প্রজন্মের ভাবনা
সায়মা আক্তার এশা
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:১৮ এএম
জাতিসংঘের জলবায়ু
পরিবর্তন সম্পর্কিত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন ইউএনএফসিসির মতে, তৈরি পোশাক পৃথিবীর দ্বিতীয়
বৃহত্তম দূষণকারী খাত। পোশাক খাত বিশ্বের ২০ শতাংশ বর্জ্য পানি এবং ১০ শতাংশ কার্বন
ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের জন্য দায়ী। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টের গবেষণার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের
নদীগুলোয় প্রাণঘাতী ভারী ধাতুসহ প্রায় ৬০ রকমের বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি
বছর পোশাক শিল্প কারখানায় পোশাক ও তুলা ধোয়ার এবং রঙ করার কাজে ১ হাজার ৫০০ বিলিয়ন
লিটার পানি প্রয়োজন। ব্যবহারের পর এ বিষাক্ত পানি জলাশয়ে নিষ্কাশন করা হচ্ছে। অধিকাংশ
কারখানা নদীতীরবর্তী হওয়ায় তাদের বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। ফলে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত
হচ্ছে পরিবেশ। পানিদূষণের ফলে কমছে মাছের সংখ্যা ও চাষের উপযোগী জমি। বেশিরভাগ স্থানীয়
কৃষক ও মৎস্যজীবীর জীবিকা এখন ঝুঁকিপূর্ণ। ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের গবেষণা
অনুযায়ী, পোশাক শিল্পের অনুন্নত অবকাঠামোর কারণে বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ
কমতে শুরু করেছে। ঢাকার পোশাক কারখানার জন্য সরবরাহকৃত পানির প্রায় ৮২ শতাংশই ভূগর্ভস্থ।
পানির এ বিশাল চাহিদা পূরণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ২-৩ মিটার হ্রাস পাচ্ছে।
পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে ২০৫০ সালের মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ কমে
গিয়ে ১১০ থেকে ১১৫ মিটারে নেমে যাবে।
ভবিষ্যতে জনসংখ্যা
বৃদ্ধির সঙ্গে ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে বিদ্যমান পোশাক শিল্প আরও সম্প্রসারিত
হবে। তাই পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনতে টেকসই পোশাক কারখানার দিকে ধাবমান
হওয়া জরুরি। বর্জ্য নিষ্কাশনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পোশাক কারখানার কর্মচারীদের দক্ষতা
বৃদ্ধি প্রয়োজন। উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্পকারখানায় পানির
ব্যবহার হ্রাস করে বর্জ্য নিষ্কাশন কমানো প্রয়োজন। কাঁচামাল দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার
করলে বর্জ্যের পরিমাণ আরও কমিয়ে আনা সম্ভব।
ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোধে পোশাক কারখানাগুলো বৃষ্টির পানি সঞ্চয় করতে পারে। এ ছাড়া উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্বালানি, পানি ও বাষ্পের ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করার বিষয়ে গার্মেন্টস মালিকদের সচেতন করতে হবে। পোশাক কারখানাগুলোয় যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় তার ৮০ ভাগ সৌর, বায়ু বা জল বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কলকারখানার মালিক ও কর্মচারীদের মধ্যে এখনও অনেকক্ষেত্রেই পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। দেশের কারখানাগুলোর পরিবেশ বিষয়ক তদারকির জন্য যথেষ্ট লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। পোশাক কারখানার অশোধিত ডায়িং বর্জ্য নদীতে উন্মুক্ত করা যাবে না। প্রতিটি কারখানায় কেন্দ্রীয় শোধনাগার তৈরি করা প্রয়োজন। উচ্চ মান শোধিত বর্জ্যই শুধু নদীতে উন্মুক্ত করতে হবে। গত কয়েক বছরে দেশে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা গড়ে তুলেছেন উদ্যোক্তারা। ভালো উদ্যোগগুলো প্রচারের মাধ্যমে অংশীদারদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এ সমস্যার সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।