× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আমুর বক্তব্যে তোলপাড়, কারণ জানতে চাইলেন শেখ হাসিনা

দীপক দেব

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩ ১০:২০ এএম

আপডেট : ০৮ জুন ২০২৩ ১০:৩৬ এএম

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। ফাইল ফটো

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। ফাইল ফটো

নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানের সম্ভাব্যতার কথা বলেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। তার এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ১৪ দলসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে।

আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার কারণ কী- তা আমির হোসেন আমুর কাছে জানতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সরকারের দুজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তাদের বক্তব্যে বলেছেন, এটি আমির হোসেন আমুর ‘একান্তই ব্যক্তিগত মত’। তাদের মতে, দল, সরকার ও জোটের মধ্যে এ নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। 

আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৪ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। জোটের মধ্যেও এ ধরনের কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের অবহিত করেছেন ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা। 

কারণ জানতে চাইলেন শেখ হাসিনা 

গতকাল বুধবার সকালে ছয় দফা দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দলীয় সভাপতি হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। সেখানে এ সময় দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমুও উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শেখ হাসিনা বক্তব্যের বিষয়ে তার কাছে জানতে চান বলে দলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে। 

এ সময় আমু দাবি করেন, বিষয়টি ভুলভাবে মিডিয়ায় উপস্থাপন করা হয়েছে। দলীয় সভাপতিকে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, এ বিষয়ে তিনি তার অবস্থান আবারও গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরবেন। এর পরপরই ছয় দফা দিবসের আলোচনা সভায় তিনি তার বক্তব্যে প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রসঙ্গত, বিএনপির সঙ্গে সংলাপ ও আলোচনার সম্ভাব্যতা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নাকচ করে আসছেন। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার ১৪ দল আয়োজিত এক জনসভায় আমু বলেন, ‘প্রয়োজনে আগের মতো জাতিসংঘের প্রতিনিধির মধ্যস্থতায় সংলাপ হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই, কোথায় ফারাক? সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনে বাধা কোথায়? কীভাবে সেটা নিরসন করা যায়। এটা আলোচনার মধ্য দিয়েই সুরাহা হতে পারে। অন্য কোনো পথে নয়।’

আমুর বক্তব্যে দলীয় প্রতিক্রিয়া

আমুর বক্তব্যের পরদিন গতকাল বুধবার ‘বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সিদ্ধান্ত হয়নি’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বাইরের বিষয়টা কেন বারবার আসে? জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে- এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি।’ 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমির হোসেন আমু আমাদের দলের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি তার ব্যক্তিগত। তার এই বক্তব্য নিয়ে আমাদের দলের ও সরকারের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি ১৪ দলের মধ্যেও কোনো আলোচনা হয়নি।’

এদিকে চলমান এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য না করলেও ‘সংলাপের বিকল্প দেখছেন না’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেছেন, ‘সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি সবকিছুই সংলাপের মাধ্যমে, আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে হবে।’

গতকাল বুধবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩ উদযাপন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি পপুলার পার্টি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নেই।’

গতকাল বুধবার এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কূটনীতিকদের ব্যাপক তৎপরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে নানা আলাপ-আলোচনা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এমন প্রেক্ষাপটে দল ও জোটের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া দলের কোনো নেতারই এমন কিছু বলা ঠিক নয়, যার ফলে নতুন করে বিতর্ক দেখা দেয়। কারণ একটি পক্ষ পরিস্থিতি ঘোলা করার জন্য ওত পেতে আছে।

১৪ দলের নেতারা যা বলছেন

এ প্রসঙ্গে ১৪ দলের বৈঠকে বা আগে-পরে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘তিনি (আমু) সম্ভাবনার কথা বলেছেন; এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।’ 

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ বিষয়ে ১৪ দলের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। এটি ১৪ দলের মতামত নয়। ১৪ দল মনে করে বাংলাদেশে এমন কোনো সংকট বিরাজ করছে না, যে জন্য বিদেশিদের পরামর্শ নিতে হবে।’ তিনি জানান, তাদের দল পূর্বের মতোই মনে করে, সংবিধান অনুযায়ী দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপের প্রয়োজন থাকলে নির্বাচন কমিশন সেটি করবে। তবে দলে দলে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই।

আবারও যা বললেন আমু

এদিকে দলীয় সভাপতির সঙ্গে কথা হওয়ার পর ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আমির হোসেন আমু। এ সময় তিনি সংলাপ ও আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আজকে আবারও নির্বাচনকে নিয়ে সেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কাউকে আপন করার সুযোগ নেই। কাউকে আহ্বান করা হয়নি। এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত নয় যে, বাড়িতে ডেকে এনে দাওয়াত করে খাওয়াব। আলোচনার কথা আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি। আলোচনার দাওয়াত কাউকে দেওয়া হয়নি।’

২০১৩ সালের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সেই দিনও জাতিসংঘের সামনে আলোচনায় তারা পরাজিত হয়েছিল। তখনও নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আজকেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না। আমরা ১৪ দলের পক্ষ থেকেও তাই বলেছি। ১৪ দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন তিনি করবেন এবং এই সংবিধানের আলোকেই সেটি হবে। এবং সবাইকেই সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণ নির্ধারণ করবে আগামী দিনে কার হাতে ক্ষমতা থাকবে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য বলা যায়, কিন্তু আলোচনার জন্য নয়।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা