× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বাধীনতার মাস

সরল স্বপ্ন, সবল সমাজ

অজয় দাশগুপ্ত

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৪ ১১:০১ এএম

অজয় দাশগুপ্ত

অজয় দাশগুপ্ত

আমাদের স্বাধীনতার মাস মার্চ। মার্চ মাস হলো আমাদের গর্ব আর ভালোবাসার মাস। একাত্তরের মার্চ মাস দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। সেই বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে অনেক তফাত। সেই মাসটি ছিল বুক ভরা বাঙালি হওয়ার মাস। বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্য আমাদের প্রাণ ও হৃদয় আকুল হওয়ার মাস। আজকের বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। এক সময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উপহাস করা হতো এবং যে আমেরিকা তার সর্বশক্তি দিয়ে স্বাধীনতাকে বিপন্ন করার চেষ্টা করেছিল, সেই আমেরিকা এখন কুপোকাত। দেশ এগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রজ্ঞা আর শক্তি দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আজ যে অবস্থানে আমরা তা এককালে কল্পনাও করা যেত না। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এখন অনেক উঁচুতে। কারও সাধ্য নাই আমাদের অর্জনকে চোখ রাঙাতে পারে। এমন একটা শক্তিশালী অবস্থানে থাকা স্বদেশ আজ সবার গর্ব।


বাংলাদেশ খেলাধুলা ও আর্থিক উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে। এশিয়ার দেশগুলোর ভেতর বাংলাদেশ এবং তার অর্থনীতি সবার প্রশংসা কুড়িয়ে চলেছে। এত অর্জনের পরও সমাজ আর সংস্কৃতির বেলায় আমরা সেভাবে এগোতে পারছি না। এর দায় আসলে কার? গোড়াতেই আমরা সমাজের নানাদিকে তাকালে দেখব অসংগতি আর বৈষম্যে ভরা। এমন তো কথা ছিল না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রতিটি ভাষণে বারবার মানুষকে মানুষ হওয়ার ডাক দিয়ে গেছেন। এই মানুষ হওয়ার তালিকাটি একটি শুদ্ধ তালিকা। যেখানে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ আর ধর্ম বা সম্প্রদায়গত বিভেদ থাকার কথা না। এগুলো তিনি ভয়ংকভাবে ঘৃণা করতেন। তাঁর কন্যাও তাই মানেন। কিন্তু যে সরকারি দলের চেহারা আমরা দেখছি তাতে নেতাদের ভেতর এই দায়িত্ববোধ কম। অথচ আওয়ামী লীগই পারে সমাজকে আরও বিকশিত এবং সংহত ও স্থির রাখতে। দায়িত্বশীল অনেকেরই সময় নাই সমস্যার গভীরে যাওয়ার। স্বদেশের বড় যেকোনো প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালেই চোখে পড়বে অনিয়ম।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেহারাও ভয়াবহ। ভয়াবহ সব কেলেঙ্কারি জাতিকে এখন অবশ করে ফেলেছে। উপাচার্য বা তেমন পদের মানুষজনের কেলেঙ্কারির খবর যদি সত্য হয়, তো কপালে ভয়াবহ দুর্যোগ নামতে বাধ্য। প্রায় জায়গাতেই আমরা আর্থিক কেলেঙ্কারির চূড়ান্ত নগ্ন রূপ দেখি। তার চেয়েও ভয়াবহ ইদানীংকালের ছাত্রছাত্রীদের আত্মহত্যার খবর। সমাজ কোনোভাবেই এটা সমর্থন করে না। বাচ্চারা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় পড়াশোনা করার জন্য। এই সেদিনও আমাদের দেশের বিদ্যাপীঠগুলো ছিল শান্তি আর প্রগতির দুর্গ। সেই প্রগতি এখন প্রশ্নের মুখোমুখি। কে কোন পোশাক পরবে, কোন অলংকার পরিধান করবে, এটা সমাজ বা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করত না। এটা ছিল ব্যক্তিস্বাধীনতা। সেই পাট চুকে গেছে। তার চেয়েও ভয়াবহ যন্ত্রণার নাম যৌনতা।

যৌনতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় এক আশ্রয়। রিল, ফটো, টিকটক, ইউটিউব যে নামেই ডাকা হোক না কেন সব মিলিয়ে ওই যৌনতারই রমরমা। তরুণ-তরুণীদের মনোজগৎ পড়ার বা জানার ইচ্ছে নাই কারও। মা-বাবা, ভাই-বোন সবার আছে আলাদা এক বায়বীয় জগৎ। সে নেশায় বুঁদ মানুষের স্বপ্ন, সাধ সব আবর্তিত হচ্ছে ডিজিটাল মিডিয়া ঘিরে। আমরা যারা দেশের বাইরে বসবাস করি, যারা মনে করি বা বিশ্বাস করি যে, আমরা গণতান্ত্রিক দেশ ও উদার সমাজের অধিবাসী, আমরা কিন্তু এমন কোনো বাস্তবতা দেখি না। অস্ট্রেলিয়ার বাঙালি তরুণ-তরুণীদের ভেতরও নেই এই প্রবণতা। তারা আজকাল ফেসবুক ব্যবহারও কমিয়ে দিয়েছে। ইনস্টাগ্রামে বিজনেস বা সোশ্যাল কাজকর্ম সারাই তাদের ব্রত। আমাদের বেলায় ঠিক তার উল্টো। অস্বীকার করি না ফেসবুক বহু অসাধ্য সাধন করছে। কাউকে কাউকে এমপি পর্যন্ত বানিয়ে ছেড়েছে। এর প্রভাবে অনেক অনিয়ম হটতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এটাও মানতে হবে, এর ভয় দেখিয়ে এর মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে অনেকের জীবন নরক বানিয়ে ছাড়ছে কেউ কেউ। আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ পরিণতিও মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। এর প্রতিরোধ দেখি না। কেউ মারা না যাওয়া পর্যন্ত এর কোনো খবর পাওয়া যায় না।

অবন্তিকা বা সাদি মহম্মদরা সামাজিক অনিয়মের শিকার। সাদি মহম্মদ দেশবরেণ্য একজন শিল্পী হওয়ার পরও যে অভিমান নিয়ে মারা গেলেন সমাজ বা সংস্কৃতি তার কোনো খবর রাখত না। কেউ জানতেন না এমন একটা বেদনার গল্প? এটা যদি মানতেই হয় তাহলে এটাও মানতে হবে সমাজ এখন বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ। যে দ্বীপের বাসিন্দারা একসঙ্গে থাকে, ঘুমায়, খায়দায় কিন্তু কেউ কারও খবর রাখে না। যৌন হয়রানির বিষয়টি নতুন কিছু না। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে এসব ঘটনা নতুন ঘটছে না। অথচ আমরা কথা বলি শুধু তখনই যখন কেউ নাই হয়ে যায়। একজন শিক্ষক একজন অভিভাবক। আমাদের সমাজ একসময় জানত শিক্ষক মানে মা-বাবার মতো নির্ভর করতে পারা কেউ। সে জায়গাটা আজ ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। শিক্ষকের তাড়নায় ছাত্রীকে মরতে হয়, এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে? যেসব কথাবার্তা আর ঘটনা বেরিয়ে আসে তাতে লজ্জা-শরমে মুখ দেখানো ভার। অথচ যারা করে বা করেই চলেছে তাদের কোনো বিকার নাই। এবং আমরা সবাই জানি আরও কোনো নতুন ঘটনা আছে, যা কিছুদিন পর বেরিয়ে আসবে। এর নাম বিকৃতি। এর মানে সমাজ এখন উন্নতি অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। তার যাত্রা উল্টো পথে।

স্বাধীনতার এই মাসে বাঙালি নানাদিক থেকে এগোলেও তার সমাজ আর সংস্কৃতি বাধা পড়ে গেছে ডিজিটাল নামের ফাঁদে। আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন আর সাধনা এখনও হারিয়ে যায়নি, কিন্তু অবলুপ্ত হওয়ার পথে। ধর্ম সংস্কৃতি আনন্দ-বিনোদন শিশু, তারুণ্য সবার মনে একটাই প্রশ্ন, আমরা কি এ সমাজ চেয়েছিলাম? না আমরা তা চাইনি। আমরা সহজ সাধারণ আর মায়ার এক সমাজ চেয়েছিলাম। যে সমাজে মানুষের চিন্তা হবে, উচ্চ জীবন হবে সাধারণ ও সরল। স্বাধীন জাতির এই স্বপ্ন কি অধরাই থেকে যাবে? দায়টা শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একার নয়। অন্য দায়িত্বশীলরা যেন তাদের দায় ও দায়িত্ব ভুলে না থাকেন। 

  • সিডনি প্রবাসী লেখক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা