× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ইসলামি দলগুলোর দিকে বিশেষ নজর আওয়ামী লীগের

দীপক দেব

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩ ০৯:৩৫ এএম

আপডেট : ২১ মে ২০২৩ ০৯:৩৬ এএম

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফাইল ফটো

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফাইল ফটো

তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এমন বাস্তবতায় বিএনপি বর্জন করলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক হয়ে ওঠে তার জন্য বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

শুধু দলের সংখ্যাই নয়, ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতেও নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে এমন দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করানোর জন্য নানা তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার ইসলামি দলগুলোর প্রতি বেশি নজর ও গুরুত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে।

বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে নেই এমন ইসলামি দলগুলোর কয়েকটির সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। ভোটের মাঠে পারস্পরিক যোগসূত্র কী হতে পারে সেসব নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও চলছে। তবে আওয়ামী লীগের একটি অংশ ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে একটি পৃথক জোট বা প্ল্যাটফর্ম গঠনের পক্ষে। দলের একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আগে থেকেই সুসম্পর্ক রয়েছে এমন কয়েকটি ইসলামি দল নিজেদের মধ্যে বৈঠকও করেছে। তবে আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, ইসলামি দলগুলো পরিবেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, রাজনীতির গতি-প্রকৃতি দেখেই তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে। ডিসেম্বরের শেষে অথবা আগামী জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এসব বিষয় আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন তারা। 

এদিকে ইসলামি দলগুলোর ভোটব্যাংক নিজেদের পক্ষে টানতে ও ধর্মীয় ইস্যুতে অপপ্রচারের জবাব দিতে আলেম-ওলামাদের মাঠে নামানোর অংশ হিসেবে আওয়ামী ওলামা লীগের সম্মেলন করেছে দলটি। প্রায় দুই যুগ পর শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সংগঠনের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে শুধু ইসলামি দল নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব দলের সঙ্গেই কথা বলা হচ্ছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বস্ত করা হচ্ছে দলগুলোকে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছে।

তাদের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের বর্তমান ও সাবেক নেতাদেরও কেউ কেউ তাতে উপস্থিত থাকছেন। তবে কৌশলগত কারণে বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা কথা বলা থেকে তারা বিরত রয়েছেন। তবে এটুকু জানা গেছে যে, ইসলামি দলগুলোর কয়েকটি আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে রয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাকের পার্টিকে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও এমনকি উপনির্বাচনেও অংশ নিতে দেখা গেছে। 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয় এরজন্য ১৪ দলীয় জোটের বাইরে আরও কিছু দলের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যদি আদর্শগত মিল থাকে, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের বিষয়ে যদি ঐকমত্য থাকে তাহলে একটা মহাজোট হতে পারে। তবে এসব বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্টভাবে বলার সময় আসেনি। 

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের অরেক নেতা বলেন, অনেকের (ইসলামি দল) সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা চাই, ইসলামি দলগুলো নিজেরাই আলাদা একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে নির্বাচনে আসুক। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে যা যা প্রয়োজন আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত- এমন বার্তা তাদেরকে দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪১টি। এর মধ্যে ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে ১০টি। এগুলো হচ্ছে— জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও খেলাফত মজলিস। একসময় নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে পাঁচটিই বিএনপির জোটে থাকলেও বর্তমানে বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

ভোটের রাজনীতিতে সব সময় সক্রিয় থাকে এমন দলগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত আন্দোলন। এ ছাড়া ধর্মীয় দলগুলোর মধ্যে সরকারের সঙ্গে আছে জোটের শরিক তরীকত ফেডারেশন। জোটের বাইরে ইসলামিক ফ্রন্ট ও জাকের পার্টিও আপাতদৃষ্টিতে সরকারের দিকেই ঝুঁকে আছে। আর কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বারবার রাজনীতি থেকে দূরে থাকার কথা বললেও সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতা বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলের সঙ্গে রয়েছেন।

সংগঠনটি যেন বিএনপির সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত না হয়, সেই চেষ্টা শুরু থেকেই চালানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। সরকারের সঙ্গে এক ধরনের ‘সুসস্পর্ক’ বজায় রাখার শর্তে সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে জামিন দেওয়া হয়েছে বলেও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো সরকারের সঙ্গে হেফাজতের এই সখ্য ভালোভাবে নেয় না।

চলছে নতুন জোটের প্রক্রিয়া : আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এমন অন্তত ১০টি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিজেদের মধ্যে পৃথক জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে, জোটের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর একমাত্র নিবন্ধিত দল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এই প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। জোটের দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট (মিছবাহুর রহমান চৌধুরী), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভাণ্ডারী), ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টি (এম এ আউয়াল), কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টি (ফারহানাজ হক), আশেকানে আওলিয়া পরিষদ (আলম নুরী সুরেশ্বরী), গণ আজাদী লীগ (সৈয়দ শামসুল আলম হাসু তর্কবাগীশ-আতাউল্লাহ খান), জনদল (মাহবুবুর রহমান), তরিকত ফ্রন্ট (মুফতি মেহেদী হাসান), নেজামে ইসলাম পার্টি (মাওলানা হারিসুল হক)। 

প্রস্তুতি শুরু করেছে কয়েকটি ইসলামি দল : ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য দলীয় প্রর্থীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমমনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দলগুলোর মধ্যে থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলে জোট গঠনের ইচ্ছাও রয়েছে। 

এদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না সে বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। 

আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ওলামা লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাসী আলেম-ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে ধরনের অপপ্রচার চালানো হয় সে বিষয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে এই আলেম-ওলামারই ভূমিকা রাখবেন। একই সঙ্গে ইসলামের কল্যাণে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোও তারা তুলে ধরবেন। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা