যুক্তরাষ্ট্র
স্টিভেন র্যাটনার
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪ ১৪:৫২ পিএম
ডোনাল্ড ট্রাম্প
যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখনকার কিছু সংকট : মার্কিন গণতন্ত্রের সংকট, ইউরোপ ও অন্যান্য
দেশের সহযোগিতা নষ্ট হওয়ার সংকট, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ হওয়ার শঙ্কা।
এ সবই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অর্থনীতি বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। ট্রাম্পের
শাসনামলের প্রথম পর্যায়ে ব্যবসায়ী ও ধনীদের করে কিছু সুবিধা দেওয়া হতো। কিন্তু এবার
দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প এলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। ট্রাম্প এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত
আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনার ঘোষণা দেননি। তবে তার নির্বাচনী প্রচার থেকে খানিকটা আভাস তো
পাওয়া গেছে। যদি তিনি ক্ষমতায় আসেন তাহলে প্রথাগত রিপাবলিক লেন থেকে বিচ্যুত হয়ে একা
পথে হাঁটতে হবে দেশটিকে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের জয় পরিস্থিতি বরং জটিলই করে তুলবে।
প্রথম মেয়াদের
মতো দ্বিতীয় মেয়াদেও ট্রাম্প ট্যারিফ, ইমিগ্রেশন আর নীতিমালার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করবেন-এমন
আভাসই মিলছে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে
তাদের কোনো নির্দেশনা থাকবে না। ব্যবসায়ী কিংবা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কম কর দিতে হবে এবং
তাদের ওপর নজরদারিও কমবে। তা ছাড়া জ্বালানি খাতে পরিবেশবান্ধবতার কথা বলা হলেও সে নীতিমালা
আর অনুসরণ করা হবে না। এসব বিষয় অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী মহলকেও উদ্বেগান্বিত না করে
পারে না। যারা ট্রাম্পের প্রথমে তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রশংসা করেছিল তারাও তার
ব্যক্তিগত আচরণাদির কারণে সরে যান।
আন্তর্জাতিক সংকটের
পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা ট্রাম্পের নীতিমালা পছন্দ করবেন না এটাই স্বাভাবিক। দ্বিতীয়
মেয়াদেও ট্রাম্প আরও আগ্রাসি নীতিমালা অনুসরণ করবেন। কিন্তু তিনি হয়তো বুঝতে পারছেন
না বাণিজ্য কিংবা লেনদেনের নীতিমালা বা টেকসইতা ব্যক্তির একার পক্ষে বহন সম্ভব নয়।
বিভিন্ন সমীক্ষা অনুসারে, নিজের প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প লোহা থেকে শুরু করে ওয়াশিং মেশিনেও
ট্যারিফ বসিয়েছিলেন। ভোগ্যপণ্যের দামও সঙ্গত কারণেই বেড়েছে। এর অভিঘাত লেগেছে আত্মকর্মসংস্থানে।
ভোটাররা এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ে চিন্তিত। ট্রাম্প তার দ্বিতীয় আমদানি শুল্ক বাড়ানোর চিন্তাও
করছেন। যদি তা হয় তাহলে মূল্যস্ফীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। চীন ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি
নিয়ন্ত্রণে রক্ষণশীল পদ্ধতি অনুসরণ করছে। কিন্তু ট্রাম্পের এ পদ্ধতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
জন্য সুখপ্রদ কিছু না-ও হতে পারে। চীনা অনেক পণ্যের ওপর বাড়তি সুদ যুক্ত করলে ওই পণ্য
বিশ্বের অন্য কোনো দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে হয়তো। কিন্তু ভোক্তাকে আরও বেশি খরচ করতে
হবে।
অভিবাসন বরাবরই
ট্রাম্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি একাধিকবার জানিয়েছেন, আমাদের সীমান্তবর্তী
এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি। ট্রাম্পের অফিসিয়াল সাইটেও বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসী মার্কিন
অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার অত বেশি
নয়। কদিন পর কর্মিসংকট দেখা দেবে। তখন আমাদের বৈধ অভিবাসী নিতেই হবে। বছরে অন্তত ৪
মিলিয়ন কর্মী বা শ্রমশক্তি আমদানি করতেই হবে। ট্রাম্পের বক্তব্য তাই ঠিক নয়। অভিবাসীরা
মার্কিন অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। নির্বাচনে যে-ই জয়ী হোন না কেন, কর আদায়ের
প্রক্রিয়া এবং নীতিমালা বিষয়ক জটিল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন।
ট্রাম্প বিজয়ী
হলে বাইডেন প্রশাসনের অন্যতম সাফল্য মুখ থুবড়ে পড়বে। অর্থাৎ ইনফ্ল্যাশন রিডিউসিং অ্যাক্ট।
জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধে এ প্রকল্প ইতোমধ্যে অনেক পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করেছে। মিস্টার
ট্রাম্প যে এ পথ থেকে বিচ্যুত তা আর সবিস্তার জানানোর কিছু নেই।
ট্রাম্প পুরো
প্রশাসনিক কাঠামো তার অভিব্যক্তি অনুসারে নতুন আকার দিতে চান। ফেডারেল প্রবিধানগুলো
কমিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (যেমন তিনি তার প্রথম মেয়াদে করেছিলেন) যেখানে
আরোপিত প্রতিটি নতুন নিয়মের জন্য দুটি নিয়ম অপসারণ করবেন। তিনি হোয়াইট হাউসে নিজক্ষমতা
ধরে রাখার জন্য পরিকল্পনাও রেখেছেন মনে হচ্ছে। অস্ত্র তৈরির জন্য ফেডারেল বাণিজ্য এবং
যোগাযোগ কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোকে আটকে ফেলতে চাচ্ছেন। তিনি সব বেসামরিক
কর্মচারীকে একটি রাজনৈতিক পরীক্ষার সম্মুখীন করার পরিকল্পনা করেছেন এবং যাদের তিনি
‘দুর্বৃত্ত আমলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তাদের পদমর্যাদা বর্জন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সমালোচনামূলক
সরকারি কার্যাবলির এ প্রকাশ্য রাজনীতিকরণ মি. ট্রাম্পকে তার ইচ্ছার অনুসরণ করার অনুমতি
দিতে পারে। আর্থিক নীতির জন্য, ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে ট্রাম্প সোচ্চার হবেন। ট্রাম্প
বর্তমান চেয়ার জেরোম পাওয়েলকে নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু একটি বক্তৃতার সময় রাষ্ট্রপতির
বাণিজ্যযুদ্ধের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলো স্বীকার করার জন্য তাকে ‘শত্রু’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
ট্রাম্প নিয়মিতভাবে ফেডের সুদের হার বাড়ানোর বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করেছেন, যা আমাদের
কোভিড-পরবর্তী মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনতে সাহায্য করেছে।
মি. পাওয়েলের
মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে, যা ট্রাম্পকে আরও অনুগত ফেড চেয়ারম্যান নিয়োগ করার সুযোগ
দেবে। সম্ভবত এমন কেউ যিনি সহজ অর্থের প্রতি তার আবেগ প্রশ্রয় দেবেন যা স্বল্পমেয়াদে
অর্থনীতি নতুন করে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকিতে ফেলবে। আমি সন্দেহ করি, গ্যারি কোহনের মতো
নাতিশীতোষ্ণ উপদেষ্টাদের একজন প্রাক্তন গোল্ডম্যান শ্যাক্স নির্বাহী যিনি জানুয়ারি,
২০১৭ থেকে এপ্রিল, ২০১৮ পর্যন্ত ট্রাম্পের জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন,
দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দিতে ইচ্ছুক হবেন।
ট্রাম্পের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রভাব কী হবে? দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে উদ্দীপক আর্থিক এবং ট্যাক্স নীতি যা উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত। ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী বাণিজ্যনীতির কারণে দাম ঊর্ধ্বমুখী হবে। ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসের অন্তত একটি হাউসে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখলে এ সংকটগুলো থেকে নিস্তার পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার গুঞ্জনের বিষয়টি ভাবনার। এগুলো অস্বস্তিকর সম্ভাবনা। মার্কিন ব্যবসায়িকদের আগামী দিনের কথা ভেবে হলেও কিছুটা চিন্তিত হওয়া উচিত। ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার বিষয়টি এ ভাবনাগুলোর অন্যতম একটি।
নিউইয়র্ক টাইমস
থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন