× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রেক্ষাপট

ভাষা আন্দোলনে রংপুর

নজরুল ইসলাম হক্কানী

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৯ এএম

ভাষা আন্দোলনে রংপুর

অবিভক্ত ভারতবর্ষের ইতিহাসে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে রংপুরের (বৃহত্তর রংপুর) ভূমিকা ছিল গৌরবময়। ফকির সন্ন্যাস বিদ্রোহ, ১৭৮৩ সালে সূচিত রংপুরের কৃষক-প্রজা বিদ্রোহ এবং তেভাগা আন্দোলনে রংপুর জেলা অসামান্য অবদান রেখেছে। তেভাগা আন্দোলনে বিপর্যয়ের পর সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে বাংলা প্রদেশের বিভক্তি ঘটে। জন্ম হলো পাকিস্তান নামের এক বিচিত্র রাষ্ট্রের। এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দ্বিজাতিতত্ত্বের আড়ালে ধর্মীয় ভাবাবেগকে উস্কে দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ঠিক সেটাই শুরু করেছিল। পাকিস্তানের জন্ম ১৯৪৭ সালে। ১৯৪৮ সালেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা এসে ঘোষণা করলেন উর্দু উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ বিক্ষোভে নেমে আসে ছাত্রসমাজ। হত্যা, নিপীড়ন ও ষড়যন্ত্র করে সেই আন্দোলনকে দমন করা যায়নি। কলঙ্কিত, বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিবাদে গোটা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আন্দোলনে শামিল হয়। মানুষের মননে বিকশিত হতে থাকে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধের চেতনা। ভাষা আন্দোলনে রংপুর জেলা শহর এবং রংপুর জেলার মহকুমাগুলোর ভূমিকা ছিল নজরকাড়া।

একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তরঞ্জিত ঢাকার রাজপথের মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের খবর রেড়িওতে ও পরের দিন জাতীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানাজানি হলে ২২ ফেব্রুয়ারি রংপুর শহর, জেলার মহকুমা শহর ও বৃহত্তর রংপুরের নানা স্থানের শিক্ষার্থী, তরুণ-যুবকসহ সবস্তরের মানুষ ফেটে পড়ে তুমুল বিক্ষোভে। মুহূর্তেই রংপুর শহরের রাস্তা মিছিলের শহরে পরিণত হয়। কারমাইকেল কলেজসহ শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দলে দলে রাস্তায় নেমে আসেন। নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে দেখার মতো। শুধু শিক্ষার্থীই নন, গণবিক্ষোভে যোগ দেন রিকশাচালক, দোকান কর্মচারী, ব্যাংক, অফিস-আদালতের কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষ। মুহুর্মুহু স্লোগান চারদিকেÑ ‘অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। ছাত্র হত্যার বিচার চাই।’ মিছিল ছুটছিল জেলখানার দিকে। মেয়েদের এক বিশাল অংশ ছিল মিছিলের সামনে। লিচু বাগান স্কুলের ছাত্রী ও শিক্ষিকারা এ মিছিলে ছিলেন পুরোভাগ।

ভাষা আন্দোলনে রংপুর কমিউনিস্ট পার্টির (অবিভক্ত) ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য। আত্মগোপনে থেকে রংপুরের ভাষা আন্দোলনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও নেতৃত্ব দেন মনিকৃষ্ণ সেন, জীতেন দত্ত, ইদ্রিস লোহানী, নৃপেন ঘোষ, মন্টু মজুমদার, ছয়ের উদ্দিন, কসির উদ্দিন, শংকর বসু, আমজাদ হোসেন। ছাত্রনেতাদের মধ্যে মতিউর রহমান, মতিয়ার রহমান দুলু, কাজী আব্দুল হালিম, সুফি মোতাহার হোসেন বুলু, শাহ তোফাজ্জল হোসেন প্রধান গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শুধু রংপুর শহরেই নয়, জেলার গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম মহকুমা শহর রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হয়েছিল উত্তাল। ২৫ ফেব্রুয়ারি বৃহত্তর রংপুরের মহকুমা শহরে পালিত হয় সফল সাধারণ ধর্মঘট। ২৬ ফেব্রুয়ারি রংপুর শহরসহ অন্যান্য মহকুমা শহরে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নেতাদের ওপর নেমে আসে মুসলিম লীগ সরকারের হামলা, মামলা ও নির্যাতনের নগ্ন থাবা। পুলিশের হাতে সেসময় অনেকেই গ্রেপ্তার হন। অনেককেই আত্মগোপনে চলে যান গ্রামে। আত্মগোপনে যারা ছিলন তারা কৃষকের মধ্যে কাজ শুরু করেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে ভাষার সংগ্রাম নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করে। নিপীড়ন, নির্যাতন করেও আন্দোলন থামানো যায়নি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে হয়েছিল।

রংপুরের ভাষা আন্দোলনে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের প্রায় সবাই প্রয়াত হয়েছেন। আমরা পারিনি রংপুরের ভাষাসৈনিকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে। নতুন প্রজন্মের মাঝে রংপুরের ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ভাষাসৈনিকদের কাঙ্ক্ষিত আদর্শ ও লক্ষ্য কী ছিল, তা উন্মোচন করা যায়নি। মনে রাখা জরুরি বৃহত্তর রংপুরের ভাষা আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ থাকলেও তারাই অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে, নেতৃত্ব দিয়েছে। সে ইতিহাস এখনও অধরাই থেকে গেছে। রংপুরের ভাষাসৈনিকদের দেওয়া হয়নি মরণোত্তর সম্মাননা। নতুন প্রজন্মকে সঠিক পথে উদ্বুদ্ধ করতে রংপুরের ভাষা আন্দোলনের গবেষণার কাজটা খুবই জরুরি।

  • পলিটব্যুরো সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা