× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সীমানা ছাড়িয়ে

পুতিনকে আইএসআইএসের বার্তা

আন্দ্রেই সলদাতভ

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪ ১০:০১ এএম

পুতিনকে আইএসআইএসের বার্তা

২০০০ সালে ক্ষমতায় আসার পর ভ্লাদিমির পুতিন একটি বিষয় খোলাসা করেছিলেন, তিনি তার পূর্বসূরিদের থেকে ভিন্ন হবেন। তার মতে, সোভিয়েত নেতা মিখায়েল গর্বাচেভ ও বরিস ইয়েল্টসিন সন্ত্রাস রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেননি। পুতিন পূর্ববর্তী নেতাদের থেকে ভিন্ন হবেন কারণ তিনি কঠোর চাপের মুখেও দুর্বলতা প্রকাশ করেন না। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কেজিবির অনেক জাদরেল নেতারাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। পুতিন তখন নিশ্চিত ছিলেন, রাশিয়া এতটাই দুর্বল একটি রাষ্ট্র হয়ে পড়ে যে এর নিয়ন্ত্রণে কোনো ছাড় দেওয়াই যাবে না। পুতিন এবং তার কেজিবি সহকর্মীদের অনেকের মতে, ১৯৯৫ সালে প্রধানমন্ত্রী ভিকটর চেরনোমিরদিন বুদিওনভস্কের হাসপাতালে জিম্মিদের উদ্ধার করার জন্য ফোনালাপে জঙ্গি নেতার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদকে পরোক্ষভাবে সমর্থনই করেছেন। চেরনোমিরদিনের এই ফোনকলের মাধ্যমে প্রথম চেচরেন যুদ্ধ বন্ধ করা যায়। কিন্তু রাশিয়ান আর্মির জন্য এটি একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। পুতিন অবশ্য ভিন্ন ধাঁচের। বিগত কয়েক বছরে রাশিয়ার ওপর যত জঙ্গি হামলা হয়েছে সবগুলোর ক্ষেত্রে পুতিন কঠোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এসব নিয়ন্ত্রণের কারণে দেশটির নাগরিকও পুতিনকে দোষারোপ করতে পারেনি।

জঙ্গি হামলার তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেও পুতিন কড়াকড়ি আরোপ করেন। ২০০২ সালের অক্টোবরের একটি সন্ত্রাস আক্রমণের বিষয়ে এফএসবি (ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসেস) সর্বপ্রথম একটি অভিযানের পূর্ণ তদন্তের সুযোগ পায়। মস্কো থিয়েটারে সেবার হাজারখানেক মানুষকে জিম্মি করে রাখা হয়। এফএসবির অপারেশনে গ্যাস নিক্ষেপ করায় অন্তত ১৩০ জন জিম্মি মারা যান। রাশিয়ার সিকিউরিটি সার্ভিসের ওপর যেকোনো অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়াই হতো। বেসলানে একটি স্কুলে ২০০৪ সালে শিশুদের জিম্মি করার পর অনুসন্ধানে সত্য খুঁজে পাওয়ার পথেও নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের ইয়েল্টসিনের আইনকে সরিয়ে নিজস্ব আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুতিন সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানে আরও কট্টরপন্থি হয়ে ওঠেন। তার নতুন আইন অনুযায়ী, ‘সন্ত্রাসবাদ এক ধরনের মতাদর্শ বা চর্চা যার মাধ্যমে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তর ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের ওপর প্রভাব প্রতিষ্ঠা্র প্রচেষ্টা’।

ইয়েলস্টিনের আইন অবশ্য সাধারণ মানুষের অধিকারকে গুরুত্ব দিলেও পুতিনের নতুন আইন এর পরিসর আরও বড় করে ফেলে। পুতিন পদ্ধতিগত মানুষ। নিজের শাসনামলে কেজিবি ও এফএসবির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তিনি সব সময় সক্রিয়। এই দুটো সংগঠনেই তার সর্বাধিক বিনিয়োগ। সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের ক্ষেত্রে রাশিয়ার অবস্থানই এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে রাশিয়ান গুপ্তচর বাহিনীর সদস্যদের ঠান্ডা মাথার খুনি হিসেবেই বেশি ভাবা হয়। এফএসবি যেকোনো আক্রমণের পর তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় দ্রুত সন্ত্রাসী সন্দেহভাজন এমনকি অভিযুক্তদেরও খুঁজে বের করে। তাদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার করার পর স্বীকৃতি আদায় করা হয়। সম্প্রতি রাশিয়ায় আইএসআইএস-এর আক্রমণ মূলত রাশিয়ান গুপ্তচর বাহিনীর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গতিবিধির প্রতিবাদ হিসেবেই মনে করছেন অনেকে।

পুতিন কট্টরপন্থি অবস্থান সত্ত্বেও কোনো হামলা ঠেকাতে পারবেন না। এফএসবি বিভিন্ন সময়ে তথ্যপ্রাপ্তি এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জঙ্গিবাদ দমনে পুরোপুরি সফলতা দেখাতে পারেনি। এক এজেন্সির সঙ্গে আরেক এজেন্সির সহায়তা বাড়ানোর বিষয়েও তাদের যেন মনোযোগ নেই। সাধারণ মানুষের কাছেও তারা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার এই ঘটনায় রাশিয়া সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে অপ্রিয় সত্য প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারলে অনুসন্ধানের কাজটি কঠিন হয়ে পড়বে। রাশিয়ার মতো দেশে রাজনৈতিক আলোচনা স্পর্শকাতর বলেই বিবেচিত। এই মুহূর্তে রাশিয়ায় অনেকেই আতঙ্কিত অবস্থায়। কিন্তু তারা তাদের নেতাকে সরাসরি তাদের অবিশ্বাসের কথা জানাতে পারবে না। বরং সরকারি তথ্যের সঙ্গে তারা একমত পোষণ করার ভান করে যাবেন। ২২ মার্চ ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে অনেক ষড়যন্ত্র তত্বের কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে রাশিয়ানরা বুঝতে পেরেছে, পুতিন এত সহজে দমে যাবেন না। নিজের দেশের মানুষের ওপর অপরাধ-নির্যাতন করে হলেও তিনি নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করবেন। ২২ মার্চের হামলার পর জঙ্গিদের শনাক্ত করার জন্য তার বিগ ব্রাদার টেকনোলজি আবার ব্যবহৃত হচ্ছে।

  • দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা