প্রজন্মের ভাবনা
মো. মিনহাজুর রহমান মাহিম
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১২:৩৪ পিএম
বিশ্বব্যাংকের
তথ্যানুসারে, পরিবেশ দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
২০২৩ সালের একিউআইয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাসের
দেশ এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে যথাক্রমে পাকিস্তান ও ভারত। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার
বেঁধে দেওয়া মানের চেয়ে ১৫ গুণের বেশি পিএম পাওয়া গেছে বাংলাদেশের বাতাসে। ধুলো, ধোঁয়া,
ছাই, ধাতবকণা, জৈবপদার্থ, বনভূমি দাহ, আগ্নেয়গিরি, ঝড়, ধুলোঝড়, যানবাহন, কলকারখানা,
বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইটভাটা, কৃষি, নির্মাণকাজ ইত্যাদি কারণে বাতাসে পিএম বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে
বায়ুদূষণের অসংখ্য কারণ রয়েছে। ঢাকা মহানগরীর ৮০ শতাংশ কলকারখানাই পুরোনো, যার অনিয়ন্ত্রিত
ধোঁয়া বায়ুদূষণের প্রত্যক্ষ কারণ। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া
তথ্যানুযায়ী দেশে প্রায় ৮ হাজার ইটভাটা রয়েছে, যার ৬০% অবৈধ। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার
কলকারখানা রয়েছে। অধিকাংশ কলকারখানায় পুরোনো, অনুন্নত প্রযুক্তি ও নিম্নমানের জ্বালানি
ব্যবহারের কারণে নির্গত ধোঁয়া ও ধূলিকণা, বিভিন্ন রাসায়নিক গ্যাস যেমন কার্বন ডাইঅক্সাইড,
কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদি বায়ুদূষণের জন্য
দায়ী। অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজের কারণে নির্মাণ সাইট থেকে ধুলোবালি, ভবন ভাঙার ধুলো
মারাত্মকভাবে দূষণ সৃষ্টি করে। কাঠ, কয়লা, কেরোসিন ইত্যাদি অপরিমার্জিত জৈব জ্বালানি
ব্যবহার, গ্রামাঞ্চলে জৈব জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বায়ুদূষণ সৃষ্টি করছে।
পানিদূষণ পরিবেশদূষণের
একটি অন্যতম প্রধান কারণ। কৃষি ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অপরিকল্পিত ব্যবহারে
কীটনাশক, সার, রাসায়নিক উপাদান ও কৃষি ক্ষেত্র থেকে বর্জ্য পানিতে মিশে দূষণ করছে।
এ ছাড়া পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থার অভাব, অপরিকল্পিত ও অপরিচ্ছন্ন শহরাঞ্চল, কঠিন বর্জ্য
পানিতে ফেলা, যানবাহনের তেল ও রাসায়নিক পানিতে মিশে যাওয়া, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও
উত্তোলনের ফলে পানিদূষণ, আর্সেনিক দূষণ, জলাভূমি ভরাট, পানি ব্যবহারের অসচেতনতা, নৌযানের
ময়লা-আবর্জনা এবং নদীর পাশের বাজারের বর্জ্য নদীতে ফেলা ইত্যাদি কারণে মারাত্মকভাবে
পানিদূষণের সৃষ্টি হয়। পানিদূষণের কারণে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ যথা ডায়রিয়া, কলেরা,
টাইফয়েড এবং দূষিত পানিতে এডিস, অ্যানোফিলিস মশার জন্ম হয়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া,
ফাইলেরিয়াসহ নানা মশাবাহিত রোগ হয়ে থাকে। এমনকি দূষিত পানি পানের ফলে জন্ডিস হওয়ারও
আশঙ্কা রয়েছে। পানি দূষণের কারণে জীববৈচিত্র্য হ্রাস, জলজ প্রাণীর বিলুপ্তি, কৃষি উৎপাদন
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্টসহ আরও নানা ক্ষতি
হয় এবং হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পরিবেশদূষণের
আরেকটি অংশ হলো শব্দদূষণ, যা ক্রমবর্ধমান সমস্যা। শব্দদূষণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। নানা
কারণে শব্দদূষণ হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাটিদূষণের ফলে পরিবেশের মারাত্মক
ক্ষতিসাধন হয়। মাটিদূষণের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং ফসল উৎপাদন কমে যায়। এ ছাড়া
মাটিদূষণের কারণে দূষিত মাটিতে উৎপাদিত খাবার মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ।
মাটিদূষণের ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস, পানিদূষণসহ পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হয়। পরিবেশ
আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন, পরিবেশের ক্ষতি নিজের ও আশপাশ সবার ক্ষতি। তাই পরিবেশ
রক্ষায় ও দূষণ রোধে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিতে পারে।
শিক্ষার্থী, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,
কুষ্টিয়া