× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

তবু ন্যায্যমূল্যে মেলে না কেন নিত্যপণ্য

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৪ ১২:৫৭ পিএম

তবু ন্যায্যমূল্যে মেলে না কেন নিত্যপণ্য

খাদ্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষ বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কীভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন। আমরা দেখছি, সমাজে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ দ্রুত ধনসম্পদের মালিক হলেও এর বিপরীতে দরিদ্র ও স্বল্প উপার্জনকারী মানুষের তালিকা দীর্ঘ হয়ে চলেছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় সরকারের তরফে মূল্যস্ফীতির অভিঘাতসহ জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য একটি অংশের জীবনযাপন স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে বহুমুখী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ সত্ত্বেও জনজীবনে স্বস্তি ফেরানো যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতির অভিঘাত সামাল দিতে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া এরই অংশ। কিন্তু প্রতিদিনের বাংলাদেশসহ অন্য সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বাজারে পণ্যগুলো মিলছে না। ২২ মার্চ ‘যৌক্তিক মূল্যের গোড়ায় গলদ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনে এর পশ্চাৎ কারণগুলোও উঠে এসেছে। গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে নগরজীবন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির অভিঘাতের আরও উৎসে নজর দিতে গিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনুসন্ধানে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে প্রতীয়মান হয়, দাম বেঁধে দেওয়া এবং নির্ধারিত দামে নিত্যপণ্য বাজারে না পাওয়ার বিষয়গুলো যেন সাপলুডু খেলারই নামান্তর।

প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, আমদানিকৃত পণ্যগুলোর দাম পর্যালোচনা বাদ দিলেও দেশে উৎপাদিত পণ্য মাছ থেকে শুরু করে শাকসবজি পর্যন্ত মূল্যের ক্ষেত্রে যে তারতম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে এ ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে সব স্তরের অসাধুদের যূথবদ্ধ কারসাজির ছায়া। ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামের ক্ষেত্রে উৎপাদক পর্যায় থেকে ধাপে ধাপে ব্যবসায়ী পর্যায় পর্যন্ত যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা অঙ্কের হিসাবে বিশাল মুনাফা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে ১৫ মার্চ যে ২৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে তাদের ভাষায় তা হলো, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ এবং যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ’। তাদের হিসাবের ওই তালিকায় বেশিরভাগ পণ্যের মূল্যের ক্ষেত্রেই নানানরকম অসঙ্গতি দৃশ্যমান, এ বার্তাও রয়েছে ওই প্রতিবেদনেই। কর্তৃপক্ষ মাছ, মাংস, সবজি, ডালসহ যে ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে তাতে প্রকৃতপক্ষে কৃষক-উৎপাদক কিংবা খামারির লাভ কতটা হচ্ছে প্রশ্ন আছে এওভ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন উৎপাদক মহলের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর অযৌক্তিক দাম যৌক্তিক হিসেবে নির্ধারণ করেছে। মৎস্যজীবী, কৃষকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের উৎপাদক কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কোন প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণ করেছে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

সরকারের কোনো দায়িত্বশীল সংস্থা জনকল্যাণে যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে বা প্রক্রিয়া চালু করবে তখন এর সুফল যাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই সমানভাবে ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করাই সর্বাগ্রে সঙ্গত। কিন্তু আমরা দেখছি, এ সঙ্গত কাজটিও সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থার অদূরদর্শীতায় অসঙ্গতির খতিয়ানমুক্ত হয়ে গেল! এ অবস্থায় প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘যৌক্তিক’ মূল্যের গোড়ায় গলদ যথার্থ বলেই স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। উৎপাদক কিংবা ভোক্তা পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার সুফল এ দুই শ্রেণির কেউই ভোগ করতে পারেনি। মধ্যস্বত্বভোগী কিংবা ফড়িয়াদের দাপট সমান্তরালে পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং তাদের হাত বদলে একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু সদস্য ও সমাজবিরোধীদের যোগসাজশে চাঁদাবাজির বিরূপ ফলও দৃশ্যমান। পণ্যের মূল্য বেঁধে দিয়ে মূল্যস্ফীতির অভিঘাতের চিন্তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা এর আগেও করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেÑবাজারব্যবস্থার স্তরে স্তরে গলদ রেখে এর বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব? বাজারে চাপ দিয়ে তাপ কমানো যাবে না, বরং চাহিদা অনুযায়ী জোগান নিশ্চিতের পাশাপাশি জিইয়ে থাকা সব নেতিবাচকতার ছায়া সরানো জরুরি এ তাগিদ আমরা ইতঃপূর্বে এ সম্পাদকীয় স্তম্ভেই দিয়েছি বহুবার। কিন্তু আমরা দেখছি, ব্যাধি চিহ্নিত করে উপযুক্ত দাওয়াই না দিয়ে প্রতিফলের আশা বারবারই করা হচ্ছে! আমরা স্পষ্টতই মনে করি, ব্যবস্থা যদি সার্বিকভাবে ভালো করা না যায় তাহলে অবস্থার বদল কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য অতিমুনাফাখোর ব্যবসায়ী মহল তো বটেই এমনকি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউও বৈশ্বিক সংকটসহ নানা কারণ দেখিয়ে বহুমাত্রিক অজুহাত দাঁড় করান। আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্যপণ্যের মূল্য কতটা বেড়েছে আর অভ্যন্তরীণ বাজারে কতটা বাড়ানো হয়েছে, এর তুলনামূলক বিশ্লেষণের তাগিদ বাজার বিশ্লেষক এবং অর্থনীতিবিদরা বারবার দিলেও এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি যথাযথভাবে পরখ করার প্রক্রিয়াও দৃশ্যমান হয়নি। তাতেও প্রতীয়মান হয়, গলদের শেকড়বাকড় বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে আছে।

বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও কথিত সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা-পর্যালোচনা এবং করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণও এ পর্যন্ত কম হয়নি। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও সত্য, এসবই যেন আলোচনার টেবিল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ এবং অনেক সিদ্ধান্ত ফাইলবন্দি অবস্থায় আছে। আমরা জানি, বাজার নিয়ন্ত্রণে যাদের দায়দায়িত্ব রয়েছে তারা তো বটেই, এমনকি মন্ত্রীরাও ইতোমধ্যে বহুবার সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা স্বীকার করেছেন। অসাধু মহলের কাছে তাদের এ অসহায় আত্মসমর্পণ সঙ্গতই এ প্রশ্নও দাঁড় করায়Ñসিন্ডিকেটের হোতাদের হাত কি আইনের হাতের চেয়ে লম্বা? মূল্যস্ফীতির অভিঘাত সামাল দিতে সবার আগে ভাঙতে হবে সিন্ডিকেট, এ তাগিদও আমরা ইতঃপূর্বে দিয়েছি। কিন্তু বিস্ময়কর হলো, সিন্ডিকেট নিয়ে এত কথা হয় তার পরও কোনো স্থায়ী প্রতিবিধান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কেন? আমরা মনে করি, এ ‘কেন’র অনুসন্ধানের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনার গলদ সারাতে একই সঙ্গে জিইয়ে থাকা অসঙ্গতিগুলোর ছায়া সরাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিসর অনেক বাড়িয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও গলদ রয়েছে। আমরা এও দেখছি, চলমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের ওপর অর্পিত তাদের কেউ কেউ আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এবং সংবাদমাধ্যমে এর কদর্য চিত্র ইতোমধ্যে কম উঠে আসেনি। সরকারি সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পণ্য সরবরাহ বাড়াতেও বহুমাত্রিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার পরও জনকল্যাণমুখী এই কার্যক্রম সিন্ধুর মাঝে এখনও বিন্দুর মতোই রয়ে গেছে। আমরা মনে করি, অসহনীয় খাদ্যমূল্য স্ফীতির অভিঘাত ঠেকাতে সব স্তরের গোড়ায় গলদের দিকে নজর গভীর করতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা