× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

সম্ভাবনাময় প্রাণিসম্পদ খাতে নজর বাড়ুক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪ ১৩:০৩ পিএম

সম্ভাবনাময় প্রাণিসম্পদ খাতে নজর বাড়ুক

আবহমান বাংলার চিরাচরিত কিছু রূপ আমাদের জাতীয় পরিচিতির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে আলোচনা-পর্যালোচনায় যেভাবে উপস্থাপিত হয় তেমনি সমৃদ্ধির স্মারক হিসেবেও জানান দেয়। গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ, গোয়ালভরা গরু এসবই একসময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির আলো ছড়াত। কিন্তু এখন অনেক ক্ষেত্রেই বিষয়গুলো ঠিক সেভাবে দৃশ্যমান নয়। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং জীবিকার অবলম্বন হিসেবে এই খাতভিত্তিক কর্মপরিসর বিস্তৃত হলেও বিকাশের ক্ষেত্রে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা কিংবা সংকটের ছায়াও কম প্রলম্বিত নয়। ১৫ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনে এরই প্রতিফলন দেখা গেছে। ‘গো-চারণভূমির সংকটে গোয়াল খালি কৃষকের’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে প্রতীয়মান হয়, প্রাণিসম্পদের সুরক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও জীবনমানের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও পথটা মসৃণ নয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ব্যবস্থাপনা-পরিকল্পনা দুই ক্ষেত্রেই যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।

খামারভিক্তিক গোসম্পদকেন্দ্রিক চিত্র দৃশ্যমান মূলত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। কিন্তু গ্রামে গ্রামে কৃষকের ঘরে ঘরে কয়েক দশক আগেও যেভাবে গোসম্পদে ভরা ছিল ক্ষেত্রটি উল্লেখযোগ্য হারে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। দেশের অনেক অঞ্চলেই গো-চারণভূমি কমছে এবং এর ফলে উন্মুক্ত মাঠে-প্রান্তরে বিনা বিনিয়োগে গোসম্পদ প্রতিপালনের যে বিস্তৃত ক্ষেত্র ছিল তাতে অভিঘাত লাগায় প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক অঞ্চলেই রাখালের এখন আর সেভাবে গো-চারণের সুযোগ নেই এবং ক্রমেই গো-চারণভূমি হ্রাস পাওয়ায় যে কৃষকরা এখনও গোসম্পদ প্রতিপালন করেন তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত পশু-খাবারের ওপর। কিন্তু এ খাবার অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকের পক্ষেই এর ভার বহন করা দুর্বহ হয়ে পড়েছে। একদিকে পতিত জমি চাষের আওতায় আসছে অন্যদিকে আবার অনেক অঞ্চলেই কৃষিজমি কিংবা গো-চারণভূমি কমছে সমান্তরালে। তাতে প্রকৃতপক্ষে দেখা যাচ্ছে, অনাবাদি জমি যে পরিমাণে আবাদের আওতায় আসছে তুলনামূলক হারে এর চেয়ে বেশি জমি বসতবাড়ি-শিল্পকারখানা কিংবা জমিনের উপরিভাগের মাটি নানা ক্ষেত্রে বিক্রি হচ্ছে। গো-চারণভূমি ক্রমেই হ্রাস পাওয়ায় যে কৃষকরা এখনও সংখ্যানুপাতিক অনেক কম হারে হলেও গোসম্পদ প্রতিপালন করছেন তাদের পক্ষে তা কঠিন হয়ে পড়ায় অনেকেরই গোয়াল গোসম্পদহীন হয়ে পড়ছে।

দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুধু গোসম্পদই নয়, ছাগল-ভেড়া, হাঁস-মুরগির খামার গড়ে উঠেছে এবং প্রথমাবস্থায় এগুলো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবদ্ধ আয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও এখন এসব কিছুরই খাদ্য ও ওষুধের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় এর বিরূপ অভিঘাতও লেগেছে খামারকেন্দ্রিক ব্যবসায়। সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রাণিসম্পদ প্রতিপালনে এখন দানাদার খাদ্যের ওপর প্রতিপালকদের নির্ভর করতে হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে গোসম্পদ প্রতিপালনের হার খামারে বাড়লেও প্রাকৃতিকভাবে প্রাণীর খাদ্য আহরণের জায়গা সংকুচিত হওয়ায় প্রক্রিয়াজাত দানাদার খাবারসহ নানা ধরনের খাবার খামারিদের কিনতে হচ্ছে এবং এর ফলে আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে ক্রমেই ফারাকও বাড়ছে। গো-চারণভূমি সৃষ্টির পরিকল্পনা বিভাগ ও জেলায় এক বা একাধিক সমবায়ভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ২০১১ সালে ‘সমবায় গো-চারণভূমির নীতিমালা’র নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।

নদ-নদী বা জলাভূমিতে জেগে ওঠা চরে ও খাসজমি, ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণ করে গো-চারণভূমি সৃষ্টির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তা-ও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা অনুসারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার এক যুগ অতিক্রান্তেও এর কোনো অগ্রগতি নেই এবং দেশে কী পরিমাণ চারণভূমি আছে এ নিয়েও সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই। আমরা জানি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাস কিংবা ব্যক্তিগত জায়গাজমি চলে যাচ্ছে বসতভিটা গড়ার জন্য। কৃষি আমাদের অর্থনীতির অন্যতম শক্তি বা জোগানদার। কৃষিভিত্তিক কার্যক্রমে প্রাণিসম্পদের বিশেষ করে গোসম্পদের ব্যবহার ও প্রতিপালন কৃষকের কাছে একসময় ছিল অপরিহার্য। কিন্তু সেই বাস্তবতা এখন অনেকাংশেই যেন অতীত অধ্যায়। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে এ-ও বলা হয়েছে, প্রাণিসম্পদ খাতে আয়-ব্যয়ের এবং উদ্যোক্তাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে যেমন গবেষণা দরকার তেমনি এক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাও সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখছি, আমাদের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত করতে সুনির্দিষ্টভাবে শিল্প এলাকা, অর্থনৈতিক এলাকা গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা মনে করি, দেশের অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদ খাতের ব্যাপক অবদান রাখার যেহেতু অবকাশ রয়েছে সেহেতু এ খাতের জন্যও অঞ্চলভিত্তিক প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। একই সঙ্গে গো-চারণভূমির থেমে যাওয়া উদ্যোগ বাস্তবায়নেও মনোযোগ দেওয়া দরকার। অনাবাদি জমি আবাদি হলে দানাদার শস্যসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়বে এবং তা আমাদের চাহিদার নিরিখে জরুরিও বটে। কিন্তু যেসব অনাবাদি জমি নানা কারণেই আবাদযোগ্য করা সহজ নয় সেসব জমি গো-চারণভূমির জন্য উপযুক্ত করার পাশাপাশি নদ-নদী কিংবা জলাশয়ে জেগে ওঠা চরে তা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময় অনেক বয়ে গেলেও নতুন করে তা বাস্তাবায়িত করার গুরুত্ব অনুধাবন করে ব্যবস্থা নেওয়া বাঞ্ছনীয় বলেও আমরা মনে করি।

দেশের খাদ্যনিরাপত্তা, সুষম পুষ্টি, বেকার সমস্যার সমাধান এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রাণিসম্পদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়টি আমলে রেখে কৃষক কিংবা খামারিদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্মরণে আছে, নিকট অতীতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গৃহীত কর্মসূচি ও প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আমাদের বক্তব্য, যে সংস্থিাটি গড়ে তোলা হয়েছিল প্রাণিসম্পদের সুরক্ষার জন্য সেক্ষেত্রে তাদের কর্মপরিকল্পনা কিংবা কার্যক্রমে ঘাটতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রকল্পগুলোয় অনিয়ম-অপচয়ের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় গলদের বার্তাও ইতঃপূর্বে সংবাদমাধ্যমেই উঠে এসেছিল। চলমান মূল্যস্ফীতির অভিঘাতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আমিষ বা মাংসের চাহিদায় বাধ্য হয়েই কাটছাঁটও করতে হয়েছে। এ অবস্থায় সম্ভাবনাময় প্রাণিসম্পদ খাত, যে খাতটির উপকারভোগী আমরা সবাই এর সুরক্ষায় নজর বাড়াতেই হবে। প্রাণিসম্পদ খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর বহুমুখী উদ্যোগ বাস্তবতার নিরিখেই নেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সব পক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব পালনে নিষ্ট হতে হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা