তেভাগা আন্দোলনের নেতা অমল সেনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেতা ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কমরেড অমল সেনের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (মঙ্গলবার)।

এদিন রাজধানীর পল্টনে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি। এর মধ্য দিয়ে অমল সেনের মৃত্যুবার্ষিকীর কার্যক্রম শুরু করেছে দলটি। অমল সেনের প্রতিকৃতিতে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, কামরুল আহসান, কেন্দ্রীয় নেতা তপন দত্ত, করম আলী, দীপংকর সাহা দিপু, আমিরুল হক আমিন, জাকির হোসেন রাজু, মোস্তফা আলমগীর রতনসহ আরও অনেকে।

এরপর শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শিরিন আক্তার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন, আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতারা। এ ছাড়াও ওয়ার্কার্স পার্টির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও রাজনৈতিক-সামাজিক প্রতিষ্ঠান অমল সেনের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

অমল সেন ব্রিটিশ ভারতে ১৯১৪ সালে বর্তমানের নড়াইল জেলার আফরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাবস্থায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে যুক্ত হয়ে ‘অনুশীলন’ সমিতির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৯৩৩ সালে খুলনার বিএল কলেজে রসায়ন শাস্ত্রে পড়া অবস্থায় অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন এবং ওই বছরই জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

১৯৩৫ সালে অমল সেন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৪৬ সালে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি পুরুষ পরিচিতি লাভ করেন সবার ‘বাবুদা’ হিসেবে। ১৯৪৮ সালে যশোরে পার্টির সম্পাদক নিযুক্ত হন। সদ্য ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর পাকিস্তান মুসলিম লীগ সরকারের রোষানলে পড়েন এবং ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কারারুদ্ধ থাকেন। দুই বছরের জন্য বাইরে থাকলেও আবারও ১৯৫৮ সালে গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত জেলে আটক থাকেন অমল সেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় মুক্তি লাভ করলেও আবারও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে জনগণ জেল ভেঙে অমল সেনকে মুক্ত করে। আজীবন বিপ্লবী, অকৃতদার, নিঃস্বার্থ বিপ্লবী অমল সেন ১৯৭১ সালে জেলমুক্ত হয়ে ভারতে চলে যান এবং তখন বিভ্রান্ত বাম আন্দোলনের কর্মীদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করতে ‘খোলা চিঠি’ দিয়ে আহ্বান জানান। ভারতে বসেই তিনি এ দেশের বিপ্লবীদের ঐক্যবদ্ধ করার অব্যাহত প্রচেষ্টা চালান এবং ‘কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সমন্বয় কমিটি’ গড়ে তোলেন।

স্বাধীনতার পর অমল সেন ১৯৭২ সালে পিকিং-মস্কো ধারার বিপরীতে লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলেন এবং তার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অমল সেনের হাতে গড়া লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নাম ধারণ করে। তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন।

অমল সেন ২০০৩ সালে ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

রাজনৈতিক জীবনে কমরেড অমল সেন তার সময়ে বাম-ডান বিচ্যুতির বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট কর্মীদের সমাজ বিপ্লবের দিশা দেখিয়েছেন ‘জনগণের বিকল্প শক্তি’ নামক চিন্তাসূত্র দিয়ে। সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পূর্বেই ১৯৭৭ সালে তিনি তার মূল্যবান চিন্তা নিয়ে প্রবন্ধ লেখেন ‘বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সমস্যা প্রসঙ্গে’। পরে সেই চিন্তার অনেক যথার্থতাও খুঁজে পাওয়া যায়। কমিউনিস্ট পার্টি এবং জীবনবোধের অনুশীলনে ‘কমিউনিস্ট জীবন ও আচরণ রীতি প্রসঙ্গে’ বইটি এ দেশের কমিউনিস্টদের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য পুস্তক। ‘নড়াইল তেভাগা আন্দোলনের সমীক্ষা’ নামক প্রবন্ধেও তেভাগা আন্দোলনের মর্মবস্তু তুলে ধরেছেন অমল সেন।