প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:১৫ পিএম
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:০৭ এএম
সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা-সিবিসাসের বার্ষিক সাধারণ সভা ও প্রথম সম্মিলন ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি। প্রবা ছবি
‘নবীন ও তরুণদের কাছ থেকে অনেক কিছু পাওয়ার আছে, শেখার আছে। কেননা মুক্তিযুদ্ধে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ থাকলেও সবচেয়ে বেশি ছিল তরুণ। তারাই যুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছে। তাদের নেতৃত্বেই দেশ এগিয়ে গেছে। পরবর্তীতে নব্বই দশকের আন্দোলনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণসমাজ। সঙ্গে ছিল রাজনৈতিক দলগুলো।’
শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানী ঢাকার স্কাই সিটি হোটেলে সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা-সিবিসাসের বার্ষিক সাধারণ সভা ও প্রথম সম্মিলন ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি এসব কথা বলেন।
সিবিসাসের সভাপতি আজিজুল পারভেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি ও সাংবাদিক শামীম আজাদ, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, ডেইলি অবজারভারের কনসালট্যান্ট ফারুক আহমেদ, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মুদ্রণ সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল), সুনামগঞ্জের সমাজসেবক সেলিম আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে টেলিফোনে যুক্ত হন সিলেট-৩ (ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা হয়। সম্মিলন শেষে সংগঠনটির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং আগামী এক বছরের জন্য ১৯ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০২৩-২৪ মেয়াদের জন্য কণ্ঠভোটে স্বপ্ন বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ সিবিসাসের নতুন সভাপতি ও চ্যানেল এস-এর বার্তাপ্রধান শংকর মৈত্র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুস্তাফিজ শফি বলেন, ‘দেশ উল্টোপথে হাঁটছিল। যুদ্ধাপরাধীরা মামলায় পার পেয়ে যাচ্ছিল। আর ঠিক সেই সময় গণতন্ত্র মঞ্চের শাহবাগের আন্দোলনের কারণে তাদের বিচার হয়েছে, ফাঁসি হয়েছে। তরুণরাই সমাজকে পাল্টাতে পারে। সততাই শক্তি। অনেক সংগঠন নিজেদের আত্মপ্রচারে মগ্ন, সিবিসাস সেটি থেকে মুক্ত। সততার শক্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
সম্মিলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কবি ও সাংবাদিক শামীম আজাদ বলেন, ‘জবা যখন ফোটে তখন খুব ভালো লাগে। আমাদের জবার মতো ফুটতে হবে। মানুষের মানবিক শক্তিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। সিলেটে নদীভাঙন, বন্যা, নদীভরাটসহ অসংখ্য সমস্যা রয়েছে। সম্মিলিতভাবে কাজ করে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মায়ের ভাষাকে ভালোভাবে শিখতে সবচেয়ে বড় অবহেলা রয়েছে। আমরা ইংরেজি শিখি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও চাকরির জন্য, আরবি শিখি স্বর্গে যাওয়ার জন্য। অথচ মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিই না। এই মাতৃভাষাকে ভালোবাসতে হবে।’
সরকারি উন্নয়ন বাস্তবায়নে সাংবাদিকদের পাশে থাকার আহ্বান জানান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান। বলেন, ‘সিলেটকে আধুনিক সিলেট গড়ে তুলতে চাই। সরকারি উন্নয়নে সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
রিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘একতার একটি শক্তি আছে। মানুষ সংগঠিত হতে পারলে অনেক ভালো কাজ করতে পারে। তা ছাড়া বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সিলেটের অবদান হিসেবে তারা নিজেদের প্রাপ্যতা পান না। সিলেটবাসী প্রবাসী আয়ের বাইরেও রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে যে অবদান রাখছেন তাতে আরও মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা সিলেটের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন।
শফিউল আলম নাদেল বলেন, ‘বিভিন্নভাবে সিলেট পিছিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। সড়ক যোগাযোগ, বিমান চলাচলে সমস্যা। বিমানের টিকিটের মূল্য ৭ হাজার টাকার ওপর হয়ে যায়। এটি এক ধরনের বৈষম্য।’
অধ্যাপক ডা. মাহতাব আল মামুন স্বপ্নীল বলেন, ‘সিলেট থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা শুরু হয়। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে।’
সিবিসাস কেন গঠন করা হলো সেই প্রেক্ষাপট এবং সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন সভাপতি আজিজুল পারভেজ। বলেন, ‘পারস্পরিক সম্পর্ক, পেশাগত উৎকর্ষ এবং পেশার মাধ্যমে নিজ এলাকার মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে ২০২১ সালে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। এখন পর্যন্ত সাংগঠনিক ভিত্তি ৮৭ জন সদস্য।
‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রসারের লক্ষ্যে ঢাকার সাংবাদিকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পুরস্কার দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। সৎ সাংবাদিকের জীবন-মানের স্বাচ্ছন্দ্ব্যের জন্য একটি কল্যাণ ফান্ড তৈরির চিন্তাও আমাদের আছে।’
সমাজসেবক সেলিম আহমেদ বলেন, ‘রাষ্ট্র গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বন্যার সময় যেভাবে সাংবাদিকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তা অসাধারণ। তারা বুকপানিতে নেমে ছবি তুলেছেন। দুঃখী মানুষের কথাগুলো তুলে এনেছেন।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ঝর্ণা মনির উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মহিউদ্দীন পলাশ। তা ছাড়া সিলেটের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।