স্মরণ
শুভঙ্কর মেঘ
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৮ এএম
এ কে ফজলুল হক জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত নাম। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে ফজলুল হক ছিলেন আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্মী। চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সংগঠক হিসেবে কীর্তিমান হয়ে আছেন। নিউক্লিয়াস ও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ভাষা আন্দোলনেও ছিলেন সম্পৃক্ত। নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন রাউজান থানা আওয়ামী লীগ। সংগঠনের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। ১১ নম্বর পশ্চিম গুজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি একই ইউনিয়নের প্রথম চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। রাউজানে সমবায় আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবেও তিনি সমধিক পরিচিত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে ফজলুল হক
বীর মুক্তিযোদ্ধা
এ কে ফজলুল হক ১৯৩২ সালের ১৭ জুলাই রাউজানে সম্ভ্রান্ত ও বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তার বাবা আলহাজ ওছমান আলী মাস্টার (রহ.) ওরফে ‘বড় মাস্টার’ ছিলেন একাধারে শেরেবাংলা
এ কে ফজলুল হকের ঋণ সালিশি বোর্ডের সদস্য, চট্টগ্রাম আদালতের জুরার এবং রাউজান শিক্ষক
সমিতির আমৃত্যু সভাপতি, উত্তর চট্টগ্রামের ‘শিক্ষকরবি’ খ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক ও মুসলিম
মনীষা। বাবার মতো ছেলেও জড়িয়ে পড়েছিলেন রাজনীতিতে। রাজনীতিতে তার অবদানও কম নয়। দেশের
গুরুত্বপূর্ণ সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগ
আন্দোলন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে (যুক্তফ্রন্ট) নির্বাচন, ১৯৬৮ সালে শিক্ষা
আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ
বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের
বাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম প্রধান শেল্টার হাউস হিসেবে পরিচিত ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধারা
বিভিন্ন সময় তাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। নানাভাবে সহযোগিতা পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী
সময়ে সরকারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামে তার সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাপক অবদান
রেখেছে।
আমৃত্যু অসাম্প্রদায়িক ও দুর্বার সাহসী ফজলুল হক দীর্ঘদিন অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ১১ নম্বর পশ্চিম গুজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং রাউজান চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ছিলেন। গহিরা শান্তির দ্বীপ কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতিরও দীর্ঘ সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। নিজ এলাকায় শিক্ষা বিস্তারেও রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন শিক্ষার মাধ্যমেই জাতিকে অন্ধকারের করালগ্রাস থেকে মুক্ত করা সম্ভব। ১৯৮৭ সালের ৭ জানুয়ারি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার প্রয়াণ ঘটে। তাকে বিনম্র শ্রদ্ধা।