌক্তিক দাবি করে, সেটা কোনোভাবেই মানা যাবে না। শিশুরা যদি মনে করে, তারা কান্না
করলে কিংবা জিদ করলে তাদের কথা অভিভাবকরা শুনবে, তাহলে তারা সেটাই করার চেষ্টা করবে।
যখন আমরা অযৌক্তিক দাবি পূরণ করব, তখন শিশুরা প্রশ্রয় পেয়ে যায়। প্রবাদ আছেÑ প্রশ্রয়
পেলে শিশুরা গোল্লায় যায়। তাই শিশুদের মোবাইল ফোন দিলেও নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে হবে।
তার বেশি যেন তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারে।
শিশু ইন্টারনেটে
কোনো ধরনের সাইটে ঢুকছে তার ওপরও নির্ভর করে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ। ইন্টারনেট
এবং মোবাইলে আসক্ত হওয়ায় শিশুদের মধ্যে ফেস টু ফেস যোগাযোগ করার দক্ষতা কমে যায়। এ
ছাড়া সহিংস এবং বড়দের জন্য ভিডিও শিশুরা যদি দেখে তাহলে তাদের মধ্যে এক ধরনের অপরাধপ্রবণতা
বাড়ে। এটা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুদের স্বাভাবিক
বিকাশ নিশ্চিতকরণ ও নিরাপত্তার স্বার্থেই তাদের
হাতে অহেতুক স্মার্টফোন দেওয়া থেকে বিরত থাকা জরুরি, আর প্রয়োজনে দিলেও অবলম্বন করতে
হবে সাবধানতা।