প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩ ১৫:২৯ পিএম
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৫১ পিএম
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। প্রবা প্রতিবেদন
ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে সরকার আদালতকে প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন, গণতন্ত্রের জন্য মানুষের যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রাম স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য বিচার বিভাগকে দিয়ে আজকে চরমভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন করা হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষকে। প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বিচার বিভাগকে। এই বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে তারা জনগণের মৌলিক, গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক অধিকারগুলোকে পুরোপুরি হরণ করে নিচ্ছে।’
ঢাকা মহানগর বিশেষ দায়রা জজ আদালত গত বুধবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ (৩ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বাড়িয়ে হাইকোর্ট তা ১০ বছর করে দিল। অথচ একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসহ বহু নেতা জামিন পেয়েছেন, পরবর্তীকালে মামলা খালাস হয়ে গেছে এবং মন্ত্রী পদেও ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অথচ বর্তমান অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা ছিল। সেই মামলাগুলো একই ধরনের দুর্নীতির মামলা ছিল। সেটাও ওয়ান ইলেভেনে দেওয়া হয়েছিল। সেই মামলাগুলো কিন্তু তারা অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে বিচারক নিয়োগ দিয়ে খারিজ করে নিয়েছে। আসলে তারা আদালতকে ব্যবহার করছে অস্ত্র হিসেবে, তারা ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।’
বিরোধী মত দমনে গণমাধ্যমকেও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘এর আগে আমাদের এমপি ছিলেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাতক্ষীরার। তাকে ৭০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এর আগে ঈশ্বরদীতে আমাদের নেতা মিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। তাদের অপরাধ ২৫-২৬ বছর আগে পাবনায় একটা সংঘাত ঘটেছিল। এই ঘটনাগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে এমনভাবে তারা প্রচার করছে যেন এগুলো সত্য, বাকিগুলো মিথ্যা।’
চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের গতি টেনে ধরতেই বিএনপির নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন দলের এই জ্যেষ্ঠ নেতা। বলেন, ‘বর্তমান দেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাতে লাখ লাখ মানুষ গত কয়েক বছর ধরে নেমেছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, লাখ লাখ মানুষ রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছেন। তাদের লক্ষ্য একটাই গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সেই জন্য তারা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন চেয়েছে। ঠিক সেই সময়ে চলমান আন্দোলনের যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী অরাজনৈতিক মানুষ ডা. জোবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য- আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়া, তাকে ধীরগতি করা। যেখানে মামলাই হয় না, সেখানে সাজানো মামলা দিয়ে তাদের এই সাজা দেওয়া হয়েছে।’
এই রায়ের প্রতিবাদে শুক্রবার (৪ আগস্ট) সারা দেশে মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বাদ জুমা প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ এবং ঢাকা জেলার যৌথ উদ্যোগে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে দুপুর ২টায়।
সংবাদ সম্মেলনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,‘গত ২৯ জুলাই শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে, আমার মাথার আঘাতের চিহ্ন এখনও যায়নি। সরকার একটি অপরাধ করে হাজারভাবে তা ঢাকার জন্য নানা কাজ করে। কিন্তু সত্য সত্যিই থাকে, তাকে ঢাকা যায় না।’