× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

ক্যানসারের চিকিৎসাব্যবস্থা সুগম হোক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৩৫ এএম

ক্যানসারের চিকিৎসাব্যবস্থা সুগম হোক

ক্যানসার দুরারোগ্য ব্যাধি বটে কিন্তু সংক্রামক নয়। প্রতি বছর ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি ক্যানসার দিবস হিসেবে পালিত হয়। এবারও সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশে দিবসটি পালিত হয়েছে ‘যত্নের ঘাটতি কমিয়ে আনুন’Ñএই প্রতিপাদ্য ধারণ করে। ক্যানসার চিকিৎসা এখনও বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে উপযুক্ত চিকিৎসায়ও। আমাদের পরিস্থিতিও এর বাইরে নয়। তবে ‍বাড়তি উদ্বেগের কারণ হলো, আমাদের যেটুকু সামর্থ্য-সংগতি-সরকারের উদ্যোগ রয়েছে এর সদ্ব্যবহারে যথেষ্ট গলদ রয়েছে। দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিরাজমান অনিয়ম-দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশের শীর্ষ প্রতিবেদনে এই চিত্রই ফের উঠে এসেছে। ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের যে চিত্র ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। টানা চতুর্থবারসহ পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফের যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে সেই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ক্ষেত্রেই সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আরও গভীর মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি আমরা জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দিই। প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদকের কাছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস ব্যক্ত করেছেন, তা-ও আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু মন্ত্রীকে একই সঙ্গে এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, স্বাস্থ্য খাতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়মের যে ঘুণপোকা বাসা বেঁধেছে তা নির্মূলে সরকারের নির্মোহ অবস্থানের পাশাপাশি সংস্কারের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে রাখতে হবে।

প্রতিদিনের বাংলাদেশের ওই প্রতিবেদনে ক্যানসার রোগ ও চিকিৎসার বার্ষিক যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা কোনোভাবেই স্বস্তির নয়। ক্যানসার চিকিৎসায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৫০০। এর বিপরীতে প্রতি শয্যার পেছনে রোগী রয়েছে ৩ হাজার। ক্যানসার চিকিৎসা নিয়ে বাণিজ্যের যে চিত্র উঠে এসেছে তা আরও বেশি উৎকট, যুগপৎ প্রশ্নবোধক। প্রত্যেকটি রোগীকে হাসপাতালে শয্যা পেতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা কেমো এবং রেডিওথেরাপির সিরিয়াল পেতে দিতে হয়ে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই তথ্য উন্মোচন করেছে সেবার নামে জীবন মুঠোবন্দি করে অসাধু চক্র কী ভয়াবহ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যয়ের চিত্র আরও অনেক বেশি স্ফীত। এক কথায় বলা যায়, দুরারোগ্য এই ব্যাধির চিকিৎসায় ব্যবস্থাপনা যেটুকু দৃশ্যমান হয়, তা সিন্দুর মাঝে বিন্দুর মতো। এত জটিল একটি ব্যাধির চিকিৎসায় এ রকম অসংগতি কিংবা ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা আশা করব সরকার তার প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার অনুযায়ী সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এবং স্বাস্থ্য খাতে সুষম ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সক্ষমতার পরিচয় দেবে। স্বাস্থ্য খাতের মতো জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এবার মন্ত্রিসভায় যাকে দেওয়া হয়েছে তিনি অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলেও দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসক এবং অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে তার বিশেষ ভূমিকা সাধুবাদযোগ্য। আমরা আশা করব, তিনি তার স্বচ্ছতার মানদণ্ডে সীমিত সাধ্যের মধ্যে হলেও ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে স্বার্থান্বেষী মহলের মূলোৎপাটনে দৃঢ় থাকবেন। সেই সঙ্গে চিকিৎসাব্যবস্থার পথ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সুগম করতে তিনি নতুন কর্মকৌশল প্রণয়ন করে জনস্বার্থ রক্ষায় দূরদর্শী ভূমিকা রাখবেন।

প্রতিদিনের বাংলাদেশের ওই প্রতিবেদনে ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা পেতে ‘যুদ্ধ’ করতে হচ্ছে তা যেমন একজন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীর পক্ষে দুরূহ তেমনি তার পরিবার-পরিজনের জন্য অত্যন্ত কঠিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ১৭০টি ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রয়োজন। কিন্তু দেশে এই চাহিদার নিরিখে সরকারি পর্যায়ে মাত্র ৯টি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৬টি হাসপাতাল রয়েছে। অথচ ১৫ লাখ ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর এ দেশে ক্রমাগত বাড়ছে রোগীর হার। এই অবস্থায় চিকিৎসাকেন্দ্রের পরিসর বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসাব্যবস্থা সহজলভ্য করার কোনো বিকল্প নেই। ব্যয়বহুল এই রোগের চিকিৎসাভার বহন করার সাধ্য সিংহভাগ রোগী কিংবা তাদের পরিবারের নেই। শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাব রয়েছে তা-ই নয়, একই সঙ্গে রয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী ও জনবলের পর্যাপ্ত সংকট। সুযোগ যেটুকু রয়েছে সেটুকুও অসাধু ও স্বার্থান্বেষী মহলের সেবার নামে বাণিজ্যের থাবায় সংকুচিত। এমন প্রেক্ষাপটে চিকিৎসাক্ষেত্রে জিইয়ে ক্ষত উপশমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। একজন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর কেমো ও রেডিওথেরাপি অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এই পথ কতটা কণ্টকাকীর্ণ তা প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদনে স্পষ্ট। আমরা মনে করি, জনস্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য নিশ্চিত করতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন ব্যবস্থার ক্ষত উপশমে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। দেশে ক্যানসারের ওষুধ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি চাহিদার নিরিখে আমদানি পর্যাপ্ত করা জরুরি। দেশের কতসংখ্যক ক্যানসার আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার আওতার বাইরে রয়েছেন তা-ও নিশ্চিত করা দরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর, অধিদপ্তরকে সমন্বিত ভিত্তিতে ক্যানসার মোকাবিলায় এবং এর প্রতিবিধানে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে জরুরি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম আরও জোরদার করা। গবেষণা, প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয়ের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এসবও সমভাবেই গুরুত্ববপূর্ণ। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রাণঘাতী এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক। সচেতনতা, শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক দুর্বল অবস্থাই মূলত বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোয় ক্যানসারে মৃত্যুহার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ডব্লিউএইচও। তবে পাশাপাশি স্বস্তির বার্তাও মিলেছে ক্যানসার মানেই মৃত্যু নয়। এ-ও জানা গেছে, প্রতি বছরই বিশ্বে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় ক্যানসার আক্রান্ত অনেক রোগী রোগ মুক্তিলাভ করেছেন। আমাদের দেশেও এই সংখ্যা কম নয়।

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে নাগরিকের মৌলিক অধিকারের অন্যতম অধিকার স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির পথ মসৃণ করা সরকারের গুরুদায়িত্ব। আমরা জানি, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের আস্ফালন এক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে এখনও জিইয়ে আছে। আমরা আশা করি, সার্বিক পরিস্থিতির পর্যালোচনাক্রমে সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে সক্ষম হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা