দিবস
আর কে চৌধুরী
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪ ১০:৫৪ এএম
১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস। ১৯২০ সালের এই দিনে
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্ম হয় তাঁর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
এমন একজন নেতা, যাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের সম্পর্ক গভীর। যত দিন যাচ্ছে, ততই
ইতিহাসে তাঁর নাম সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ষাটের দশকে আমি সর্বপ্রথম কায়েদ-ই-আজম কলেজ
(বর্তমানে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ)-এ ছাত্রলীগ থেকে জিএস নির্বাচিত হই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য লাভ করি তখনই।
বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন, আইয়ুব খানের সামরিক
শাসনবিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করেন। এসব আন্দোলনের কারণে বারবার কারাগারেও যেতে হয় তাঁকে। ১৯৫৪ সালে
যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে ইস্ট পাকিস্তান লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন
তিনি। একই বছর যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাঁকে। ১৯৬৬
সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির
মুক্তিসনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান
১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা মামলা করে তাঁদের
কারাগারে পাঠান। ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি শেখ মুজিবকে
কারামুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার
পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ বিজয় মেনে না নেওয়ায়
শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী
উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম,
আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। যার ধারাবাহিকতায়
মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী
নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির
৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর বঙ্গবন্ধুকে তাঁর
বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। মহান
মুক্তিযুদ্ধের আগে সর্বশেষ ২৫ তারিখও আমি বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর
সঙ্গে কথা বলে বললাম, লিডার, একটু ক্যান্টনমেন্ট যাব। ক্যান্টমেন্টের সঙ্গে আমার
ফার্নিচারের ব্যবসা ছিল। ক্যান্টনমেন্ট গিয়েছিলাম ফার্নিচারের বিল আনতে। ওই দিন
ক্যান্টনমেন্টের পরিস্থিতি একটু অন্যরকম মনে হলো। ফিরে এসে বঙ্গবন্ধুর কাছে
সংবাদটি পৌঁছে দিলাম। নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একাত্তরের ১৬
ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। ১৯৭২ সালের
১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু।
সদ্যস্বাধীন দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
বঙ্গবন্ধু কখনই ভাবেননি তাঁর করা স্বাধীন বাংলাদেশে এমন কিছু ঘটবে যা ইতিহাসের কলংকিত অধ্যায় হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ঘাতকরা তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের ওপর নির্যাতন চালায়। আমাকে হত্যা করার জন্য কয়েকবার আমার বাড়িতে আক্রমণ চালায়। তাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে আমাকে ছয় মাস আত্মগোপনে থাকতে হয়। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং অস্তিত্বের শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে দেশের স্বাধীনতাই হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে তত দিন কেউ বঙ্গবন্ধুর নাম দেশের ইতিহাস থেকে মুছতে পারবে না। তিনি আছেন এবং থাকবেন বাংলাদেশের প্রতিটি বাঙালির অন্তরে। তাকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি।