× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক

যাদের মৈত্রীর বন্ধনে মানবিক বিপর্যয়

ডেভিড পাওয়েল

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৩৫ পিএম

যাদের মৈত্রীর বন্ধনে মানবিক বিপর্যয়

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চতুর্থবারের মতো মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত-সহিংস পরিস্থিতি ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্যও তা বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্লিঙ্কেন স্পষ্টতই জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধাবস্থা বন্ধের পরও যেন বিদ্যমান সংকটের বিষয়ে আলোচনা বন্ধ না হয় সে বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। আলোচনার সুযোগ যতই কঠিন হোক না কেন, তা করতেই হবে। আপাতত এটুকু স্পষ্ট, প্রতিবার সফরকালে ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গেই সবচেয়ে কঠিন আলোচনা করতে হয়েছে তাকে।

আঞ্চলিক সফরকালে ব্লিঙ্কেন অবশ্য ইসরায়েলের প্রতি দেশটির সমর্থনের কথাও জানিয়েছেন। গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা করে এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এখন পর্যন্ত শখানেকের মতো ইসরায়েলিকে তারা জিম্মি করে রেখেছে। তবে গাজায় তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই তাও জানানো হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ যুদ্ধ ইসরায়েল আদতে কীভাবে পরিচালনা করছে। যুদ্ধ শেষ হলে গাজা কার দ্বারা বা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে? গাজা ও পশ্চিম তীরের মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পরিণতিই বা কী হবে তা-ও নতুন করে আমাদের সামনে উঠে এসেছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল প্রশাসনের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিতে শুরু করেছে।

ব্লিঙ্কেনের এ সফরটিতে তিনি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করার জন্য ইসরায়েলি সেনারা বেপরোয়াভাবে হামলা চালাচ্ছে। ব্লিঙ্কেন মূলত এ বেপরোয়া হামলা বন্ধ করে হামাসকে চিহ্নিত করে হামলার পরামর্শ দিয়েছেন। ইসরায়েলের কোয়ালিশন সরকারের কয়েকজন উগ্রবাদী সদস্যের সঙ্গেও তার আলোচনা হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের জোর করে গাজার বাইরে অভিবাসনের পক্ষে তারা নয়। এমনকি গাজা উপত্যকা থেকে তাদের অভিবাসন করে অন্য স্থানে নেওয়ার বিষয়েও দেশটির মত নেই। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ব্লিঙ্কেনকে আশ্বস্ত করেছেন, তার সরকারের নীতিমালা অনুসারে এমনটি হবে না। যুদ্ধ শেষে গাজার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে তা বহুবার জানতে চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে চাপ দিয়েছে। কিন্তু বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ বিষয়ে স্পষ্ট উত্তর দেননি। কারণ তার কোয়ালিশন সরকারের মধ্যে যেন কোনো অসংহতি দেখা না দেয় সেজন্য এ বিষয়ে এখনই মতামত দেওয়া সহজ না। রক্ষণশীল রাজনৈতিক দলগুলো গাজায় ইসরায়েলি আধিপত্যের পক্ষে থাকলেও মধ্যপন্থিরা এ ভাবনা থেকে কিছুটা হলেও সরে আসছে। ইসরায়েলের ন্যাশনাল ইউনিটি পার্টির মধ্যপন্থি নেতা বেনি গান্টজ সম্প্রতি গাজা থেকে ইসরায়েলের বের হয়ে আসার পন্থা খোঁজার তাগাদা দিয়েছেন। ব্লিঙ্কেন যেদিন সন্ধ্যায় ইসরায়েলে পৌঁছান সেদিন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্ট একটি সমঝোতা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। সমঝোতা পরিকল্পনায় বলা হয়, হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন সিভিলিয়ানরা গাজায় প্রাত্যহিক কাজকর্ম বিনা বাধায় সম্পন্ন করতে পারবে। পরিকল্পনা অনুসারে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ইসরায়েলের ওপর থাকবে এবং আন্তর্জাতিক কোনো পক্ষ গাজা পুনর্গঠনের কাজ করবে। যদিও আন্তর্জাতিক পক্ষটি নির্দিষ্ট করা হয়নি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ‘নতুন ও পুনর্গঠিত’ প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি (পিএ) গড়ার পক্ষে। ২০০৬ সালে প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটিকে হটিয়ে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়। নেতানিয়াহু অবশ্য পিএ’র ফিরে আসার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তার মতে, পুনর্গঠিত হোক বা নতুন করে গড়া হোক, প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি ইসরায়েল ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠবে। ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জাচি হানেগবি অবশ্য বলেছেন, ‘প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি এখনও গাজার শাসনভার পরিচালনা করার উপযুক্ত নেতৃত্ব ও সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। সংগঠনটি পুনর্গঠন করা হতে পারে। ইসরায়েলও এর জন্য প্রস্তুত ছিল।’ আরবের একাধিক রাজধানী সফর শেষে ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল সফর করেন। পিএ’র প্রত্যাবর্তনের খবরটি তিনি নিয়ে এসেছেন। এটি নেতানিয়াহুর জন্য অবশ্যই সুখবর নয়। বছরখানেক আগে ক্ষমতায় ফেরার পর নেতানিয়াহু মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের নির্ধারিত শান্তিপ্রক্রিয়াগুলো আরব দেশগুলোয় প্রচার করার উদ্যোগকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে ব্লিঙ্কেন তাকে সতর্ক করে দিয়েছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করতে না পারলে এ অঞ্চলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কাজটি কঠিন হয়ে পড়বে। আর এ স্বাধীন রাষ্ট্র যাতে প্রতিষ্ঠা হতে না পারে সেজন্যই নেতানিয়াহু এত দিন লড়াই চালিয়ে আসছেন। হামাসের অপতৎপরতার দোহাই দিয়ে গাজায় একের পর এক হামলা পরিচালনা করছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা ইসরায়েলিদের জন্যও মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ বন্ধ করার বিষয়ে নিজের গর্বের কথা গত মাসেই এক ভাষণে জানিয়েছেন তিনি।

ইসরায়েল এখনও যুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছে। মার্কিন চাপে তারা যুদ্ধ থেকে সরে আসবে এমনটি মনে হচ্ছে না। সংকটও রয়ে গেছে। ‘নতুন কিংবা পুনর্গঠিত’ প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি বলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আদতে কী বুঝিয়েছে তা স্পষ্ট নয়। ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করার ব্লিঙ্কেনের আহ্বানেও নানা ঘাটতি রয়েছে। বাস্তবে নতুন একটি রাষ্ট্র গড়ে ওঠার জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। আপাতত এ আহ্বান অনেকটা ফাঁপা বুলির মতোই মনে হচ্ছে। তা ছাড়া মার্কিন প্রশাসনের শান্তি বিষয়ক চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে নেতানিয়াহু যে দক্ষতা ও মেধার পরিচয় দিয়েছেন তা থেকে অনুমান করা যায়, গাজায় তিনি বেপরোয়া হামলা চালিয়ে যাবেন। নেতানিয়াহুর ভবিষ্যৎ শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলিদের ওপর নির্ভর করবে। নির্বাচন পেছানোর ছুতো হিসেবে নেতানিয়াহু এ যুদ্ধকে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ইসরায়েলিদের প্রশ্নের মুখে তাকে পড়তে হবেই। গাজায় প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটিকে দাবিয়ে রাখায় হামাস শক্তি সঞ্চয় করেছে, এ দায়ের জন্যও তাকে অভিযুক্ত হতে পারে। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলাই বলে দিয়েছে, ইসরায়েলিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আদর্শ ব্যক্তি তিনি নন। বাইডেন প্রশাসনও হয়তো তা বুঝতে পেরেছে। শান্তিপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্য গড়ার যে বাস্তবিক ভাবনা বাইডেন প্রশাসনের রয়েছে, তা বাস্তবায়নের জন্য মার্কিন প্রশাসন মধ্যপন্থি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কাজ করবে কি না তা-ই দেখার বিষয়।


  • সাংবাদিক

 

আল আরাবিয়া থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা