× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

অস্ত্রবাজ চিকিৎসক-শিক্ষকের খুঁটির জোর কোথায়

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৪ ০৯:১৬ এএম

অস্ত্রবাজ চিকিৎসক-শিক্ষকের খুঁটির জোর কোথায়

অবিশ্বাস্য। প্রশ্নবোধক। নিশ্চয় উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণও। সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক রায়হান শরীফের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনাটি নিঃসন্দেহে আমাদের সমাজকাঠামোর স্তরে স্তরে অবৈধ ক্ষমতার বিপুল চর্চার দুঃসহ স্মারক কিংবা প্রতীক বললে অত্যুক্তি হয় না। ‘শিক্ষক শরীফের বাসায় এত অস্ত্র কেন’ শিরোনামে ৬ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্র রাখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভীতি প্রদর্শন করতেন চিকিৎসক নামের অবক্ষয়ের ছায়ায় নিমজ্জিত এই শরীফ। সংবাদমাধ্যমে এ-ও বলা হয়েছে, কথায় কথায় তিনি পিস্তল বের করতেন। রায়হান শরীফ নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন জ্যেষ্ঠ সহকর্মীকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে। বর্তমান কর্মস্থলে তিনি তার সেই পুরোনো চর্চার গণ্ডি পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত গুলিই ছুড়ে দিলেন! ইতঃপূর্বে কর্তৃপক্ষের কাছে তার উন্মত্ত আচরণের অভিযোগ জানালে তাকে কারণ দর্শানো নোটিস দেওয়া হলেও তিনি এর কোনো জবাব দেননি! এমন প্রেক্ষাপটে সঙ্গতই প্রশ্ন জাগে, তার ক্ষমতার খুঁটি কত গভীরে প্রোথিত। এই শিক্ষককে দিয়ে আমরা কোন প্রজন্ম তৈরি করবো?

৫ মার্চ রায়হান শরীফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২টি বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, ৪টি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশি চাকু উদ্ধার করে। চিকিৎসা এবং শিক্ষকতা এই দুই-ই মহান পেশা হলেও তথাকথিত চিকিৎসক-শিক্ষকের আস্তানায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ প্রাণঘাতী যেসব বস্তু পাওয়া গেছে তাতে সঙ্গতই এ প্রশ্নও জাগে, কীভাবে এমন একজন নৈতিক অবক্ষয়ধারী, সমাজবিরোধীকে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর আবার তাকে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়া হলো? একজন চিকিৎসক-শিক্ষকের গুরুদায়িত্ব মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেবা প্রদান ও শিক্ষার্থীকে যথাযথ শিক্ষাদান। কিন্তু এসব কোনো সংজ্ঞাসূত্রে রায়হান শরীফ এই পেশার উপযুক্ত তো ননই, বরং নির্দ্বিধায় তাকে একজন সমাজবিরোধী বলা যায়। সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দানকারী ওই চিকিৎসক-শিক্ষকের ক্ষমতার উৎসে নজর দেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

রায়হান শরীফ একের পর এক যেসব ঘটনা ঘটিয়ে আসছিলেন, তা যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। কোনো সভ্য সমাজে এমন কোনো ঘটনা শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটেছে কি না, আমাদের জানা নেই। একজন শিক্ষক যখন তার শিক্ষার্থীকে হত্যা করতে উদ্যত হন, তখন স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যায় তার ঔদ্ধত্যের খুঁটি নড়বড়ে নয়। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত আপত্তিকর ও প্রাণঘাতী আচরণের পরও তিনি কীভাবে চিকিৎসক-শিক্ষকের তকমা গায়ে লাগিয়ে নির্বিবাদে প্রাতিষ্ঠানিক কাজে যুক্ত ছিলেন, এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায় নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে যেন সাপ বেরিয়ে আসছে। গুলির ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমেই উঠে এসেছে, অনেক শিক্ষার্থী রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগও এনেছেন। কেউ যদি তাকে বদ্ধ উন্মাদ বলেন তাহলে তার গুরুতর ঘটনাগুলো নিশ্চয়ই হালকা হয়ে যায়। কোনো পাগলের পাগলামি শিক্ষক-চিকিৎসক রায়হান শরীফের কর্মকাণ্ডের মতো সচরাচর দৃশ্যমান হয়নি। ৪ মার্চ গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আরাফাত তমালকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যে শিক্ষার্থী ছিল তারই কথিত শিক্ষকের হত্যার লক্ষ্য। আমরা এই বর্বরোচিত ঘটনায় ধিক্কার জানাই এবং আশু ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি।

রায়হান শরীফের ঘটনা থেকে অবক্ষয়কবলিত সমাজের নানামুখী অসুস্থতার বার্তাই শুধু নয়, চরম নিরাপত্তাহীনতার চিত্রও উঠে আসে। ইতঃপূর্বে জনপ্রতিনিধি কর্তৃকও এমন ঘটনা ঘটেছে। আমরা দেখছি অবৈধ ক্ষমতার বিপুল চর্চার অনুশীলনকারী বিপথগামীরা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সদম্ভে বিচরণ করছেন। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের চর্চা করবেন, প্রয়োজনে অন্যায়ের প্রতিবাদে দাঁড়াবেন কিন্তু শিক্ষাঙ্গন সমাজবিরোধীদের বিশেষ করে এমন অনৈতিক চিকিৎসক তথা শিক্ষকের কেন্দ্র হতে পারে না। সিরাজগঞ্জের ঘটনাটি পুনর্বার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, স্তরে স্তরে ক্ষমতাবানরা শুধু মানুষকে জিম্মিই নয়, হত্যা করতেও কুণ্ঠিত নয়। স্বেচ্ছাচারিতার আস্ফালন যখন সীমা-পরিসীমার গণ্ডি ভেদ করে জবাবদিহিহীন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন মূল্যবোধের অবক্ষয়ের গ্রাস কীভাবে সমাজকে গিলে ফেলতে চায়, সিরাজগঞ্জের ঘটনাটি এরই একটি খণ্ডিত দৃষ্টান্ত। আমরা আশু এর দৃষ্টান্তযোগ্য বিচার প্রত্যাশা করি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা