× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

পেঁয়াজের অস্বাভাবিক ঝাঁজ কমাতে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০৪ এএম

পেঁয়াজের অস্বাভাবিক ঝাঁজ কমাতে ব্যবস্থা নিন

আমাদের বাজারে অর্থনীতির ধ্রুপদি নিয়ম কতটা অচল এর সাক্ষ্য মিলে ফিরে ফিরে। বিদায়ি সরকারের শেষ বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতি তাপ ছড়িয়েছে। টানা চতুর্থবারসহ পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার তার নবযাত্রার প্রারম্ভেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে যথাযথ ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেন। সিন্ডিকেট শব্দটি আমাদের সমাজে বিশেষ করে বাজারের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও সিন্ডিকেটের অস্তিত্বের কথা ইতোমধ্যে বহুবার স্বীকার করেছেন বটে কিন্তু এর কোনো স্থায়ী প্রতিবিধান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই নিকট অতীতেও প্রশ্ন রেখেছি, পেঁয়াজ নিয়ে আর কত তুঘলকি কাণ্ড চালাবে স্বার্থান্বেষী মহল। এই প্রশ্নের রেশ কাটতে না কাটতেই ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, পেঁয়াজের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ১০-২০ টাকা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২৫-৩০ টাকা। আমরা দেখছি, যখনই বাজারে কোনো পণ্যের দামের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় তখনই ব্যবসায়ীরা নানা রকম অজুহাত দাঁড় করান। পেঁয়াজের দাম ক্রম-ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার প্রেক্ষাপটে এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।

৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ভিন্ন একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ কম তবু দাম বাজারে তীব্র। এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনের খরচ ২৯ টাকা হলেও বর্তমানে বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। কয়েক দিন ধরে চালের বাজারেও ফের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আমরা এ-ও দেখছি, খাদ্যমন্ত্রী আড়তদার-মজুদদারদের গুদামে অভিযান চালিয়ে অনেককে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করলেও চাল নিয়ে চালবাজি বন্ধ হয়নি। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও অনেকটা তা-ই পরিলক্ষিত হচ্ছে। চাহিদার নিরিখে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের যে মজুদ রয়েছে এই অবস্থায় সরকার ফের আমদানির অনুমতি দেয়। আমরা জানি, দেশে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু এই পেঁয়াজ এখন মৌসুম অনুসারে ভাটার সময়। সাধারণত মার্চের আগে অন্য জাতের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসে না। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, অতীতে এই অন্তর্বর্তী সময়ে পণ্যটির চাহিদা পূরণে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এবার ডলার সংকটসহ অন্য কিছু কারণে চাহিদামাফিক পেঁয়াজ আমদানি না হলেও অস্বাভাবিক হারে পেঁয়াজের ঝাঁজ প্রশ্নবোধক।

আমাদের স্মরণে আছে, গত ডিসেম্বরের প্রথমদিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেশের বাজারে এক লাফে পণ্যটির দাম ৬০-৭০ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। আমরা তখন শুনেছি অবৈধভাবে পেঁয়াজ মজুদ করে ভোক্তার পকেট কেটে যারা নিজেদের পকেট স্ফীত করছেন এর দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিবিধান করা হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সে রকম কোনো দৃষ্টান্ত দৃশ্যমান হয়নি। আমাদের বাজারব্যবস্থায় জিইয়ে থাকা নানা গলদসহ তদারকি-নজরদারিতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর দুর্বলতাকে পুঁজি করে সুযোগসন্ধানীরা নিজেদের আখের গোছাতে মরিয়া হয়ে ওঠার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। অন্তর্বর্তী সময়ে বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর তরফে কেন যথাসময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি? আমরা মনে করি, কর-শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানি কঠিন ছিল না। টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করে ইতঃপূর্বে খোলাবাজারে ভর্তুকিমূল্যে পণ্যটি বিক্রির সরকারি প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। নিত্যপণ্যের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধির চাপে ভোক্তা যখন নাকাল তখন পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধি দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলবে। পবিত্র রমজান এগিয়ে আসছে। রমজানে কিছু নিত্যপণ্যের চাহিদা এমনিতেই বাড়ে। এর মধ্যে পেঁয়াজ অন্যতম একটি পণ্য। আমরা দেখেছি, রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতার খবর ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। আমরা আশা করব, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ ব্যর্থতার অবসান ঘটাতে সরকার সক্ষম হবে। অবিলম্বে বাজারের তদারকি-নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে যারা অবৈধভাবে বরাবরের মতোই এই নিত্যপণ্যটি মুঠোবন্দি করে নিজেদের উদরপূর্তি করতে উদগ্র এর প্রতিবিধানও সমভাবেই জরুরি।

১০ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, চাঁদাবাজি ও মজুদদারি বন্ধে জনপ্রতিনিধিদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে কৃষক যাতে প্রকৃত মূল্য পায় সেদিকেও নজর দেওয়ার প্রতি তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। ওই দিন গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে এই নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পরও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির পথ রুদ্ধ হয় না কেন। তাদের শিকড় কতটা গভীরে প্রোথিত কিংবা কোন শক্তিতে তারা এত বলিয়ান এর উৎস সন্ধানে কতটা কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এও স্পষ্ট হওয়া দরকার। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে নিত্যপণ্যের দাম হুটহাট বেড়ে যাওয়ার পেছনে গুজব বিরূপ প্রভাব ফেলে। আমরা এ-ও দেখেছি, যখন কোনো পণ্যের দাম বাড়তে থাকে তখন গোপনে গোপনে মজুদের অপপ্রক্রিয়াও সুযোগসন্ধানীরা সমান্তরালে বাড়িয়ে দেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাদের সামর্থ্য কিংবা সাধ্য আছে তারাও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভোগ্যপণ্য কিনে সংকটের সময় চাহিদা কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনটিই ফের দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। পেঁয়াজের সরবরাহে ভাটা পড়বে এবং দাম বাড়তে পারে, এই আশঙ্কা যেখানে কিছুদিন আগেও ছিল সেখানে যথাসময়ে কার্যকর ব্যবস্থা অর্থাৎ আমদানি প্রক্রিয়ার পথ সুগম না করায় সুযোগসন্ধানীরা একদিকে আখের গুছিয়েছেন অন্যদিকে ভোক্তার ওপর চাপ বাড়ার পাশাপাশি সরকারকেও দুর্নাম কুড়াতে হচ্ছে। আমরা মনে করি, ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে আমলে নেওয়া জরুরি। পেঁয়াজ সংকটের নিরসন করতে হবে দ্রুত। আমরা এ-ও মনে করি, বাজারে সর্বাগ্রে সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সার্বিক স্বার্থে সবারই মনে রাখা উচিত, সংকটের সময়ে যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি পণ্য কেনার অশুভ প্রতিযোগিতা বন্ধ করাও বাঞ্ছনীয়। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা