× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

ধর্ষকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হোক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:১০ এএম

ধর্ষকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হোক

ধর্ষণের ঘটনা কি বেড়েছে? অন্তত সংবাদপত্রে যেভাবে ধর্ষণের শিকার নারীদের সংবাদ আসছে, তা উৎকণ্ঠার। পরিসংখ্যান বলছে, সম্প্রতি নারী নির্যাতনের যত ঘটনা ঘটেছে তার মাঝে ধর্ষণের সংখ্যাই বেশি। ইতঃপূর্বে উচ্চ আদালতে পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত পাঁচ বছরে কেবল থানাতেই ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে ২৬ হাজার ৬৯৫টি। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের যে চিত্র বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে আসছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। ২৯ জানুয়ারি ‘খুলনায় ধর্ষণের শিকার নারী হাসপাতাল থেকে অপহৃত’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ধর্ষণের অভিযোগ আনার পর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি হওয়া এক তরুণীকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়রা অপহরণের সময় দুর্বৃত্তদের সহযোগিতার অভিযোগে আটক করে ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুজ্জামানকে। অপহরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অপহৃত তরুণীকে যশোরের কেশবপুর উপজেলা থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। অপহৃত তরুণীর অভিযোগ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন তাকে ধর্ষণ করেছেন ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ। যদিও সংবাদমাধ্যমে নিজের সম্পর্কে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে এজাজ আহমেদ বলেছেন, ‘আমাকে হেয় করতে একটি পক্ষ এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ একই দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শেষ পাতায় প্রকাশিত ‘রামগতিতে গৃহবধূ, পাকুন্দিয়ায় তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় এক গৃহবধূ তাকে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় এক শ্রমিক লীগ নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনার আট দিন পর ২৮ জানুয়ারি থানায় মামলা করেছেন গৃহবধূর মা। মামলার প্রধান আসামি রামগতি উপজেলা শ্রমিক লীগের সদস্য সচিব জোবায়ের হোসেনও অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় করার জন্য একটা পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’ অপরদিকে অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় অটোরিকশা থেকে তুলে নিয়ে এক তরুণীকে দলবেঁধে ধর্ষণের। পুলিশ এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, আমরা এ কোন বর্বরতার মধ্যে বসবাস করছি? চলতি সপ্তাহেই গা শিউরে ওঠার মতো আরও কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে সংবাদপত্রে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে ভুল করে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে নির্যাতনের শিকার হয় ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। মেয়েটিকে নির্যাতনের ঘটনায় ট্রেনটির অ্যাটেনডেন্ট আক্কাছ গাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়। যেভাবে একজন উপজেলা চেয়ারম্যান, একজন শ্রমিক লীগ নেতা, দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযুক্তরা এবং ট্রেনের অ্যাটেনডেন্টের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, তা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, রীতিমতো ধিক্কারযোগ্য। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের এই চিত্র উদ্বেগের। নারী কোনোভাবেই ভোগের সামগ্রী নয়। নারী কখনই ভোগাকাঙ্ক্ষী মানুষের নোংরামির শিকার হতে পারে না। আমরা মনে করি, নারীকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা জরুরি। সেই সঙ্গে জরুরি যথাসময়ে অপরাধীর শাস্তিও নিশ্চিত করা। আমরা বরাবরই দেখছি ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের খবর সংবাদমাধ্যমে যত পাওয়া যায়, এসব অপরাধের দায়ে অপরাধীদের শাস্তির খবর মেলে তার চেয়ে অনেক কম। ফলে অপরাধীর মাঝে অপরাধ করে পার পাওয়ার মানসিকতা কাজ করে। যা অপরাধীকে উৎসাহী করে অপরাধকর্মে লিপ্ত হতে। তাই ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের অপরাধের লাগাম টানতে অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীর বিচারের উদ্যোগ নিতে হবে। মনোবিদদের মতে, খুব কম ক্ষেত্রেই ধর্ষণ শুধু যৌন-ইচ্ছা পরিপূরণের উদ্দেশ্যে করা হয়। বরং এর প্রধান কারণ নারীকে দমিয়ে রাখার মানসিকতা। পুরুষতান্ত্রিক এই মানসিকতাই কাজ করে ধর্ষণের মতো অপরাধের পেছনে। তাই ধর্ষকের শাস্তির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনের মধ্যে চেপে থাকা অন্ধকার দূর করতেও সামাজিক উদ্যোগ জরুরি। আমরা দেখছি, ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগের তদন্ত করা হয়, কিন্তু অভিযোগ গঠন করতে পেরিয়ে যায় দীর্ঘ সময়। আর অভিযোগপত্র গঠনের পর যেগুলো বিচারের জন্য আদালতে ওঠে তারও নিষ্পত্তির সংখ্যা কম। যা ধর্ষণের মতো অপরাধের জন্য উদ্বেগজনক। তাই আমরা এ বিষয়েও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য বলি।

আমাদের সমাজে ধর্ষণ একজন নারীর জন্য যে চরম অপমান ও অসম্মান বয়ে আনে, আর কোনো ঘটনাই তার তুল্য নয়। যা আবারও স্পষ্ট হয় লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের কেবিনে ‘ধর্ষণের শিকার’ হওয়া ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর বাবার কথাতে। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘তার কিশোরী মেয়ের মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা কখনও সারাবার নয়।’ তাই, ধর্ষক সে যে-ই হোক, তার অপরাধের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হোক, এই আমাদের প্রত্যাশা।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা