জাগপা প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল। প্রবা ফটো
এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না বলে ফের মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত পরিষ্কার, স্পষ্ট, দৃঢ়ভাবে বলছি, এ সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তা ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।’
রবিবার (২১ মে) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সব ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সব জায়গায় একই অবস্থা। নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে একইভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনটা তারা তাদের মতো করেই করবে।’
শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতিচারণ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনও আপস করেননি তিনি। সবসময় দেশ ও জাতির জন্য সোচ্চার ছিলেন। তিনি কোনো সাধারণ নেতা ছিলেন না। তিনি সত্যিকার অর্থেই ত্যাগী, দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী নেতা ছিলেন। তার বাবা ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের অ্যাসেম্বলির স্পিকার। তিনি নিজেও সারাজীবন পরাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তার পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। তিনি নীতির প্রশ্নে কোনো আপস করেননি। তিনি ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা বা অর্থ লোভে গা ভাসিয়ে দেননি। তার রাজনীতির কোনো স্বার্থ ছিল না। তার কাছে দেশ ও দেশের মানুষ ছিল মুখ্য। আমরা তাকে রাজনীতিতে সম্মান করি। খালেদা জিয়া তাকে অনেক পছন্দ করতেন। আমরা উনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা কাজে লাগাতে চেয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা তাকে বেশি দিন পাইনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার যখন আন্দোলন দেখে, তখন তা অন্যদিকে প্রবাহিত করতে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। যে আওয়ামী লীগ বলেছিল, দেশ হবে সাম্যের, গণতন্ত্রের অথচ সেই আওয়ামী লীগ জোর করে অন্যায়ভাবে, একবার নয়, দু’দুবার ভোট না করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। যেখানে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কেউ ভোট দেয়নি। কেন্দ্রে শুধু কুকুর শুয়ে ছিল। সেজন্য প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান ২০১৪ সালের নির্বাচনকে বলেছিলেন, এটা একটা কুত্তা মার্কা নির্বাচন। আর ১৮ সালের নির্বাচন তো রাতে হয়েছে।’
সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। বলেন, দেশে এত মিডিয়া কেউ কি কিছু লিখতে পারে না। সাংবাদিকরা সব সময় ভয়ে থাকে। সাগর রুনি, হত্যার বিচার হয়নি এখনও। অনেক সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেক সাংবাদিক দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে জীবনের ভয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের কোনো সাংবাদিক নেতারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলেন না। কারণ চাকরি চলে যাবে। আরও নানা ভয়ে। এটা হবেই। কিন্তু সবাই মিলে যদি রুখে না দাড়ায়, প্রতিবাদ না করলে দেশ রক্ষা হবে না। মনে রাখতে হবে, এ আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগ যারা বাকশাল কায়েম করে মাত্র চারটি পত্রিকা রেখেছিল। আর সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল।’
বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে হামলা ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের সমালোচনও করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘গায়েবি মামলনার কথা বলতে বলতে আমরা হয়রান হয়ে গেছি। খুলনায় হামলা করে, শেষ পর্যন্ত আমাদের ১৩০০ নেতাকর্মী বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাহলে বোঝেন, এক মামলায় ১৩০০ আসামি হলে আরও মমলা আর কত আসামি করা হয়েছে? আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মী বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।’
ভালো মানুষ কখনও আওয়ামী লীগের থাকতে পারেন না বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, মাওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা কিন্তু আওয়ামী লীগে থাকতে পারেনি। আ স ম আব্দুর রব, ওবায়দুর রহমান, মাহমুদুর রহমান মান্না, আব্দুস সালাম আরও অনেক আওয়ামী লীগ করতেন। কিন্তু কেউ আর আওয়ামী লীগ থাকেননি। কারণ আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতির আখড়া তৈরি করে ছিল। মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ‘নিখিল বাংলা লুটপাট সমিতি’। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতিকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে। তারা দেশের স্বাধীনতার চেতনা তারা ধ্বংস করেছে।
সাম্য সৃষ্টি ও গণতন্ত্র পুনরদ্ধারের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আমাদের অটল থাকতে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেওয়া তাদের সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। তারা হচ্ছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী দল। এখন অনেক খেলা হবে। সবাই সতর্ক থাকবেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলছে। আমরা শেষ পর্যায়ে যাওয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে এই সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ দাবি আদায় করে দেবে না। আমাদের তরুণদের জেগে উঠে বিপ্লব করতে হবে। জাতিকে রক্ষা করা ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার দায়িত্ব তাদের।
সংগঠনের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম, জাগপার সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদত হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার আবিদুর রহমান, আ স ম মেজবাহউদ্দিন, অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবির, যুগ্ম সম্পাদক ডা. আওলাদ হোসেন শিল্পী, সাইফুল আলম, এনপিপির অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, যুব জাগপার সভাপতি আমির হোসেন আমু প্রমুখ।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.