গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লবণ পানির ব্যবহারে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে

সারা দেশে মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ পাইপ ওয়াটার সাপ্লাইয়ের সুবিধা ভোগ করছে আর নিরাপদ পানির সুবিধা আছে ৬০ শতাংশ মানুষের। এ ছাড়া পানির লবণাক্ততা ২৬ মিলিয়ন মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লবণ পানি ব্যবহারের কারণে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) ‘কমিউনিটিভিত্তিক জলবায়ু সহনশীলতা ও নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচি (ক্রিয়া)’ প্রকল্প আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান।

আলোচনা শেষে এমজেএফেরর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম অতিথিদের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখান। প্রদর্শনীর বিষয় ছিল ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর বিপন্নতা।’

প্রবন্ধে হাসিন জাহান বলেন, ‘পানি সংগ্রহ থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত নারীদের সম্পৃক্ততা বেশি থাকার কারণে বৈশ্বিকভাবে তাদের ‘ওয়াটার ম্যানেজার’ বলা হয়। কিন্তু পানি সংগ্রহের কাজে অতিরিক্ত সময় দিতে গিয়ে নারীরা আয় বৃদ্ধিমূলক ও কৃষি কাজে অংশ নিতে পারে না। এতে আর্থিকভাবে তারা পিছিয়ে থাকছেন।’

ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার বালা বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার পানির সমস্যার দিকে ওয়াসার তাকানোর সময় এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির প্রাপ্যতার অভাব রয়েছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের সময় পানি সংকট আরও বেড়ে যায়। প্রাকৃতিকভাবে এই সংকট মোকাবিলার চেষ্টা চলছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। ওয়াসা ঢাকাকেন্দ্রিক হলেও আমার মনে হয় এখন আমাদের উপকূলীয় এলাকার পানির সমস্যার দিকে তাকানোর সময় এসেছে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ-এর নির্বাহী পরিচালক এসএমএ রশিদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা দেবনাথ, সুইডেন দূতাবাসের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. রবিউল আলম।

ক্রিয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকা থেকে পানি নিয়ে ভুক্তভোগী দুজন নারী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তাদের সমস্যার কথা জানান। পানির অপ্রাপ্যতা, সংগ্রহ করার জটিলতা, অনিরাপদ পানি ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব, লবণাক্ততার কারণে পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরেন।

সভাপতির বক্তব্যে শাহীন আনাম বলেন, ‘পানির যোগান দিতে গিয়ে নারীরা নানাভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। সুপেয় পানি একটি মানবাধিকার। আমরা পানি নিয়ে নানা সংকটের কথা আলোচনা করি কিন্তু নারীদের দুর্ভোগের বিষয়টি অত গুরুত্ব পায় না। এসব সমস্যার সমাধানে চাই সামষ্টিক উদ্যোগ। সরকারের একার পক্ষে সব সম্ভব নয়। তাই আমাদের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’