× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

রফিকুন নিসাদের বঞ্ছনার অবসান চাই

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪ ১০:৫২ এএম

রফিকুন নিসাদের বঞ্ছনার অবসান চাই

বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য এখনও মানুষকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। অথচ এটি পাওয়া তার অধিকার। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দেশের অসংখ্য অসহায় মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নের চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারের এ আন্তরিক সহযোগিতা কার্যক্রম কারও কারও অদূরদর্শিতা, অদক্ষতা এবং অসহযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে প্রত্যাশা পূরণ করছে না। সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই গরিবের হকে লোভাতুরদের আগ্রাসি থাবা পড়ার খবর যেমন উঠে আসছে, তেমন উঠে আসছে তাদের বঞ্চনার কথাও। এমন একটি খবর প্রকাশ হয়েছে ১২ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ। ‘চার বছর ঘুরেও পাচ্ছে না প্রতিবন্ধী ভাতা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আমাদের ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার শারীরিক প্রতিবন্ধী দোয়া রফিকুন নিসা নামে একটি শিশু কথা বলতে পারে না, কানেও শুনতে পায় না; তার অসুস্থ বাবা রফিকুল ইসলাম প্রতিবন্ধী মেয়ের চিকিৎসা খরচ জোগাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় মেয়ের নাম প্রতিবন্ধী তালিকায় লিপিবদ্ধ করান। ২০২০ সালের আগস্টে রফিকুন নিসার নামে প্রতিবন্ধী কার্ড ইস্যু হয়, তাকে দেওয়া হয় ভাতার বইও। কিন্তু আজও মেয়েটি এবং তার পরিবার পায়নি সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা। কেন পায়নি তার সদুত্তর মেলেনি। রফিকুন নিসার ভাতা না পাওয়া প্রসঙ্গে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘বরাদ্দ না থাকায় ভাতা পাচ্ছে না। ভাতাটি কেন পাচ্ছে না তা দেখছি।’ সমাজসেবা কর্মকর্তার বলা কথাটি নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমন রয়েছে দায়িত্ববোধের প্রসঙ্গও। প্রতিবন্ধী এক শিশু তার প্রাপ্য নিশ্চিতের জন্য চার বছর ধরে ঘুরছে, আর সংবাদমাধ্যমে তিনি বলছেন ‘কেন ভাতাটি পাচ্ছে না তা দেখছি’। আমাদের প্রশ্ন- তাহলে গত চার বছর তিনি কী করলেন? বা আরও চার বছর যদি খবরটি সংবাদমাধ্যমে না আসত, তাহলে কি শিশুটি ভাতা পেত বা তিনি বিষয়টি দেখতেন না?

রফিকুন নিসা প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে না, চার বছর অপেক্ষা করেও তারা সরকারি সাহায্য-সহযোগিতার অংশ পায়নি। এ ধরনের খবর অপ্রত্যাশিত হলেও প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে উঠে আসার কারণে জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের টনক নড়ে। তারা কখনও দ্রুত ব্যবস্থা নেন, কখনও ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আমাদের প্রশ্নÑকেন বারবার এমনটি হবে? কেন একজন প্রতিবন্ধী অথবা বয়স্ক নাগরিক অথবা বিধবা তার প্রাপ্য নির্ধারিত ভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন? এ ভাতাটি তো সরকার তাদের মুখে হাসি ফোটাতেই বরাদ্দ দিয়েছে। তাহলে কেন তাদের ন্যায্য অংশ বুঝে পেতে দিনের পর দিন দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দিতে হবে? সমাজে রফিকুন নিসাদের মতো বিড়ম্বিতদের সংখ্যা কতÑএমন প্রশ্নের উত্তরও নিশ্চয় স্বস্তিদায়ক নয়। কারণ বিড়ম্বিত সব রফিকুন নিসার খবর সংবাদমাধ্যমে ঠাঁই-ই পায় না।

বর্তমান সরকার দেশকে সত্যিকার কল্যাণরাষ্ট্রের মোড়কে আনতে চাইছে। ফলে মানুষের অধিকার নিশ্চিতের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিসর বাড়াচ্ছে। বর্তমানে প্রায় এক কোটি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রকার ভাতা ও অনুদান পাচ্ছে। সরকার যেখানে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য কল্যাণকর, আইনি কিংবা সুরক্ষার বিষয় নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর সেখানে দায়িত্বশীলদের দায়হীনতা গ্রহণযোগ্য নয়। তা বরং সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত করবে। আমরা জানি, বর্তমান সরকার দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিসর বাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে দুস্থ, বিধবা, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক মানুষকে সহায়তায় বহুমুখী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পাশাপাশি চালু করেছে সর্বজনীন পেনশন স্কিমও। আমরা মনে করি সম্পদের সুষম বণ্টন যেমন প্রয়োজন, তেমন বৈষম্য নিরসনও জরুরি। আর সেই বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ থেকেই সমব্যথী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিক সহমর্মিতা নিয়েই বৃদ্ধি করেছেন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিসর। প্রধানমন্ত্রী যে দূরদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূর করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করে চলেছেন, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের ওপর অর্পিত, তাদেরও কাজের প্রতি সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। প্রতি বছর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাজেটে বড় অঙ্ক বরাদ্দ রাখা হয়। যাদের ওপর দায়িত্ব এ বরাদ্দের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা, তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে, তবেই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি, সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারী কারও কোনো গাফিলতি থাকলে কঠোর হাতে দমন করতে হবে। সরকারের জনবান্ধব কর্মসূচিগুলো কারও অবহেলা, অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতায় ভণ্ডুল হোক, প্রশ্নবিদ্ধ হোক আমরা চাই না। সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য সরকারের বরাদ্দ কিংবা প্রদেয় সুযোগসুবিধা নিয়ে স্বেচ্ছাচার-দুর্নীতিবাজরা তুঘলকি কাণ্ড চালাবে তা হতে পারে না। তাদের দায়বদ্ধতা-জবাবদিহির পাশাপাশি প্রান্তজনের অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।

আমরা দেখেছি, প্রকৃতপক্ষে যারা এসব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগী হওয়ার কথা, অসাধু দায়িত্বশীলদের কারণে তাদের অনেকেই বঞ্চিত। আবার যারা এ সুবিধার আওতায় নয়, তাদেরও দুর্নীতির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং বঞ্চিত করা হয়েছে প্রকৃত উপকারপ্রত্যাশীদের। এসব ক্ষেত্রেই সরকারকে সতর্ক নজর রাখতে হবে। সেই সঙ্গে দায়িত্বশীল কারও অদক্ষতা, অস্বচ্ছতা বা দায়িত্বহীনতায় সরকারের শুভ উদ্যোগ যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার যে আন্তরিকতায় সমাজের সব স্তরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নজর দিয়েছে সেই ভাবনার যথাযথ বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দেবেন। সব পক্ষের আন্তরিকতা ও পৃষ্ঠপোষকতাতেই প্রকৃতপক্ষে উন্নত হবে সমাজের সব স্তরের মানুষের জীবনমান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা