প্রজন্মের ভাবনা
মিশকাতুল জান্নাত
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৯ এএম
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, বিভিন্ন পৌর শহরে ওষুধের
দোকানে গোপনে নেশাজাতীয় ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে। সহজলভ্য এবং দামে কম হওয়ায় অনেকেই
এসব ট্যাবলেট কিনছে। অভিযোগ উঠেছে কিছু অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ ট্যাবলেট
বিক্রি করছে। আমরা জানি, ব্যথানাশক ওষুধ মাদকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করায় সরকার এ
ধরণের ওষুধগুলো ‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন
২০১৮-এর ‘খ’ ৬৫ ধারা মোতাবেক মামলা করার বিধানের কথাও বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এর পরও
কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এ ধরনের ওষুধ
বিক্রির অভিযোগ আছে। শুধু তাই নয়, ঘুমের ওষুধের সঙ্গে নানাধরনের দ্রব্য মিশিয়ে ঝাটকা,
ফুটুস, ঝাঁকি নামে তরল ওষুধও বিক্রি হয়।
সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন ও গবেষণা সংস্থার পরিসংখ্যান
অনুসারে, দেশে মাদক সেবনকারীর বড় অংশই যুবক। গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, শহরের
বস্তি এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ শিশু-কিশোর মাদকাসক্ত। মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায়
চাকরিজীবীর পাশাপাশি শিক্ষার্থী, বেকার যুবক ও শিশু-কিশোররা সহজে মাদকদ্রব্য সেবন
করতে পারে। বিষাক্ত মাদকদ্রব্য সেবনের মাধ্যমে একজন মানুষ দিন দিন করুণ মৃত্যুর
দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৭ ভাগ শিশু ও বৃদ্ধ, ৬৩ ভাগ
তরুণ ও কিশোর-কিশোরী। একটি তথ্য বলছে, ১২-১৭ বছর বয়সীর মাঝে ১.৫ শতাংশই মাদকাসক্ত।
তরুণ প্রজন্মের বেশিরভাগই হতাশা, বিচ্ছেদ, বেকারত্ব থেকে সাময়িক মুক্তির আশায় মাদকাসক্তের
দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
মাদক সেবনের ফলে শরীরে নানা জটিল উপসর্গ দেখা দেয়। তবে মাদকের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়ে মনে। স্মৃতিলোপ, মেজাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো, অবসাদ, ক্লান্তি, খিটমিটে স্বভাব এবং আসক্তির মতো ভয়াবহ মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে নানা জটিল মানসিক ব্যাধি দেখা দেয়। মাদকের করালগ্রাসে পারিবারিক কলহ, সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম, সমাজসহ দেশজুড়ে। ২০০৭ সালে নিউইয়র্কের গবেষক ফাওলার মাদকাসক্তের মস্তিষ্কের ইমেজ বা ছবি তৈরির কাজ করতে গিয়ে দেখেন মাদকাসক্তদের মস্তিষ্কের স্মৃতিকেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেওয়ার অংশ ও আচার-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের অংশবিশেষ স্বাভাবিক মানুষ থেকে বেশ আলাদা। মাদকাসক্তরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। মেধাশক্তি লোপ, ব্লাড ক্যানসার, এইচআইবি, হেপাটাইটিস সির মতো মরণঘাতী রোগ বাসা বাঁধে তাদের শরীরে। মাদকমুক্ত সমাজ গঠন করতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি। পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে ধর্মীয় অনুশাসনের শিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে, বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে এবং সবার থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাদকবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মাদকদ্রব্য উৎপাদনকারী ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোনো ফার্মেসি যেন চিকিৎসাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি না করে সেজন্য তদারকি বাড়াতে হবে।