× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বাস্থ্যসেবা

রোগীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হবে কবে

হোসেন আবদুল মান্নান

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৪ ১৩:১০ পিএম

হোসেন আবদুল মান্নান

হোসেন আবদুল মান্নান

দেশের স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমে। কাঠগড়ায় স্বাস্থ্যসেবা, খতনায় শিশুর মৃত্যু, বিদেশি রোগীর শ্লীলতাহানি, মানহীন ওষুধে বাজার সয়লাব, দেশের মানুষের জন্য নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত। সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘লাগামহীন নৈরাজ্য নিষ্ঠুরতার খাতে পরিণত করছে দেশের চিকিৎসাসেবাকে’। তিনি যথার্থই বলেছেন। রাজধানীর বড় বড় হাসপাতাল, ক্লিনিকে চলছে অবাধে চিকিৎসাবাণিজ্য। চিকিৎসকের ভুল ট্রিটমেন্ট, খামখেয়ালিপনা, গাফিলতি, অনভিজ্ঞতা এবং অবহেলার কথাও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। গ্রামে, গঞ্জে, মফস্বলে বেপরোয়াভাবে গজিয়ে উঠছে অবৈধ, অনুমতিবিহীন প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক বা প্যাথলজিক্যাল সেন্টার ইত্যাদি। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে দেশব্যাপী চলছে রমরমা ক্লিনিক ব্যবসার মহোৎসব। বেশিরভাগ হাসপাতাল-ক্লিনিক মানে চিকিৎসক, মালিক, টেকনিশিয়ান, প্যাথলজিস্ট আর ওষুধ কোম্পানিগুলোর রিপ্রেজেন্টেটিভ মিলেমিশে মহাবাণিজ্যের আরেক নাম। প্রশ্ন হচ্ছে এসব দেখার কি কেউ নেই?


গণমানুষের স্বাস্থ্য তথা জীবন নিয়ে দেশব্যাপী সিন্ডিকেট তৈরি করে এমন ভয়ংকরভাবে ছিনিমিনি খেলতে আর কোনো জাতিকে দেখা যাবে না। এ সিন্ডিকেট সদস্যরা নিজেরা কোনো দিন এ দেশে চিকিৎসা নেন না, তবে তারা দেশের গণমানুষের চিকিৎসা নিয়ে সব সময় উদ্বিগ্ন থাকেন; এমন মন্তব্য অমূলক নয়। কয়েক বছর যাবৎ লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশের নামিদামি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যখন কোনো দুর্ঘটনা হয়, ভুল অপারেশন হয়, ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর অসহায় মৃত্যু হয়, গণমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হয় তখনই সবাই নড়েচড়ে বসে। তদন্ত কমিটি হয়, রিপোর্ট জমা হয়, টকশো হয়, আদালতে মামলা হয়, কখনও কখনও জাতীয় সংসদ পর্যন্তও গড়ায়। পুনর্বার পত্রিকায় শিরোনাম হয়Ñকথিত হাসপাতাল বা ক্লিনিকটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে ছিল না। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরও প্রয়োজনীয় সনদ বা অভিজ্ঞতা ছিল না। অ্যানেসথেশিয়া প্রদানকারী নিজেই ডাক্তার নন ইত্যাদি। মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে তাদের অপরাধ ও অপকর্মগুলো লাখো-কোটি মানুষের বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়।

আমরা দেখছি, এতসব ঘটনার পরও ইতোপূর্বে বিশেষভাবে কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি কিছু অভিযান শুরু হয়েছে, তবে এর শেষ কি এখনই বলা কঠিন। হীনস্বার্থবাদের জঘন্য অপরাধ ঢাকা পড়ে যায়, চাপা পড়ে যায় অপশক্তির কূটকৌশলের অন্ধকার ছায়ায়। বরং কখনও কখনও শাস্তির বদলে এরা পুরস্কৃত হয়ে দ্রুত পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসে নৃত্য করতে থাকে। এ ক্ষেত্রে ভিকটিমরা সব সময় থেকে যায় সেই তিমিরেই। ২০২০-২১ খ্রিস্টাব্দে যখন সারা পৃথিবী কোভিড-১৯ ভাইরাসে কেঁপে ওঠে, আতঙ্কিত হয়ে মানুষ গৃহবন্দি হয়ে যায়, কোভিড সংক্রমণে বাংলাদেশেও হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানিঘটে। রাষ্ট্র ও সরকার যখন দিশাহারা অবস্থায় উপনীত হয়ে পড়েছিল তখনও দেশে অসংখ্য অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার অপকর্ম চালিয়েছে। এমন জীবনমরণ সংকটকালেও এরা এদের বাণিজ্যনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনেনি। স্বাস্থ্যসেবারনামে কিছু সংখ্যক ক্ষমতাবান মানুষের চোখের জলকে পানীয় জল বিবেচনা করেই এগিয়ে যান। বরং তারা এদের ব্যবসা ক্রমাগত বিস্তৃত করতে করতে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলকে ঢেকে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। তাদের কাছে জনকল্যাণ বা মানবতার বাণী ব্যর্থ পরিহাস ছাড়া কিছু নয়। জীবন নিয়ে জুয়া চলতে পারে না।

২০২০ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে এসে জাতির ক্রান্তিকালে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উদ্যোগে দেশের অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর ওপর নজরদারির অংশ হিসেবে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট টেকনিক্যাল পারসন ও সিভিল কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একজন যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে টিম অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা ও পাশের গাজীপুরে বেশ কিছু কার্যকর অভিযান পরিচালনা করে। এতে শুরুতেই কজন বাঘা বাঘা নেতা ও সমাজপতির হাসপাতাল চিহ্নিত হয় এবং যথাযথ শাস্তির আওতায় এনে কারাদণ্ড, জরিমানা আরোপ করা শুরু হলো। দেশের জাতীয় দুর্যোগময় সেই সময়ে রুদ্ধদ্বার দেশবাসীর চোখে সামান্য আশার আলো ছড়িয়ে পড়ল। কারণ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং একাধিক সংসদ সদস্যের হাসপাতাল ও ক্লিনিক জরিমানার আওতায় পতিত হলো। অল্প সময়ের মধ্যে কতিপয় হাসপাতাল মালিক টকশো তারকা, ডাক্তার, কর্মচারী, হিসাবরক্ষক, গাড়িচালক হাজতে গেলেন। সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেল, সরকার বাহবা পেল, সর্বত্র সুশাসনের আলোচনা প্রবলতর হলো, সাময়িক প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলো। কিন্তু না, চলল না, বেশি দিন চলতে দেওয়া হলো না। কারণ সম্পূর্ণ অজানা ও অদৃশ্য। এমনকি এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং সচিব একই সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারেননি। দুজনের দুটি পথ দুই দিকে। বলা হলো, অভিযান নামই আর থাকবে না। অভিযান হবে পার্বত্য চট্টগ্রামে, রাজধানীতে নয়। সুতরাং যা হওয়ার তা-ই হলো। রাতারাতি স্বাস্থ্যসেবার নামে স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীরা নেমে পড়লেন হাসপাতাল, ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে।

প্রতি বছর লাখ লাখ অসুস্থ মানুষ বিদেশমুখী হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত সচ্ছলরা ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর বা পাশ্চাত্যে পাড়ি দিচ্ছে। বাকিরা পাশের দেশের চিকিৎসা নিতে ব্যাকুল থাকে। নানাভাবে প্রাণপাত করে ভিসা জোগাড় করে। জানা যায়, বছরে ২৮ লাখ বাংলাদেশি ভারতীয় ভিসা পাচ্ছে। এর বড় অংশ চিকিৎসার উদ্দেশ্য নিয়েই ওপারে যাচ্ছে। প্রতি বছর দেশ থেকে চিকিৎসাসেবায় ৫ বিলিয়ন ডলার বাইরে চলে যায় বলে তথ্য দিয়েছে প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমেসিয়া (পিএইচএ)। অথচ আমাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ফিবছর বিরাট বিরাট বাজেট হচ্ছে, উন্নত হাসপাতাল হচ্ছে। এক বছরের বাজেট সব মিলিয়ে ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি। ৩২ হাজারের বেশি ডাক্তারও সরকারের অধীনে থেকে সেবা দিচ্ছে। ৩৮ হাজারের বেশি নার্স কর্মরত আছে। বছর বছর শত কোটি টাকার আধুনিক মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে।

ডাক্তারের সনদপত্র পরীক্ষা করে দেখার জন্য আমাদের বিএমডিসি নামক প্রতিষ্ঠান আছে। উচ্চতর গবেষণা ও ডিগ্রি প্রদানের জন্য একাধিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আছে। নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণের উন্নততর আয়োজন আছে। ভালো বেতনভাতাদি ও পদোন্নতি আছে। অনেকেরই জমজমাট প্রাইভেট প্র্যাকটিস আছে, সর্বত্র নেতৃত্ব আছে। কী নেই? আমাদের অনেক কিছুই আছে। এমনকি যা আছে তা পৃথিবীর অনেক দেশেই নেই। সম্ভবনা রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা দেশপ্রেম, সততা আর মানবিকতা নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য রোগীবান্ধব চিকিৎসাসেবার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারিনি

  • গল্পকার ও সাবেক সচিব
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা