× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

মিরপুর মুক্ত দিবস ও লে. সেলিম

আমিরুল আবেদিন

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:০২ এএম

মিরপুর মুক্ত দিবস ও লে. সেলিম

১৯৭২ সালের এই দিনে ঢাকার মিরপুর মুক্ত করতে গিয়ে লেফটেন্যান্ট সেলিম সামরিক বাহিনীর ৪১ সদস্য, শতাধিক পুলিশ ও মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে জীবন উৎসর্গ করেন। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হওয়ার পরও দেশের অনেক স্থান হানাদার দখলদারমুক্ত হয়নি। তার মধ্যে মিরপুরও ছিল। জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে অবরুদ্ধ মিরপুর মুক্ত করার অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব লেফটেন্যান্ট সেলিমের ওপর বর্তায়। এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় জেনারেল মঈনুল হোসেনের ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষী’ গ্রন্থে। সেলিমকে তার নিজ সেনা বি-কোম্পানি থেকে বিচ্ছিন্ন করে হঠাৎ বেলা ১১টায় মিরপুরে যুদ্ধের মাঝখানে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দিয়ে নিজে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেন তৎকালীন মেজর মঈন। আর একপর্যায় হেলাল মোর্শেদও আহত সেলিমকে যুদ্ধের মাঝে রেখে নিরাপদ স্থানে সরে পড়েন। ৩০ জানুয়ারি বেলা ১১টায় ঘটনাস্থলে সেলিম পৌঁছানোমাত্র গোলাগুলি শুরু হয়। ১২ নম্বর পানির ট্যাংকের পেছন থেকে প্রথম গুলি ধেয়ে আসে। রাস্তার অন্য পাশে কাঁঠাল গাছের ফাঁক দিয়ে একটি গুলি এসে সেলিমের ডান বুকে বিদ্ধ হয়। গুলিটি কোন দিক দিয়ে এসেছে বোঝা যায়নি। আঘাতের আকস্মিকতায় লেফটেন্যান্ট সেলিম প্রথমে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে এলে উঠে শার্ট দিয়ে বুক বেঁধে ফেলেন। উপস্থিত সেনাদের আশ্বস্ত করতে বললেন, ‘আমি বেঁচে থাকতে তোমাদের ছেড়ে যাচ্ছি না।’

লেফটেন্যান্ট সেলিম

বিকালের দিকে জীবিত সেনাদের নিয়ে কালাপানির ঢালে যখন তিনি দাঁড়িয়ে ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ফ্যাকাশে ও ক্লান্ত। ওই অবস্থায়ই সবাইকে বিল পেরিয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকে যাওয়ার উৎসাহ জোগান। ক্লান্ত শরীরটা একটি গাছের আড়ালে রেখে একের পর এক গুলি চালিয়ে গেছেন শত্রুদের দিকে। কভার ফায়ার দিয়ে সহযোদ্ধাদের সরে যেতে সাহায্য করছিলেন। তার ধারণা ছিল সহযোগিতা দ্রুতই এসে পৌঁছাবে। না, কেউ তাকে উদ্ধার করতে যায়নি। একসময় আকাশের ফ্যাকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বীরনক্ষত্র সেলিম চিরবিদায় নেন পৃথিবী থেকে।

এই বীরযোদ্ধা এবং তার ভাই লে. আনিস (ডা. এম এ হাসান) ২৫ মার্চ, ১৯৭১-এ ঢাকার তেজগাঁওয়ে ১ প্লাটুন পুলিশ সদস্য নিয়ে যে যুদ্ধ শুরু করেন তা পরিণত হয় ১৯৭১-এর ১৪ এপ্রিল লালপুর আশুগঞ্জে এবং শেষ হয় আখাউড়া যুদ্ধে। ২৫ মার্চ, ৭১-এ পাকিস্তানিদের আক্রমণে নগরবাসী যখন স্তম্ভিত, বিমূঢ় এবং ক্ষেত্রবিশেষ ভীতসন্ত্রস্ত তখন আগুনের তৈরি দুটি ভাই সেলিম ও আনিস ১ প্লাটুন পুলিশ নিয়ে পাকিস্তানিদের রুখতে দাঁড়িয়ে গেলেনÑ পাকিস্তান সার্ভে অফিস, তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, সাতরাস্তার মোড় এবং সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরের সামনে। সে এক অবর্ণনীয় ইতিহাস। ৩১ মার্চ সেলিম ও আনিস যোগ দেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে। ২ এপ্রিল, ১৯৭১-এ সরাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিরোধযুদ্ধে শরিক হন তারা ক্যাপ্টেন মতিনের সঙ্গে। ১৪ এপ্রিল. ১৯৭১-এ লালপুরে পাকিস্তানিদের সঙ্গে সম্মুখসমরে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে অংশ গ্রহণ করেন সেলিম ও আনিস।

শহীদ লে. সেলিম জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অবর্ণনীয় সাহসিকতা, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে গেছেন। অথচ এই বীরশহীদকে অজানা কারণে বীরের প্রকৃত মর্যাদা থেকে দূরে রাখা হয়েছে। এমনকি মিরপুরের যুদ্ধ যেখানে একক যুদ্ধে সর্বোচ্চসংখ্যক সেনা প্রাণ দিয়েছেন সেটাকে মুক্তিযুদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে অদ্ভুত এক যুক্তিতে। ৩০ জানুয়ারি, ১৯৭২ পর্যন্ত মিরপুর স্বাধীন হয়নি এটা বাস্তবতা ও সত্য। এ কারণে এ যুদ্ধে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের যথাযথ সম্মান থেকে বঞ্চিত করা ভয়াবহ অপরাধ।

  • সাংবাদিক ও অনুবাদক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা