× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ কঠিন নয়, কিন্তু হচ্ছে না কেন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪ ১১:০১ এএম

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ কঠিন নয়, কিন্তু হচ্ছে না কেন

‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো/ তুমি কি তাহাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় উঠে আসা আক্ষেপের এই কাব্যপঙক্তির সঙ্গে আমাদের বাস্তবতা অস্বীকার করার জো নেই। বায়ুদূষণের কারণগুলো অজানা না থাকলেও এর প্রতিকারে সব প্রচেষ্টা নিষ্ফল! ২০ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন এরই সাক্ষ্যবহ। বায়ুদূষণ-সংক্রান্ত সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের গবেষণা প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে তা চরম উদ্বেগের। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে বায়ুদূষণের মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলছে। বায়ুদূষণের দিক থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও ভারতের রাজধানী দিল্লির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ করা যায়। মাঝেমধ্যে দিল্লিকে হারিয়ে ঢাকা শীর্ষে উঠে আসছে। ঢাকার বায়ুমান দিনের পর দিন বিশ্বের দূষিততম শহরের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করছে।

২০ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণে ২০২৩ সালে দেশ হিসেবে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ দূষিত নগর ছিল ঢাকা। একই দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশের অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, ওই দিন ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের সূচক ছিল ১৬২, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্যতম অংশীদার বায়ুমান পর্যবেক্ষণ গবেষণা সংস্থা আইকিউএয়ারের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা এবং যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বহুলাংশে দায়ী। টানা ছয় বছর ধরে সহ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ থেকে ১৯ ‍গুণ বেশি দূষণের গ্রাসে রয়েছে দেশের মানুষ এবং এর ফলে জনস্বাস্থ্যের অবস্থা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নানা কর্মসূচি নিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না দেশের বায়ুদূষণের মাত্রা। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর তরফে তাদের যে প্রতিক্রিয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদনে উপস্থাপিত হয়েছে, তা সেই পুরোনো গৎবাঁধা বক্তব্যের মতোই। ‘হবে’, ‘হচ্ছে’র জটাজালে জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করলেও এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল পক্ষগুলো দায়দায়িত্ব পালনে কতটা দায়বদ্ধতা রয়েছে এর সাক্ষ্য দেয় বিদ্যমান বাস্তবতায় তার উত্তর জটিল নয়।

মস্তিষ্ক, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, পাকস্থলী, দৃষ্টিশক্তি ও প্রজনন স্বাস্থ্যসহ জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিকে যে অভিঘাত কতটা উদ্বেগজনক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে এর সতর্কবার্তা ইতোমধ্যে বহুবার জনস্বাস্থ্যবিদরা দিয়েছেন। করণীয় সম্পর্কে তাদের সুনির্দিষ্ট সুপারিশও কম উপস্থাপিত হয়নি। বায়ুদূষণে যে ক্ষতি হচ্ছে সেই ক্ষতির পরিমাণ কত এবং কীভাবে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্ষতির সীমানা, তাও গবেষকদের গবেষণায় কম উঠে আসেনি। আমরা জানি, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে উচ্চ আদালত থেকে ইতোমধ্যে অনেক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এর বাস্তবায়নে প্রকৃতপক্ষে কাজের কাজ কিছুই হয়নি! দেশের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ইতোপূর্বে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা মেনে কাজ করলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ কঠিন নয়।’ বিদ্যমান পরিস্থিতি এও সাক্ষ্য দেয়, আদালতের নির্দেশনা যখন মানা হচ্ছে না, তখন সংগতই প্রতীয়মান হয় নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর আগ্রহ ও সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। আমরা জানি, ২০২১ সালে জাতীয় বায়ুমান মাত্রা নির্ধারণ করা হয় বছরে গড়ে ১৫ মাইক্রোগ্রাম। বর্তমানে তা গিয়ে ঠেকেছে এর চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায়। অভিযোগ আছে, সরকার দূষণের মাত্রা কমিয়ে দেখাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দূষণ হ্রাসে কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না করে বায়ুদূষণের মানমাত্রা কমিয়ে বা হালকা করে দেখানোর প্রচেষ্টা কি আত্মঘাতীর নামান্তর নয়?

বায়ুদূষণের উপসর্গগুলো অচিহ্নিত নয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশে ইতোপূর্বে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এও বলা হয়, মূলত সরকারি বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া এক্ষেত্রে নেই কার্যকর কোনো আইনও। আমরা এও জানি, ২০১৯ সালে ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট নামে একটি নীতিমালা প্রণয়নের কথা উঠেছিল। অনেক বিশেষজ্ঞরই অভিমত, এটি হলে দূষণ রোধে আইনগতভাবে শক্তিশালী অবস্থা তৈরি হতো। কিন্তু যতদূর জানা যায়, তা না হয়ে ২০২২ সালে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণীত হয়, তুলনামূলকভাবে যা অনেক কম কার্যকর ও শক্তিশালী। বায়ুদূষণ রোধে বিশ্বব্যাংকের তরফে নিকট অতীতে ঋণও মিলেছিল। এই ঋণ থেকে ব্লক ইট উৎপাদনে ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল, একই সঙ্গে যানবাহনের কারণে কী পরিমাণ দূষণ হচ্ছে তা নির্ণয়ে বিআরটিএতে একটি ভেহিকেল ইন্সপেকশন স্টেশন স্থাপিত হবে। আমরা জানি না, শেষ পর্যন্ত এগুলোর অগ্রগতি কতটা কী।

অনেকেরই জানা আছে, বায়ুদূষণ রোধে মুখ্যত ‍ভূমিকা পালনকারী দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো হচ্ছে যথাক্রমে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকারের অন্যান্য কাঠামো, ওয়াসা, বিআরটিএ, রাজউকসহ পরিবেশ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অনভিপ্রেত হলেও সত্য, রাজধানী ঢাকার বিশেষ কয়েকটি এলাকা ছাড়া তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। আমরা এও দেখছি, সংবাদমাধ্যমে দূষণের রেকর্ড ভাঙার খবর যখন উঠে আসে, তখন শুরু হয় দৃশ্যত কিছু তৎপরতা। প্রজ্ঞাপন জারিসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পানি ছিটানোর মাধ্যমে দায়িত্বশীল পক্ষগুলো দায় শেষ করে! পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকাও প্রশ্নমুক্ত নয় এবং এর ফলে দূষণের উৎসগুলো বন্ধ তো হয়ই না, উপরন্তু এর আরও বিস্তৃতীকরণ ঘটে চলেছে। দেশে বিশেষ করে ঢাকায় বাতাসে দূষণের মাত্রা এতই বেশি, বুক ভরে শ্বাস নেওয়াও ক্রমশ দুরূহ হয়ে পড়ছে অর্থাৎ নিঃশ্বাসে বিষের মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। জনস্বাস্থের জন্য চরম হুমকি হিসেবে জিইয়ে থাকা বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর উদাসীনতা একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশনা অমান্যর দায় তারা কেউই এড়াতে পারে না। দূষণের মাত্রা হ্রাসে তাদের ব্যর্থতার প্রতিবিধান জরুরি।

বায়ুসহ পরিবেশদূষণ রোধে পরিবেশবাদী সংগঠনসহ সামাজিক নানা সংগঠনের সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, মানববন্ধন কিংবা প্রতিকারে নানামুখী দাবি সবই যেন ‘অরণ্যে রোদন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা স্পষ্টতই মনে করি, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কোনো পক্ষই মানুষের জীবনরক্ষায় তাদের যে দায়হীনতা দৃশ্যমান তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দূষণ রোধে তারা যে ‘টোটকা দাওয়াই’ দিচ্ছে, তাতে এ গুরুতর ব্যাধির উপশম কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আদালতের নির্দেশনা আশু বাস্তবায়িত হোক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা