× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

পুতিন আগ্রহী না হলে সংকট জিইয়ে থাকবে

সিমন টিসডাল

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪ ১০:৩৬ এএম

সিমন টিসডাল

সিমন টিসডাল

পোপ ফ্রান্সিস ইউক্রেনের নেতাকে নতিস্বীকারের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘তাদের শান্তি পতাকা উত্তোলন করার সৎসাহস দেখানো জরুরি।’ এভাবে কিয়েভ ও পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে প্রলম্বিত এই যুদ্ধ থামানো সম্ভব। ইউক্রেন পরাজিত, তার এমন মন্তব্য সঠিক ভাবার যুক্তিসিদ্ধ কারণ নেই। বরং মস্কোর অবৈধ আগ্রাসন ও যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি তিনি যেন এক্ষেত্রে এড়িয়ে গেছেন। এ সংঘাত কীভাবে শেষ হবে তা শুধু ফ্রান্সিসই ভাবছেন এমনটি নয়। দুই বছর পর যুদ্ধের নিশ্চিত বিজয়ী পক্ষ এখনও নির্ধারিত হয়নি। কে হবে তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। তবে যে পক্ষই জয়ী হোক না কেন, পরাজিত পক্ষের জন্য তা ডেকে আনবে ধ্বংসাত্মক পরিণতি। এমন ভাবনাকে নায়কসুলভ বলা চলে না। তবে কিয়েভের প্রধান দুই পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি কি বিষয়গুলো বোঝে? যদি বোঝে তাহলে শান্তি সমঝোতা না নেওয়ার বিষয়টি হতাশাজনক, এমনকি ঝুঁকিপূর্ণও।


গত সপ্তাহে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ইউক্রেনকে সহযোগিতার জন্য ন্যাটোর সেনাসদস্য পাঠানোর বিষয়টি ভাবা উচিত। তার এ মন্তব্যের পর পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেন। পুতিনের ধারণা, ভাগ্য তার পক্ষে। পুতিন যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত করতেই ব্যস্ত। এদিকে নির্বাচনের আড়ালে রাশিয়ায় আরেকটি ক্যু করছেন তিনি। অবশ্য ১৮ মাস আগেও পুতিন এত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যখন ক্রিমিয়ার দখল পুনরুদ্ধার করে তখনকার কথা বলছি। গত সপ্তাহে এক তথ্যে জানা গেছে, ওই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভে দ্রুত তেজস্ক্রিয় শনাক্তকারী যন্ত্র ব্যবহার এবং পটাশিয়াম আয়োডাইড ট্যাবলেট পৌঁছে দেয়। গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে পাওয়া এ তথ্য বলে দেয়, কৌশলগত যুদ্ধে যেন রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করেও কোনোভাবে জয়ী না হয় তা নিশ্চিত করতেই এমনটি করা হয়েছিল। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, বিষয়টি হোয়াইট হাউস গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল বলেই একদল পেশাদারকে নতুন পারমাণবিক পরিকল্পনার নথি বানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। স্নায়ুযুদ্ধের শেষ দিকের কথা বিবেচনা করেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতির এ অনুমান। তবে ২০২২ সালের তুলনায় যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের ঝুঁকি কম। কিন্তু এ কথাও সত্য, সময়ের সাপেক্ষে ঝুঁকি এখনও কমেনি।

রাশিয়া যদি এ যুদ্ধে হারে তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। কারণ একে পুতিন ন্যাটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বিভিন্ন পোলিং অনুসারে, রাশিয়ার মানুষ পুতিনের এ কথা বিশ্বাস করে। তাই পুতিন এ যুদ্ধে কোনোভাবেই পরাজয় বরণ করতে চাইবেন না। অন্তত তার দেশের মানুষের বিশ্বাসের জায়গায় যেহেতু এ যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাই এ পরাজয় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে।

যুদ্ধে ইউক্রেনের পরাজয়ও দুশ্চিন্তার কারণ। মূলত মানুষের ভোগান্তির বিষয়টিই বড় হয়ে দেখা দেবে। লাখ লাখ উদ্বাস্তুকে পশ্চিমের বিভিন্ন জায়গায় ঠাঁই খুঁজে নিতে হবে। যুদ্ধাপরাধ এমনকি অপহরণের মতো অপরাধের সংখ্যা বাড়বে। যুদ্ধে বিজয়ী পুতিন পুরো দেশটিতে দখল কায়েম করতে চাইবেন হয়তো। তাতে ইউক্রেনে একটি সমাধান হয়তো নিশ্চিত হবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা রাশিয়ার পুতুল হয়ে থাকবে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের অস্তিত্বসংকট দেখা দেবে। ইউক্রেনের পরাজয় সারা বিশ্বেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বিশেষত ইউরোপে এর অভিঘাত হবে বহুমুখী। রাশিয়ার এ বিজয় পোল্যান্ড এবং তিন বাল্টিক রাষ্ট্রের জন্যও অশনিসংকেত হয়ে দেখা দেবে। অর্থনৈতিক ক্ষতি তো হবেই একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্রের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করবে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোকে প্রতিরক্ষায় মনোযোগ বাড়াতে হবে।

ইউক্রেনের পরাজয়ে সীমানা দখলের প্রবণতা বাড়তে শুরু করবে। অনেক জায়গা জোরদখলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে চীন কি তাইওয়ানে আক্রমণ চালাবে? নাকি উল্টোটি ঘটবে? সবকিছুই এখন অনুমাননির্ভর। জাতিসংঘের গুরুত্ব কমে যাবে। জেনেভা কনভেনশন কিংবা অন্য সব মানবিক আইনের প্রতি কারও শ্রদ্ধা থাকবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ওয়াশিংটন সামরিক সহযোগিতা তেমনভাবে দেয়নি। ফলে ইউক্রেনের পরাজয়ে তাদের পরোক্ষ অবদান রয়েছে। তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আস্থার জায়গা আর থাকে কী করে? বিশেষত জো বাইডেনকে হারিয়ে ট্রাম্প বিজয়ী হলে পরিস্থিতি আরও পাল্টে যাবে। পুতিনের প্রতি বন্ধুসুলভ ট্রাম্প তো বলেই দিয়েছেন, ‘এক সিকি পয়সাও ইউক্রেনকে দেওয়া হবে না।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি লয়েড অস্টিন গত মাসেই জানিয়েছেন, ‘পুতিন বিজয়ী হলে থামবেন না।’ এর অভিঘাতও হবে বহুমুখী ও বিপর্যয়কর। তার মতে, এ যুদ্ধে ইউক্রেন পরাজিত হলে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর যুদ্ধ শুরু হবে।

পোপ ফ্রান্সিস নিজে একটি সমাধানের কথা বলেছেন। তবে সেই সমাধানের পথে না হেঁটে গোটা পশ্চিমা দুনিয়াকে একত্র হতে হবে। সমঝোতা করতে হবে যেন অনুমেয় ঝুঁকিগুলো বাস্তব না হয়ে ওঠে। তুরস্ক সম্প্রতি টু-ওয়ে পিস সামিটে একটি প্রস্তাব রেখেছে। যদিও কিয়েভ এ প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছে। মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় যাদের দেখা হচ্ছে তাদের দৃশ্যমান কোনো সাফল্য নেই। ইউক্রেনের টেন পয়েন্ট পরিকল্পনাও মস্কোর রোষানলের শিকার। শান্তির জন্য কোনো উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি। পশ্চিমা সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ থেকে যায়। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় ইউক্রেনের দাবি নিয়েও ভাবতে হবে। তবে সমস্যা হলো, পুতিন ভাবছেন তিনিই জিতবেন এ যুদ্ধে। যত দিন পর্যন্ত পুতিন শান্তি প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আগ্রহী না হবেন তত দিন এ সংকট জিইয়ে থাকবে

যুদ্ধবিরতির কথা বললে ভালো লাগে। কিন্তু আপাতত প্রয়োজন সংঘাত থেকে দূরে সরে আসা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ পোপকে অনেকটা সমালোচনার সুরেই বলেছেন, ‘ইউক্রেনে শান্তিপ্রক্রিয়াকে পুঁজিবাদী প্রক্রিয়া ভাবার কারণ নেই।’ শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে এ যুদ্ধের মূল হোতা ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। তা করতে না পারলে যুদ্ধ শেষ হবে না।

  • ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমেন্টেটর, দি অবজারভার 

দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা