প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:১৪ পিএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:১৭ পিএম
প্রথম আলো আওয়ামী লীগকে শত্রু ভাবে বলে মনে করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া সংবাদমাধ্যমটি ‘প্রভুদের’ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য জাতির সামনে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন ও উস্কানি দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় ডিজিটাল মাধ্যম এখন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
শনিবার (১ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দলটির সভাপতি-সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথ সভায় এসব অভিযোগ করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাংবাদিক বন্ধুগণ, সাংবাদিকরা আমাদের শত্রু নয়। কিন্তু প্রথম আলো আপনাদের সঙ্গে শত্রুতা করছে। বিএনপিকে আমরা ভাবি প্রতিপক্ষ, বিএনপি আমাদের ভাবে শত্রু। প্রথম আলো আমাদের শত্রু ভাবে। প্রত্যেকের সম্পাদকীয় পলিসি আছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে শত্রুতা, যেটা বিএনপির রাজনীতি তারা সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে আজকের বাস্তবতা।
বিশ্বের প্রতিটি দেশেই আমরা দেখেছি স্বাধীনতা দিবসের দিন সে দেশের গণমাধ্যম অনুপ্রেরণামূলক বাণী দিয়ে উৎসাহ করে। প্রথম আলো তাদের প্রভুদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য জাতির সামনে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে, তরুণ প্রজন্মকে হতাশা ও উস্কানি দেওয়ার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ করে মনে হয় ভুল করলাম’
মন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে অপপ্রচার, কুৎসিত প্রচারণা, গালিগালাজ করা হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে মনে হয় আমরা ভুল করে ফেললাম, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে।’
‘ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়ে কী করব’ গণমাধ্যমের এমন শিরোনাম দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘একটি পত্রিকার এই সংবাদটি মিথ্যা, বানোয়াট, ষড়যন্ত্র, দুরভিসন্ধিমূলক; এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত ‘গ্রাফিক কার্ডে’ উদ্ধৃতি ও ছবি নিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম আলো সংবাদটি একজন দিনমজুরের উদ্ধৃতি দিয়ে যেভাবে প্রকাশ করেছে, দিনমজুরের বক্তব্য নাকি প্রথম আলোর দেওয়া, সেটি ভাবনার সময় এসেছে।
‘সাত বছরের একটি শিশুকে ১০ টাকা ঘুষ দিয়ে বক্তব্য নেওয়া সেটাই কি এই সাংবাদিকতা? ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, লক্ষাধিক মা ও বোনের সম্ভ্রম হারিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর এই সংবাদ জাতিসত্তার বিন্যাসের অপতৎপরতা নয় কি? স্বাধীনতা দিবস তরুণ প্রজন্মের দেশাত্মবোধ সৃষ্টির এক অনন্য দিন, অথচ এই দিনে পলিটিক্যাল সিলেক্টেড বিশেষ এক এজেন্ডা সেটিং এর উদ্দেশ্য এ সংবাদটি মহান স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার শামিল নয়?’
‘স্বাধীনতা দিবসে অর্জন নিয়ে তামাশা ভুল নয়, ফৌজদারি অপরাধ’
মহান স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রথম আলোর প্রকাশ করা প্রতিবেদনটি ভুল নয়, ফৌজদারি অপরাধ বলে দাবি করেছেন ওবায়দুল কাদেরের। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসের দিনে দেশের অর্জন, মর্যাদা নিয়ে তামাশা করা সাধারণ কোনো ভুল নয়। এটি একটি অনৈতিক কাজই নয়, ফৌজদারি অপরাধ। যেখানে সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত করার উস্কানি, ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্য করে দেশের একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। একটা দেশের কোনো বিবেকবান মানুষের না বোঝার কোনো কথা নয়। প্রথম আলোর সম্পাদক প্রকাশক কি দায় এড়াতে পারে? তারা কি তাদের এই গৃহীত অপরাধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন? ক্ষমা চেয়েছেন? কোনোটাই করেননি।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম আলো আর বিএনপি একে অপরকে সাপ্লিমেন্ট করে। টার্গেট শেখ হাসিনা, টার্গেট সরকার, টার্গেট জনগণ, টার্গেট আগামী নির্বাচন ভণ্ডুল করা। প্রথম আলো একেক দিন একেকজনের, একেকটা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করবে, তাদের সেই এজেন্ডা রয়েছে। মন্ত্রণালয়কে ব্যর্থ প্রমাণ করে রিপোর্ট করছে।’
‘এরা অত্যন্ত চতুর, এদের আন্তর্জাতিক লিঙ্ক অনেক শক্ত’
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রথম আলোর সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেখুন কী রকম ষড়যন্ত্র! নিউজ করা হয়েছে আজকে এই ঘটনায় একজন সম্পাদক এবং একজন রিপোর্টারের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় এবং সংস্থা থেকে যেসব রিপোর্ট এসেছে, প্রত্যেকে বলছে যে একে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরা অত্যন্ত চতুর। আন্তর্জাতিক লিঙ্ক এদের অনেক শক্ত। তাই এ খবর ছড়িয়ে দিয়েছে যে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য রিপোর্ট করায় এই পত্রিকার, এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য রিপোর্ট করার জন্য, টকশোতে অংশ নেবার জন্য সরকার কি একজন লোকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? তাহলে মিথ্যা সংবাদ আজকের সারা দুনিয়ায় রটানো হচ্ছে যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্যই রিপোর্ট করাতে এই সাংবাদিক, এই সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’
‘আমরাও দেখব, কারা এসে নির্বাচনে বাধা দেয়’
আগামী নির্বাচনে জিততে পারবে না জেনে বিএনপি ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে বলে অভিযোগ ওবায়দুল কাদেরের। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসবে না, নির্বাচন হতেও দেবে না– এমন ঘোষণা দিচ্ছে। আমরাও দেখব কারা এসে বাধা দেয়। আমরাও প্রস্তুত আছি।’
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তারা জানে আগামী নির্বাচনে তারা শেখ হাসিনার সঙ্গে পারবে না, শেখ হাসিনা জিতবে, আওয়ামী লীগ জিতবে। এজন্য তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। তারা আবার নাশকতা করবে, সন্ত্রাস করবে। তারা নিজেরাও নির্বাচনে যাবে না, নির্বাচন করতেও দেবে না। তারা নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে।
আমাদের হাতিয়ার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। শেখ হাসিনা আমাদের নেতা। তোমাদের নেতা নেই, আন্দোলনেও নেই, নির্বাচনেও নেই। নেতা ছাড়া আন্দোলন, নেতা ছাড়া নির্বাচন এটা কি হয়?’