বরিশাল সিটি নির্বাচন
মঈনুল ইসলাম সবুজ, বরিশাল
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫৪ এএম
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১১:০৬ এএম
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী মে থেকে জুনের মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমন ঘোষণার পর আলোচনা শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে। তবে বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণায় ঢিলেভাব দেখা গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেও। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিকল্প দেখছে না মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ। তবে নগরবাসী বলছেন, পরিবর্তন দেখতে চান তারা।
ক্ষমতাসীনদের বাইরে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, বাসদ ও সিপিবি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানা গেছে। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে। এ সুবাদে দলে তার জোরালো প্রভাব রয়েছে। তার বাইরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বর্তমান মেয়রের চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের নামও সামনে আসছে।
মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মাহমুদুল হক খান মামুন ইতোমধ্যেই মেয়র পদে প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন। নৌকা প্রতীক পেতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এর আগেও একবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।
খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, তার বাবা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। তিনি শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মানুষের জন্য কাজ করছেন। তাই আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
অন্যদিকে এবারও মনোনয়ন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তবে তার মেয়াদকালের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। নগরীর উন্নয়নে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেননি, এমন আলোচনাও রয়েছে ভোটারদের মধ্যে।
সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, তাদের এলাকায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। টিয়াখালী এলাকার বাসিন্দা মারুফ হোসেন বলেন, পারিবারিক অবস্থান ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আত্মীয়তার সুবাদে বর্তমান মেয়রের পক্ষে বরিশালকে একটি স্মার্ট নগরীতে পরিণত করার সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের প্রত্যাশা পরিবর্তন, যার কাছে গিয়ে মানুষ কথা বলতে পারবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলের অভ্যন্তরে অনেকেই পরিবর্তন চান। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সাদিকের নির্বাচিত হওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এ বিষয়ে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনকল, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেও কোনো সাড়া দেননি তিনি।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেছেন, সাদিক আবদুল্লাহকে নগরীর টেকসই উন্নয়নের রূপকার বলা যায়। তার আমলে গ্যারান্টিসহ সড়কের উন্নয়ন হয়েছে, যা অন্য কোনো মেয়রের আমলে হয়নি। নগরবাসীর সঙ্গে তার যে আত্মার টান তৈরি হয়েছে সেটি হিরণের পর আর কেউ পারেনি। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগও অপাতত সাদিকের বিকল্প হিসেবে অন্য কাউকে নিয়ে ভাবছে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, তাদের দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।
জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হিসেবে এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দলটির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস। চারবারের কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট কেএম মুর্তজা আবেদিনও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, এবারও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করি। মনোনয়ন পেলে মাঠে তৎপর থাকব, যাতে বিনা ভোটে কিংবা ভোট চুরি করে কেউ নির্বাচিত হতে না পারে।
ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী। গতবার পরাজিত হলেও মাঠ ছাড়েননি তিনি। বরং নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকা চষে বেড়িয়েছেন।
মনীষা চক্রবর্তী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বরিশাল ছাড়িনি। নগরবাসীর স্বার্থে সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। এ বছরও সাধারণ মানুষের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেব। ভোট চুরি করতে দেব না। মাঠে লড়াই করব। মানুষের রায় যার পক্ষে যাবে তিনিই মেয়র হবেন।
বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সহকারী সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম বকির বলেন, সব সিটিতেই তার দলের প্রার্থীরা মাঠে থাকবেন। তবে কোন সিটিতে কাকে প্রার্থী করা হবে, সেটি এখনও ঠিক হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে।