× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

ঋণ আদায়ে প্রয়োজন জোরালো ভূমিকা

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:২৪ এএম

আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫২ পিএম

ঋণ আদায়ে প্রয়োজন জোরালো ভূমিকা

শাস্ত্রে প্রয়োজনে ধার করে ঘি খাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু ঘি খাওয়ার জন্য নেওয়া ধারের টাকা যে শোধও করতে হবে, শাস্ত্রে এমন কিছু বলা রয়েছে কি না সে নিয়ে প্রচার নেই। ফলে ঋণ নিলে পরিশোধ করতে হবে না, এই ধারণাটিই সম্ভবত আমাদের বিশ্বাসের ভিত দৃঢ় করেছে। এজন্য সব ধরনের ধার পরিশোধেই যত গড়িমসি। আর ব্যাংকঋণ পরিশোধে আমাদের তুমুল অনাগ্রহই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব ধরে টান দিতে শুরু করেছে।

ধার নেওয়া মানেই রসনাবিলাস মেটানো, তা নয়। ধারের মাধ্যমে সফল হয় অনেক ভালো উদ্যোগ। একটি ভালো ব্যবসায়িক উদ্যোগ যখন প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে, তখনই স্পষ্ট হয় ধারের উপযোগিতা। মূলধনের অভাবে যেন ব্যবসায়িক উদ্যোগটি পিছিয়ে না পড়ে, সে লক্ষ্যেই ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসে। সরকার নিজেও এ ক্ষেত্রটিকে নানাভাবে উৎসাহিত করে। সরকারের তেমনি একটি উদ্যোগ তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃষি খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে বিনা সুদে মূলধন সহায়তা। প্রায় দুই যুগ আগে সম্ভাবনাময় আইসিটি শিল্প এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে ২০০০-০১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে গঠন হয় ইইএফ। এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। আস্তে আস্তে এখানে তহবিলের পরিমাণ বাড়ে। ২০০৯ সালে তহবিল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় আইসিবিকে। কিন্তু অন্যান্য অনেক সরকারি উদ্যোগের মতো এ উদ্যোগটিরও সঠিক ব্যবহার হয়নি। ২ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলছে, ফান্ডটি ব্যবহারের চেয়ে অপব্যবহারই হয়েছে বেশি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মেয়াদ শেষ হলেও অনেক গ্রাহক ঋণের টাকা পরিশোধ করছেন না। যা হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে পুরো উদ্যোগটিকেই। গ্ৰাহকের কাছে পাওনা টাকা উদ্ধারে আদালতে মামলাও হয়েছে। কিন্তু ফলাফল প্রায় শূন্য।

বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে ইইএফ থেকে চিংড়ি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণে হিমাগার নির্মাণের জন্য ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা নেয় নোয়াখালী জেলার চর উড়িয়ার মান্নান নগরের নোয়াখালী গোল্ড ফুডস লি.। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন হওয়া অর্থে বিদেশ থেকে মেশিনারিজ আমদানির বিষয়টি যেমন নিশ্চিত করেনি তেমনি বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ বিষয়েও তাদের সদুত্তর নেই। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিবির পরিদর্শন দল প্রকল্পটি বন্ধ দেখতে পেয়েছে, প্রতিদিনের বাংলাদেশের অনুসন্ধানেও প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকার কথাই জানা গেছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, পরিদর্শক দল এই প্রকল্পের অনুমোদন আইনবিরোধী বলে উল্লেখ করলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একইভাবে ইইএফ থেকে ঋণ নেওয়া আরেকটি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার হ্যাচারি অ্যান্ড ফিশারিজ। তারা ২০০৪ সালে ঋণ নেয় ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মাছ চাষ বা পোনা উৎপাদনে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এমনকি বিনিয়োগের আগে প্রকল্পে কোনো বিশেষজ্ঞ নিয়োগ না করার পরও তাদের বিনিয়োগের অর্থ ছাড় হয়েছে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উন্মোচিত হয় প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জমির দলিল, মিউটেশন ও খাজনার যে প্রমাণাদি দিয়েছেন তার পুরোটাই ভুয়া। ইইএফ ফান্ড থেকে বিনিয়োগ করা অর্থের বিষয়ে সংসদীয় কমিটির ৬৭তম সভার কার্যবিবরণীতে ইইএফ থেকে ঋণ বিতরণ করা ২৪৩টি প্রকল্পে অনিয়ম শনাক্ত হওয়ার কথা বলা হয়। নিয়মবহির্ভূতভাবে ওই ২৪৩টি প্রকল্পে ২৭৬ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১৯ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বাকি ১৫৭ কোটি টাকা আদায় করা যায়নি।

গ্রাহক ঋণ নিয়ে শোধ করছে না, সে দায় যেমন গ্রাহকের, তেমনি যিনি ঋণ দিচ্ছেন তার দায়ও এড়ানোর সুযোগ নেই। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রাহকের যেসব তথ্য যাচাই করার কথা, তাদের যে যোগ্যতা নিরূপণের কথা, সেগুলো যদি যথাযথভাবে না হয় এবং তার ফলে গ্রাহক খেলাপি হন, সে দায় ঋণদাণকারী কর্তৃপক্ষও এড়াতে পারে না। অথচ নতুন উদ্যোক্তা তৈরির জন্য এটা ছিল সরকারের মহৎ একটি উদ্যোগ। আমরা মনে করি, এক্ষেত্রে শুধু মামলা করাই যথেষ্ট নয়। আমরা দ্রুততম সময়ে ঋণের টাকা আদায়ের ওপর জোর দেওয়ার জন্য বলি। সেই সঙ্গে ঋণ বিতরণে কোথাও অনিয়ম হয়ে থাকলে তারও যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলি। খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকার ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা জরুরি। অন্যথায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এরকম খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়লে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো একসময়ে ছোট সংস্থাগুলোকে ঋণ জোগাতে অনীহা দেখাতে পারে। যা হবে শিল্পের প্রসারের পথে বাধা। আবার অনাদায়ি ঋণের বোঝা সইতে না পেরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দুর্গতির মুখে পড়তে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা