× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

স্বপ্নসারথি ফুটবলকন্যাদের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দিন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪ ১০:২৯ এএম

স্বপ্নসারথি ফুটবলকন্যাদের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দিন

গল্প নয়, বাস্তবতা; একেবারে দৃশ্যমান বাস্তবতা। ১৯ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনটি যেন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের আশা জাগানিয়া গন্তব্যের ঠিকানা। ‘কলসিন্দুর থেকে পালিচড়া : ফুটবলকন্যাদের এগিয়ে যাওয়ার গল্প’ শিরোনামের প্রতিবেদনের গর্ভে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে প্রতীয়মান হয়, দিগন্তবিস্তৃত আলোর ইশারা রয়েছে আমাদের সামনে। এমন প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সব পক্ষের দায়দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমরা বলতে চাইÑশত প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতার দেয়াল ডিঙিয়ে যারা ক্রীড়াঙ্গন, বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেটে সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করেছেন; যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা যেন মুখ থুবড়ে পড়ে না যায়। স্বাধীনতার এ মাসে আমরা স্মরণ করি মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্বের কথা, যে পর্বে আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের গৌরবোজ্জল ভূমিকা ছিল। বর্তমান প্রজন্ম তাদেরই সেই সম্ভাবনার দ্যুতি ছড়ানো উত্তরাধিকার। আমরা মনে করি, এর জন্য যে পৃষ্ঠপোষকতা দরকার এ ব্যাপারে কোনো উদাসীনতার অবকাশ নেই।

যুগের প্রবহমানতায় গতানুগতিক ধারায় ক্রীড়াঙ্গন চলার আর অবকাশ নেই। আমরা এও মনে করি, ক্রীড়াঙ্গনের মূল চালিকাশক্তি, রূপকার, কারিগর হলেন সংগঠকরা। তাদের দূরদর্শিতা-পরিকল্পনায় এগিয়ে চলার পথরেখা অঙ্কিত হয়। শুধু আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটেই নয়, এখনও যেখানে আমাদের মতো সমাজে জিইয়ে আছে নানা কুসংস্কার ও সামাজিক বিধিনিষেধের বেষ্টনী; সেখানে ক্রীড়া ক্ষেত্রে নারীর পদচারণ এত সহজ নয়। তার পরও যারা অদম্য মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন, স্বপ্নসারথির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, আমরা তাদের অভিনন্দিত করি। আমরা আরও জানি, বিশ্বের কোনো দেশেই ক্রীড়াঙ্গনে কোথাও সমান দৃষ্টিতে লালনপালন কিংবা পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় না। দেশে ক্রীড়াঙ্গন পরিচালিত হচ্ছে বা হয় অগ্রাধিকার নির্ণয় করে এবং একই সঙ্গে এও অসত্য নয়, খেলাধুলার চর্চা তো এখন আর শুধু বিনোদনেরই মাধ্যম নয়, এর সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে আছে দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান। ক্রীড়াঙ্গনে আমাদের শুধু ছেলেরাই নয়, মেয়েরাও ক্রিকেট ও ফুটবলে সমান্তরাল সাফল্য দেখিয়ে চলেছেন।

প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনটিও ফের এরই সাক্ষ্য দিয়েছে। কলসিন্দুরের নারী ফুটবলাররা তো আরও আগেই আমাদের সাফল্যের সড়ক নির্মাণ করেছেন। এরই ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রীড়ামোদী ও খেলোয়াড়ের মধ্যে। সচিত্র ওই প্রতিবেদনে রংপুরের পালিচড়া স্টেডিয়ামে নারী ফুটবলারদের নিরন্তর অনুশীলন এরই আশাব্যঞ্জক স্মারক। ফুটবল দিয়ে তাদের অপার স্বপ্ন অনুশীলনের মাধ্যমে অধিকতর পরিশীলিত করার কি নিমগ্ন সাধনা! অথচ এর জন্য পুষ্টিকর খাদ্যসহ তাদের আনুষঙ্গিক যে জোগানের অপরিহার্যতা রয়েছে, সে ক্ষেত্রে সীমাহীন ঘাটতি বিদ্যমান। সমাজের কিছু মানুষের ভ্রুকুটি আর অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও তাদের এগিয়ে যাওয়ার নিরন্তর প্রয়াস শুধু সাধুবাদযোগ্যই নয়, সাহস ও ইচ্ছা এবং স্বপ্নজয়েরও স্মারক বটে। তারা নিজেদের গড়ছেন দেশের সম্মানের জন্য, মর্যাদার মুকুট ছিনিয়ে আনার জন্য। তাদের চোখে বাংলাদেশ ভবিষ্যতের যে স্বপ্ন দেখে চলেছে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব পালনে যথাযথ মনোযোগী হওয়ার দায় ভুলে না গেলেই মঙ্গল।

খুব দূরের নয়, নিকট অতীতের বেদনাকাতর অধ্যায় সাফজয়ী ফুটবলার রাজিয়া সুলতানার সন্তান জন্মদানের পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার মর্মস্পর্শী ঘটনা। বাংলাদেশ যখন শিশু-মাতৃ মৃত্যু রোধে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, তখনও রাজিয়ার মতো কীর্তিমানকে যথাযথ চিকিৎসা-পরিচর্যা ও যত্নের অভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হলো! তিনি ২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন। আমরা দেখছি, নারী ফুটবলার কিংবা ক্রিকেটারদের এখনও বৈষম্যের ছায়াতলেই বাস করতে হচ্ছে। তাদের সম্মানি বা আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়গুলো শুধু ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধই নয়, একই সঙ্গে দায়িত্বশীলদের দয়া ও কর্তব্যের প্রতি অবহেলা-উদাসীনতার সাক্ষ্য তুলে ধরে। আমরা এর নিন্দা জানাই এবং দায়িত্বশীলদের দয়া ও বোধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এও বলতে চাইÑএমনটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর নিরসন জরুরি।

সংগঠক ও দায়িত্বশীলদের পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে তাদের করণীয় কী এবং যারা দেশ-জাতির গর্বের ধন তারা সম্পদ। এ সম্পদ প্রতিপালন-পরিচর্যায় উন্নয়ন-অগ্রগতির এত সাফল্যের মাঝে প্রদীপের নিচে অন্ধকার হয়ে জিইয়ে থাকতে পারে না। যারা দেশ-জাতির হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন তাদের ও ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতিকল্পে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কাজের কাজ করতে হবে। সরাতে হবে বৈষম্যের ছায়া। প্রতিবন্ধকতা-প্রতিকূলতার দেয়াল সরিয়ে দেশ-জাতির জন্য সম্মান অর্জনকারীদের প্রতি সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে নিষ্ঠার প্রমাণ রাখতেই হবে। ব্যবস্থাপনার গলদ সরাতে হলে দরকার কাঠামোগত সংস্কার। যাদের প্রতিভা রয়েছে অথচ তা বিকাশের পথ নানা কারণে সংকুচিত; তাদের সম্ভাবনা যথাযথভাবে কাজে লাগানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। ব্যক্তি কিংবা মহলের ইচ্ছানুযায়ী নয়, ক্রীড়াঙ্গন পরিচালিত হোক সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে সমন্বিত কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। ব্যবস্থাপনা উন্নত হলে নিশ্চয়ই সাফল্যের আলো ব্যাপৃত হতেই থাকবে। আমরা সম্ভাবনাময় ফুটবলকন্যাদের তো বটেই, দেশের নারী ক্রিকেটারসহ ক্রীড়াঙ্গনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও যেসব নারী যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন না তাদের প্রতি মনোযোগ গভীর করার দাবি জানাই। অর্জনের যেসব ক্ষেত্র রয়েছে সেদিকে দেশ-জাতির বৃহৎ স্বার্থেই দৃষ্টি গভীর করতে হবে। উদাসীনতা কিংবা দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতায় যেন সম্ভাবনার ক্ষেত্র রুদ্ধ হয়ে না যায় তা নিশ্চিত করতেই হবে। এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়, নারী ফুটবলারদের বেশিরভাগই আসে অতি সাধারণ পরিবার থেকে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থায় একজন খেলোয়াড়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেওয়া প্রায় অসম্ভব। এ অবস্থায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের সুষম খাদ্যের সংস্থান করতে হবে। এছাড়া নিয়মিত আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে তৃণমূলের ক্রীড়াবিদদের পুষ্টির জোগান নিশ্চিত করাও জরুরি। কেননা ফুটবলের মতো খেলায় শারীরিক সক্ষমতার কোনো বিকল্প নেই। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা