× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাগর-রুনি হত্যা তদন্ত

শার্লক হোমসকে বড্ড প্রয়োজন

মহিউদ্দিন খান মোহন

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৭ এএম

মহিউদ্দিন খান মোহন

মহিউদ্দিন খান মোহন

লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল সৃষ্ট এক বিশ্বসেরা গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমস। প্রাইভেট ডিটেকটিভ শার্লক হোমসের বিভিন্ন ঘটনার রহস্যোন্মোচন কাহিনী লেখক এমন সুনিপুণ হাতে বর্ণনা করেছেন যে, তা পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। অপহরণ, খুন, চুরি-ডাকাতিসহ জটিল সব ঘটনার জট ছাড়িয়ে তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে মূল ঘটনা সবার সামনে তুলে ধরতেন। শার্লক হোমস পড়ার সময় পাঠককে ভুলে যেতে হয়, হোমস কোনো রক্ত-মাংসের মানুষ ছিল না। এখানেই লেখকের সার্থকতা। গল্পে শার্লক হোমস জটিল সব রহস্যের পর্দা উন্মোচন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন তার বন্ধু ডাক্তার ওয়াটসন।

কদিন থেকে শার্লক হোসকে খুব মনে পড়ছিল। ভাবছিলাম বাস্তবেই যদি একজন শার্লক হোমস থাকত এবং তা এই সময়ে আমাদের দেশে, তাহলে কতইনা ভালো হতো! কয়েকটি পিলে চমকানো হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেভাবে গলদঘর্ম হচ্ছে, তার অবসান হতো। এগুলোর মধ্যে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড অন্যতম সন্দেহ নেই। এক যুগ আগে খোদ রাজধানীর একটি আবাসিক ভবনে নিজেদের বাসায় খুন হয় সাংবাদিক সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি দম্পতি। ১১ ফেব্রুয়ারি ওই নৃশংস হত্যাকণ্ডের এক যুগপূর্তি হয়েছে। কিন্তু এই ১২ বছরে হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেননি আমাদের চৌকস গোয়েন্দারা! পুলিশ, সিআইডি, ডিবি হয়ে এখন তা র‌্যাবের হাতে। একের পর এক হাতবদল হয়েছে, কিন্তু মামলার ভাগ্যবদল হয়নি। এ সময়ের মধ্যে তদন্ত কর্তৃপক্ষ আদালত থেকে সময় নিয়েছে ১০৫ বার। কিন্তু তদন্ত এক কদম এগিয়েছে এমন তথ্য জানা যায়নি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। কোন রহস্য লুকিয়ে আছে এই বারবার তারিখ পেছানোর পেছনে তা ভেবে কূলকিনারা পান না কেউই।

এরই মধ্যে অতি সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমন এক মন্তব্য করেছেন, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিচারে কেন বিলম্ব হচ্ছেÑ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, এই মামলায় পুলিশ যদি তদন্ত শেষ করতে না পারে, তাহলে কি জোর করে সেই তদন্ত সমাপ্ত করে একটা চূড়ান্ত প্রতিবেদন কিংবা অভিযোগপত্র দেওয়ানো ঠিক? তাদের যত দিন সময় লাগে সঠিকভাবে দোষী নির্ণয় করতে, তাদের ততটুকু সময় দিতে হবে। তাতে যদি ৫০ বছর লাগে, তাহলে ৫০ বছর সময় দিতে হবে। আইনমন্ত্রীর কথায় যুক্তির অভাব আছে, এটা বলা যাবে না। কেননা, পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট না দিলে বিচার প্রক্রিয়া এগোবে কীভাবে? আর সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের জন্য যতটা সময় দরকার তা তো দিতেই হবে। এ নিয়ে অতটা অধৈর্য হওয়া বোধকরি ঠিক নয়। কিন্তু প্রশ্ন অন্য জায়গায়। এ বিশেষ মামলাটির তদন্তে এই রহস্যময় শম্বুকগতি কেন? আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার সুনাম আছে রহস্যোদঘাটনে। ক্লু লেস অনেক খুন-ধর্ষণের ঘটনার রহস্য তারা অত্যন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদঘাটন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এর আগে। কেবলমাত্র সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বেলায় অজ্ঞাত কোনো কারণে তারা থমকে দাঁড়াচ্ছেন বারবার। আর এখানেই শার্লক হোমস প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। তেমন কেউ যদি থাকতেন, তাহলে সাগর-রুনির খুনিরা এত দিনে আদালতের দণ্ড মাথায় নিয়ে হয় কারাবাসী হতো, নাহয় ফাঁসির দড়িতে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করত। অথচ এত কাঠখড় পোড়ানো হলো, এত কথা বলা হলো, আজ পর্যন্ত এ মামলার তদন্তের কোনো গতি হলো না। এমনকি তদন্ত কপা এগিয়েছে, তাও জানা যাচ্ছে না। শুধু প্রতি মাসে একবার আমরা জানতে পারছি, আরেক দফা পেছাল সাগর-রুনি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ।

এই ধারাবাহিক নাটকের কবে অবসান ঘটবে, তা বোধকরি আল্লাহ গফুরুর রহিম ছাড়া কেউ জানেন না। আইনজ্ঞ আইনমন্ত্রী মহোদয়ের নিশ্চয়ই জাস্টিজ ডিলেইড, জাস্টিজ ডিনাইড প্রবচনটি জানা আছে। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ন্যায়বিচারের প্রধান অন্তরায়। আর বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে মামলার তদন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা অতীব জরুরি। ধরে নিলাম আইনমন্ত্রীর কথাই যুক্তিযুক্ত। তদন্তকারী সংস্থা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করে প্রতিবেদন দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই বলে একটি হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করতে এক যুগ পার হয়ে যাওয়া কি মেনে নেওয়া যায়? এরপর যদি মন্ত্রী মহোদয় উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যার তদন্তও এফবিআই শেষ করতে পারেনি। রহস্যোদঘাটন না করেই সে ফাইল বন্ধ করে দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন, আমাদের বলার কিছু থাকবে না। সে রকম যদি হয়, তাহলে অন্তত আমরা এই বলে মনকে প্রবোধ দিতে পারব, সাগর-রুনির হত্যা রহস্য সৌরজগতের অপার রহস্যের ন্যায় অনুদঘাটনীয় বিষয়। সুতরাং এই পথ পরিত্যাজ্য। অন্তত বারবার আদালত থেকে তারিখ গ্রহণ ও পেছানোর নাটকের তো অবসান ঘটবে।

এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ এক নাগরিক মন্তব্য করলেন, তদন্ত কর্তৃপক্ষ সম্ভবত বিএনপির এমন কাউকে পাচ্ছে না, যাকে এই মামলায় জড়ানো যায়। পাওয়া গেলে তাকে জড়িয়ে মনের মাধুরী মেশানো একটি চার্জশিট এত দিনে আলোর মুখ দেখতে পেত। ভদ্রলোকের কথা শুনে বছর তিনেক আগের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। এক সকালে দাঁড়িয়েছিলাম গুলশান পুলিশ প্লাজার সামনে। হঠাৎ দেখলাম এক যুবককে ধাওয়া করছে কয়েকজন। তারা চিৎকার করে বলছে, চোর চোর, ধর ধর। আশপাশে অনেক পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে। তারা কেউ কিচ্ছু বলল না। চোর ধরতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা লোকদের কাছে জানতে পারলাম যুবকটি একজন ছিনতাইকারী, সে ছিনতাই করে পালিয়ে গেল। একজন পুলিশকে বললাম, আপনারা তো আটকাতে পারতেন ছিনতাইকারীকে। তিনি জবাব দিলেন, এটা আমার ডিউটি নয়, আমি অন্য ডিউটিতে আছি। ঘটনাটি একজন প্রবীণ ব্যক্তিকে বলতেই তিনি বললেন, লোকগুলো তো বোকা। ওরা যদি বলত, ধর ধর, বিএনপি যায়। তাহলে দেখতা, ১০ পুলিশ দৌড়ে এসে ধরে ফেলত চোরটাকে।

বাস্তবিক, দেশে অগুনতি মামলা হচ্ছে, সেগুলোর তদন্ত হচ্ছে, বিচার হচ্ছে, রায়ও হচ্ছে। শেষ হচ্ছে না কেবল সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত। বোধকরি এ এক অপার রহস্য! কিন্তু এই রহস্যের অন্তর্জাল ছিন্ন করতে না পারলে কতটা গ্লানির ছায়াতলে থেকে যাবেন দায়িত্বশীলরা তা কি তারা একটু ভাববেন? আইনের শাসন কিংবা ন্যায়বিচারের আশা তো দুরাশা হতে পারে না। 

  • সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা