× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

কিশোর গ্যাংয়ের উৎসে নজর দিন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩৫ এএম

কিশোর গ্যাংয়ের উৎসে নজর দিন

তারুণ্যের জয়, তারুণ্যের ক্ষয়Ñএই কথার প্রেক্ষাপট আমাদের সমাজবাস্তবতায় ইতোমধ্যে বহুবার দৃশ্যমান হয়েছে। কিশোর-যুবকরা যেকোনো সমাজের কিংবা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ শক্তি এবং তাদের বিকাশে সমাজ বিকশিত হয়, এই সত্য এড়ানোর কোনো পথ নেই। আমরা জানি, শৈশব থেকে যৌবনে উত্তরণের মাঝের ধাপ হলো কৈশোর। এ সময়ে শারীরিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক বিকাশও ঘটে এবং পরিবর্তন হয় দৃষ্টিভঙ্গির। আজকের কিশোর-কিশোরী যারা দেশ-জাতির ভবিষ্যৎ তাদের একাংশের বিপথে পা বাড়ানো আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর ও হাজারীবাগ এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-২ কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপের প্রধানসহ ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। রাজধানীর এলাকাভিত্তিক অপরাধী চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের যে খবর মিলেছে তা রীতিমতো ভয়ংকর।

আমরা সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই দেখছি, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কিশোর গ্যাংয়ের দাপটে শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা স্পষ্টতই মনে করি, এর পেছনে মূল্যবোধের অবক্ষয় যতটা দায়ী একইভাবে পারিবারিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নজরদারির অভাবও কম দায়ী নয়। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে চোখ রাখি তাহলে স্মরণে আসে, যে বয়সে ক্ষুদিরামের মতো বিপ্লবীরা দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, সেই বয়সেই বর্তমান প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীর একাংশ সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে পড়ছে। এই বার্তা জরুরি কিছু বিষয় অনুসন্ধানের তাগিদ দেয়। এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার দায় স্থানীয় রাজনীতিক কিংবা জনপ্রতিনিধিরা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। অতীতে আমরা সংবাদমাধ্যমেই দেখেছি কোনো কোনো রাজনীতিক কিংবা জনপ্রতিনিধি তাদের নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থকরণের জন্য সম্ভাবনাময় এই জীবনগুলো ব্যবহার করেন। সংবাদমাধ্যমে ডিএমপির বরাতে ইতঃপূর্বে রাজধানী ঢাকায় কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ২১ কাউন্সিলরের নাম এসেছে। আমরা এ-ও দেখছি, স্থানীয় রাজনীতিকরা নানাভাবে এই সম্ভাবনাময় জীবনগুলোকে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে অন্ধকারের জগতে ঠেলে দেন।

আমাদের স্মরণে আছে, ২০২৩ সালে ঢাকা মহানগরীতে অন্তত ২৫টি খুনের সঙ্গে কথিত কিশোর গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততার খবর সংবাদমাধ্যমেই উঠে এসেছিল। এর দায় রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি এবং সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীলরা এড়াতে পারেন না। সম্প্রতি ঢাকায় পরিচালিত র‌্যাবের অভিযানের প্রেক্ষাপটে কিশোর গ্যাংয়ের বিভিন্ন চক্রের সন্ধান এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের জন্য আমরা তাদের অভিনন্দিত করার পাশাপাশি প্রত্যেকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এবং লাগাতার অভিযানের ওপর গুরুত্বারোপ করি। বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রতীয়মান হয়, সামাজিক অপরাধের শিকড় অনেক গভীরে চলে গেছে। এই শিকড় উৎপাটনের জন্য বহুমুখী কার্যক্রম দরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ তৎপরতার পাশাপাশি সামাজিক-পারিবারিক-রাজনৈতিকভাবেও উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি। কারণ অবক্ষয়ের সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে দৃষ্টি ফেলতে না পারলে সম্মুখ কিংবা উপরিভাগের প্রলেপ সরিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সুফল আশা করা দূরাশারই নামান্তর। এ ব্যাধির সুলুক সন্ধান জরুরি। পারিবারিক কলহ, নিয়মানুবর্তিতার অভাব, শাসনের ঘাটতি, দারিদ্র্য, অশিক্ষা ইত্যাদি এক শ্রেণির কিশোর-কিশোরীকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আরও অভিযোগ আছে, অপসংস্কৃতির বিরূপ প্রভাবে তারা প্রভাবিত হয়ে বিপথগামিতার পথই শ্রেয় মনে করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিলাসী জীবনযাপন কিংবা সাধ্যের অতীত চাহিদাও কম দায়ী নয়। আবার এ-ও সত্য, দারিদ্র্যই এর একমাত্র কারণ নয়। আমরা দেখেছি, অনেক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে।

বয়ঃসন্ধিকাল থেকে যৌবন পর্যন্ত আবেগ, কৌতূহল অনেক কিছুর অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। এক দিনের অভিযানে ঢাকা মহানগরে অপরাধজগতের যে সন্ধান মিলেছে তা খণ্ডিত দৃষ্টান্ত মাত্র। সারা দেশেই এমন অপরাধের শিকড়বাকড় ছড়িয়ে আছে এবং ভয়ংকর ঘটনাগুলো ঘটছে। খুনখারাবিসহ নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে রাজধানীর উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দাপটের উৎস খুঁজতে গিয়ে রাজনৈতিক দলের একশ্রেণির নেতার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের যে চিত্র উঠে এসেছিল তা আমরা বিস্মৃত হইনি। আমরা জানি, বিপথগামী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সংবেদনশীল আচরণ, সহমর্মিতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এরই অংশ। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এ ধরনের ক্লাব প্রতিষ্ঠাও করা হয়েছে। দেশে কয়েকটি কিশোর সংশোধনাগার রয়েছে। তবে এগুলোর পরিবেশ এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নও উঠেছে। এই সংশোধনাগারগুলোর কোনো কোনোটিতে নানা মাত্রিক অপরাধ-অনিয়মের খবরও ইতঃপূর্বে সংবাদমাধ্যমেই উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, এ-ও ব্যাধির ওপর আরেক ব্যাধি। এর উপশমে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মহলকে নজর বাড়ানোর পাশাপাশি যথাযথ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে কেন্দ্রগুলোকে প্রকৃতই সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। একই সঙ্গে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নজরদারি ও মূল্যবোধের চর্চায় মনোযোগ বাড়ানোও জরুরি। অবক্ষয়ের গ্রাস থেকে যদি দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের রক্ষা করা না যায়, তাহলে এর বিরূপ প্রভাব বহুমুখী হতে বাধ্য।

সমস্যার গভীরে দৃষ্টি দিতে হবে এবং সম্ভাবনাময় জীবনগুলোকে যারা বিপথে ঠেলে দিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের কাতারে নিয়ে যাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতেই হবে। কেউ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। প্রশাসন, সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তির যূথবদ্ধ প্রচেষ্টায় এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে। রাজনীতির নামে অপরাজনীতির ছায়া সমাজে কম ক্ষত সৃষ্টি করেনি। কিশোর গ্যাং তৈরির প্রেক্ষাপটের পেছনে অপরাজনীতির দায় সর্বাংশে। সুনীতি ও সু-আচার এ বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়ে স্বচ্ছ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করার পাশাপাশি দায়িত্বশীল প্রত্যেকের জবাবদিহি নিশ্চিত করা আরও জরুরি। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ে তখন স্বার্থান্বেষীরা সমাজের অবহেলিত অংশের কিশোর-যুবকদের লক্ষ্য করে প্রলোভনে ফেলে ব্যবহার করে। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এরই পুনরাবৃত্তি ঘটল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার। মনে রাখতে হবে, শিশুর সুন্দর শৈশব এবং কিশোর-কিশোরীর সুন্দর কৈশোরই তাকে অপরাধমুক্ত করতে পারে। এ ধরনের কারও যদি উপযুক্ত অভিভাবক না থাকে, তাহলে রাষ্ট্রকে তার অভিভাবকত্বের দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন। আমরা জানি, গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক অনেক রাষ্ট্রই তা করেছে। আমাদের প্রত্যাশা, উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠা বাংলাদেশ সরকারও এই দায়িত্ব পালনে ভূমিকা দৃশ্যমান করবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা