× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

চাপে-তাপে ভোক্তা, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:২২ এএম

চাপে-তাপে ভোক্তা, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা

ভোক্তার অধিকার রক্ষাও যে মানবাধিকারের সুরক্ষা তা অমূলক নয়। মূল্যস্ফীতির অভিঘাতে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত এবং জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ চাহিদা কাটছাঁট করেও যখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে তখন বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি- এতগুলো চাপের বোঝা একসঙ্গে মার্চ মাস থেকে চাপতে চলেছে ভোক্তার ঘাড়ে। ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘চাপের বাজারে চতুর্মুখী চাপ’ শিরোনামে শীর্ষ প্রতিবেদনে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে সহজেই প্রতীয়মান হয় জীবনযাপনে আরেক দফা বড় ধরনের অভিঘাত পড়তে যাচ্ছে। নাগরিক সেবায় সরকার ভর্তুকি দেবে এই প্রত্যাশা স্বাভাবিক। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। আমরা জানি, রমজানে সঙ্গতই ব্যয়ভার বেড়ে যায়। এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ কতটা যৌক্তিক এ নিয়ে সঙ্গতই প্রশ্ন দাঁড়ায়।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে এটি খুব সাধারণ সমীকরণ। ২৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ দফায় ইউনিটপ্রতি মূল্য ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা বাড়তে পারে। ঘাটতি মেটাতে মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে এবং আগামী তিন বছর ধাপে ধাপে এই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। আমরা জানি, সমন্বয় মানেই দাম বাড়ানো। সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোকে মূল্য সমন্বয়ের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে উৎপাদন ব্যয় কমানোর চেষ্টা লক্ষ করা যায়নি। অনস্বীকার্য, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে সাফল্য রয়েছে অনেক কিন্তু আমরা দেখছি মূল্যস্ফীতির অভিঘাত ঠেকানোর পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ব্যবস্থাপনায় গলদ সারাতে পরিকল্পিত উদ্যোগ তেমনটি দৃশ্যমান নয়। কোনো কোনো জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ খাতে দক্ষতা বাড়িয়ে, সঠিক জ্বালানির ব্যবহার করে উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব। আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানির মাধ্যমে মূল্য সমন্বয় করত। কিন্তু গত বছরের জানুয়ারি মাসে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি বিল’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার প্রেক্ষাপটে তা এখন সরাসরিভাবে সরকারই করে আসছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস কিংবা পানি ব্যবস্থাপনা সুচারু করতে ইতঃপূর্বে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের তরফে দফায় দফায় সুপারিশ কিংবা পরামর্শ দেওয়া হলেও তা কতটা আমলে নেওয়া হয়েছে এ নিয়েও প্রশ্ন আছে।

দেশের সেবা খাতের যথাযথ সেবা না পাওয়ার অভিযোগও নতুন নয়। ফের বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি ও পানির মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি প্রভাব নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির গ্রাহকদের ওপর পড়বে। একই সঙ্গে ব্যয় বাড়বে শিল্প খাতেও। শিল্প খাতে ব্যয় বাড়ার প্রভাবও সরাসরি ভোক্তার ওপরই পড়বে। কারণ উৎপাদন ব্যয় বাড়লে পণ্যের দাম এমনিতেই বেড়ে যাবে। তা ছাড়া আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনায় যে অসঙ্গতিগুলো জিইয়ে আছে এর সুযোগ বরাবরই নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের অদূরদর্শিতা-অদক্ষতা। সুপেয় পানির জন্য রাজধানীতেই বহুবার ভোক্তারা রাস্তায় নেমেছেন। অনেক এলাকায়ই গ্যাসের সংকট এখনও প্রকট। সেবার মান উন্নত না করে দফায় দফায় মূল্য বাড়ানোর এই প্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের শামিল। এমতাবস্থায় গৃহস্থালির পাশাপাশি কৃষি ও শিল্পপণ্যের উৎপাদনে যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে তা ভোক্তার জন্য আরও বহুমাত্রিক নেতিবাচক কারণ হয়ে দাঁড়াবে এ নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই।

বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও জ্বালিানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে জনস্বার্থে সরকারকে আমরা সরে আসার আহ্বান জানাই। ভর্তুকি কমাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে অবশ্যই বিকল্প ভাবতে হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিপুল অপচয় হচ্ছে একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজরা নিজেদের পকেট স্ফীত করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যাধির উপশম না করে ভর্তুকি কমাতে ভোক্তার ওপর চাপ বৃদ্ধি মোটেও সুবিবেচনাপ্রসূত নয় বলেই আমরা মনে করি। একই সঙ্গে মনোযোগ বাড়ানো উচিত অযৌক্তিক ব্যয়ের ক্ষেত্রেও। সরকারি ও কম খরচের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দিকে যথাযথ নজর না দিয়ে উচ্চ ব্যয়ের ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দিকে নজর বেশি থাকার ব্যাপারেও প্রশ্ন ওঠা অসঙ্গত নয়। বিইআরসি যখন দাম বাড়াত তখন আইনি বাধ্যতামূলক কারণেই গণশুনানি করতে হতো। কিন্তু সেই পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ায় এসব বিষয়ে অংশীজনেরা পর্যালোচনা করতে এবং যৌক্তিক কারণগুলো উপস্থাপনের অবকাশ পাচ্ছেন না। সরকার নির্বাহী আদেশে ধাপে ধাপে মূল্য বাড়িয়ে চলেছে। বিদ্যুতের বর্তমান যে মূল্য তা আমাদের পরিপ্রেক্ষিতে নিঃসন্দেহে উচ্চমূল্য বলা যায়। কোনো কোনো জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এ-ও বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো বাড়তি ব্যয় হয়, যার সিংহভাগই বলা যায় অপচয়। তাদের এ-ও অভিমত, এই অপচয় রোধ করতে পারলে দফায় দফায় মূল্য বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ত না।

আমরা মনে করি, সেবা খাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। সুপেয় পানি মিলবে না, ভোক্তা গ্যাস-বিদ্যুৎ পাবেন না অথচ দফায় দফায় দাম বাড়বে তা মেনে নেওয়া যায় না। গত ১৪ বছরে ১২ দফায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে অন্তত ১২১ শতাংশ, আর ৫ দফায় গড়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৭৫ শতাংশ। পাশাপাশি পরিবহন খাতের সিএনজির মূল্য বেড়েছে ৬ দফা এবং জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে প্রায় ২৩৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে অকটেন ও পেট্রোলের দাম প্রায় ১৬৯ শতাংশে পৌঁছেছে। আর এই সময়ের মধ্যে ওয়াসা পানির দাম বাড়িয়েছে ১৪ বার। এর বিরূপ প্রভাবের ভুক্তভোগী ভোক্তা। বিদ্যুৎ, গ্যাস কিংবা পানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাগুলো নিজেদের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের দায় ভোক্তার ওপর চাপিয়ে যে পরিস্থিতির ‍সৃষ্টি করেছে তা উন্নয়নকামী এই সরকারের জন্য বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে তা-ও অসত্য নয়। আমরা মনে করি, ব্যাধি যেহেতু চিহ্নিত সেহেতু তা উপশমের এবং বিকল্প পথের সন্ধান না করে দফায় দফায় দাম বাড়ানো কোনো সমাধান নয়। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার এ বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ গভীর করে সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করে ভোক্তার চাপ-তাপ কমাতে দূরদর্শিতার পরিচয় দেবে। তবে সুশাসন নিশ্চিত করা ছাড়া সুফলের আশা যে দুরাশা তা মনে রাখা বাঞ্ছনীয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা