× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মিয়ানমার গৃহযুদ্ধ

জান্তা সরকারের বর্বরতার শেষ কোথায়

নায়েত থিত

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০১ এএম

নায়েত থিত

নায়েত থিত

মিয়ানমারে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা যুদ্ধের সময় কাউকে বন্দি করলে তাদের সঙ্গে যতটা সম্ভব মানবিক আচরণের চেষ্টা করে। কিন্তু জান্তা বাহিনীর সে বালাই নেই। শুধু সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনীর সদস্যই নয়, নারী-শিশুদের সঙ্গেও তারাও অমানবিক আচরণ করে চলেছে। জান্তা সরকারের এমন আচরণ জেনেভা কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। সম্প্রতি মিয়ানমারের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে জান্তা বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করছে। বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জান্তা বাহিনীর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মুক্তি দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে তারা আহত যুদ্ধবন্দিদের চিকিৎসাও দিচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারে জাতিসংঘ কিংবা আসিয়ানের দৃশ্যমান উপস্থিতির অভাব থাকায় জান্তা সরকার ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সশস্ত্র বিদ্রোহী তো বটেই, সাধারণ নাগরিকদেরও অমানবিকভাবে হত্যা করছে তারা। সম্প্রতি ইয়াও ডিফেন্স ফোর্সের (ওয়াইডিএফ) দুই সদস্যকে জনসম্মুখে পুড়িয়ে মেরেছে। এরচেয়ে চরম বর্বরতা আর কি হরে পারে? মাঙ্গোয়ে অঞ্চলের গাংগু গ্রামে নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয় রেজিম বাহিনী ও জান্তা সমর্থক পিউ হিউ হ্লি মিলিশিয়ারা। এই গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে মাস তিনেক আগে। কিন্তু গত সপ্তাহে এ মর্মন্তুদ ঘটনার ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গোটা মিয়ানমার ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, বেঁধে রাখা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দুই সদস্যকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। জান্তা বাহিনী ও তাদের সমর্থক মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা পাশে দাঁড়িয়ে দুই বিদ্রোহীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছে। লোহার শিকল দিয়ে অমানবিকভাবে বেঁধে দুজনকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। দুজনকে গ্রামবাসীর সামনে পুড়িয়ে মারা হয়। সম্প্রতি এমনই আরেকটি নির্মম ঘটনার খবর পাওয়া গেছে সংবাদমাধ্যমে। ৫ ফেব্রুয়ারি জান্তা বাহিনীর সদস্যরা কিয়াহ রাজ্যের শাদাও গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে। গ্রামে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে তারা তিন নারী ও তিন শিশুকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে। তিন নারীর মধ্যে দুজন প্রতিবন্ধী এবং একজন গর্ভবতী। বাকি তিন শিশুর বয়স ধারাবাহিকভাবে ৩, ৫ ও ৭। সবাই গুলির আঘাতে মারা যায়। একই দিন জান্তা বাহিনীর ফাইটার জেট একটি স্কুলে বোমাবর্ষণ ও মেশিনগানের গুলি ছোড়ে। যেকোনো বিদ্যালয়ে হামলা আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ। কারেন্নি রাজ্যের দাওসেই গ্রামের স্কুলটিতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। নিহত হয় চারজন। স্কুলভবনের ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়েছে।

জেনেভা কনভেনশন অনুসারে যুদ্ধবন্দিদের আটক রাখা অবস্থায় তাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটে এমন আচরণ করা যাবে না। আত্মসমর্পণের পর কোনো যুদ্ধবন্দিকে আঘাত কিংবা হত্যা করাও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। সাধারণ মানুষকে জিম্মি কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বোমা হামলা করাও যুদ্ধাপরাধ। ২০২১ সালে সামরিক ক্যুর পর জান্তা সামরিক বাহিনী আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি এমন বহু ঘটনা ঘটিয়েছে। নাগরিক স্থাপনায় হামলা, বিদ্যালয় ও চিকিৎসাকেন্দ্রে বোমাবর্ষণ এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মতো ঘৃণ্য কাজও তারা করেছে। গত বছর কারেন্নি রাজ্যে জান্তা বাহিনীর অন্তত ৩০ জন সদস্য কারেন্নি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্সের (কেএনডিএফ) কাছে পরাজিত হয়। পরাজিত সদস্যরা লোইকাও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভবনে আত্মগোপন করলে তাদের খুঁজে বের করে ছেড়ে দেওয়া হয়। কারও সঙ্গে কোনো অমানবিক আচরণ করা হয়নি। সমাজমাধ্যমে এক ভিডিওতে দেখা যায়, কেএনডিএফের ডেপুটি কমান্ডার মারউই ঘেরাওকৃত সেনাদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেন। পরে তারা জান্তা বাহিনীর আত্মসমর্পণকৃত আহত সেনাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। ইরাবতীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মারউই গত বছর জানান, ‘সবার বাঁচার অধিকার আছে। আমরা সে অধিকার ব্যাহত হতে দিতে চাই না।’

শান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স সফলভাবে অভিযান পরিচালনা করে জান্তা বাহিনীর অন্যতম বড় ঘাঁটির দখল নেয়। ওই অভিযানের পর জান্তা বাহিনীর সদস্যদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রায় সাতজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং কয়েক হাজার সেনাবাহিনী বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি। বরং তাদের মুক্তি দেওয়া হয় যাতে তারা পরিবারে নিরাপদে ফিরে যেতে পারেন। সম্প্রতি পশ্চিম মিয়ানমারে আরাকান আর্মি জান্তা বাহিনীর ঘাঁটি পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে তোলে। যুদ্ধের সময়ও তারা প্রতিপক্ষকে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়। বিভিন্ন অভিযানে তারা এভাবে সামরিক বাহিনীর বহু সদস্যকে মুক্তি দিয়েছে কোনো ধরনের নির্যাতন ছাড়াই। কিন্তু সম্প্রতি জান্তা সামরিক বাহিনী যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সর্বসাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে কেএনডিএফ কমান্ডার মারউই এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, ‘মানবতা যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়। আতঙ্ক ছড়ায় এমন সামরিক শাসন আমরা ঘৃণা করি। এ সামরিক আধিপত্য আমরা ধ্বংস করতে চাই। ঘৃণার বিপরীতে আমরাও ঘৃণা দিয়ে লড়াই করতে পারি। কিন্তু আমরা তা করতে চাই না। আমাদের মানবতাবোধই আমাদের লড়াইয়ের শক্তি। আমাদের নিজস্ব আইন রয়েছে। রয়েছে আদর্শগত পথ ও বিশ্বাস। কেউ আমাদের ধ্বংস করতে পারবে না।’

জান্তা সরকার তার নিজের রাষ্ট্রের সঙ্গে নৃশংস-বর্বর  আচরণ করে চলেছে। সামরিক বাহিনী প্রমাণ করেছে তারা ক্রমেই জঙ্গি সংগঠনে পরিণত হচ্ছে। মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর পেশাগত আচরণ থেকে অনেক দূরে সরে আসছে। হয়ে উঠছে বেপরোয়া। ক্ষমতায় থাকার দ্বন্দ্বে তারা নিজস্ব কিছু নিয়ম তৈরি করছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মিয়ানমার। সর্বোপরি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি হয়ে উঠছে জান্তা সরকার

  • সাংবাদিক

মিয়ানমারের ইরাবতী পত্রিকা থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা