× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বরিশাল-৫ আসন

চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্বের সুযোগ নিতে চান শামীম

মঈনুল ইসলাম সবুজ, বরিশাল

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৫৭ এএম

আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৪৩ পিএম

চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্বের সুযোগ নিতে চান শামীম

বহু চেষ্টা করেও এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এ ঘটনায় তার বাবা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর একক কর্তৃত্ব কিছুটা ক্ষুণ্ন হলেও বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ এখনও তার হাতেই। অন্যদিকে পুনরায় মেয়র হওয়ার সুযোগ হারালেও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল আছেন সাদিক। তাদের অনুসারীরাই আছেন দলের অন্য সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে। অর্থাৎ জেলা ও মহানগরের রাজনীতিতে বাবা-ছেলের প্রভাব খুব একটা কমেনি। এদিকে মেয়র পদে মনোনয়ন না পেয়ে সাদিক আব্দুল্লাহ এবার বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তোড়জোড় চালাচ্ছেন। 

এর ফলে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে হবে এই আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমকে। কারণ ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন হাসানাত-সাদিকের সাংগঠনিক শক্তির ওপর ভর করে। পরবর্তী সময়ে বাবা-ছেলের সঙ্গে শামীমের সুসম্পর্ক বজায় থাকেনি। সদর আসনের বড় একটি অংশ সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে থাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মেয়র সাদিকের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে শামীমের। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে শামীমের পোস্টার অপসারণ নিয়ে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার জের ধরে তার সঙ্গে সাদিকের দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। অবশ্য এর আগে থেকেই নিজের নির্বাচনী এলাকায় বেশ চাপে ছিলেন শামীম, কারণ স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি নিজস্ব কোনো বলয় গড়ে তুলতে পারেননি। 

সিটি নির্বাচনের আগে শামীম-সাদিক দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে ওঠে। সাদিকের বদলে তার চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রকাশ্যে এক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী শামীম বলেন, তার অনুরোধেই প্রধানমন্ত্রী সাদিককে বাদ দিয়ে খোকনকে মনোনয়ন দিয়েছেন। 

এসব ঘটনার পর আগামী নির্বাচনে সাদিক ও তার অনুসারীদের জাহিদ ফারুক শামীম পাশে পাচ্ছেন না তা বলাই বাহুল্য। এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে তার একমাত্র ভরসা বরিশাল সিটির নতুন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। রাজনীতিতে নবাগত হলেও পারিবারিক পরিচয়ের কারণে বরিশালের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান গড়তে পেরেছেন খোকন। বিশেষ করে সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণের অনুসারীরা খোকনের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। হিরণের মৃত্যুর পর তারা সাদিকের প্রভাবে কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন। 

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, খোকনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এই অংশটির সমর্থন নিয়েই আগামী নির্বাচন সামাল দিতে চান শামীম। এজন্য সিটি নির্বাচন নিয়ে খোকন-সাদিকের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া বিরোধকে পুঁজি করা ছাড়া উপায় নেই তার। কারণ শামীমের সঙ্গে মহানগর যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন ছাড়া জেলা ও নগরের কোনো নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা নেই। নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও দলীয় কর্মসূচিতে তার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও এতে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকায় তার জনপ্রিয়তা কমেছে। তাই কেন্দ্রীয় ঘোষণা মোতাবেক তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় মনোনয়ন নির্ধারণ করা হলে এমনিতেও বেকায়দায় পড়বেন জাহিদ ফারুক। যদিও নির্বাচন সামনে রেখে এখন নির্বাচনী এলাকায় নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। খোকন সেরনিয়াবাতের সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে তাকে নিজের ভাই বলে উল্লেখ করছেন সব বক্তব্য-বক্তৃতায়। 

এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিগার সুলতানা হনুফা বলেন, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য জাহিদ শামীম ২০১৮ সালে বলতেন, সাদিকের সঙ্গে মিলে এলাকার উন্নয়ন করবেন। এবার নির্বাচনের আগে তিনি বলছেন, খোকন সেরনিয়াবাতের সঙ্গে মিলে কাজ করবেন। অথচ গত নির্বাচনে জেবুন্নেছা আফরোজ মনোনয়ন না পাওয়ায় হিরণের অনুসারীরা শামীমের পক্ষে মাঠে নামেননি। তার বিজয় নিশ্চিত হয়েছে সাদিক আব্দুল্লাহর তৎপরতায়। 

এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে বারবার কল দেওয়ার পরও ফোন রিসিভ করেননি জাহিদ ফারুক শামীম। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় বরিশাল মহানগর আওয়মী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হকের সঙ্গে। হিরণপন্থি হিসেবে পরিচিত এই নেতা বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম স্থানীয় রাজনীতিতে নিজস্ব শক্ত বলয় গড়ে তুলতে পারেননি। হিরণ ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকলেও কেউ শামীমের সঙ্গে যোগ দেয়নি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচন থেকে আমরা হিরণপন্থিরা খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছি। জাহিদ ফারুক শামীমও আমাদের সঙ্গে একই মঞ্চে আছেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার পক্ষেই কাজ করব।’ 

২০০৮ সালে প্রথমবার এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহিদ ফারুক শামীম। কিন্তু নিজের পুরো শক্তি নিয়োগ করেও বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের কাছে হাজার পাঁচেক ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাজিত হন। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে হিরণ পরাজিত হন। ২০১৪ সালে তাকে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই বছরের এপ্রিলে হিরণের অকালপ্রয়াণের পর তার স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজ উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে ফের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হন শামীম। ওই নির্বাচনে তিনি মজিবর রহমান সরোয়ারকে পরাজিত করেছিলেন। 

আগামী নির্বাচনে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন সাদিক আব্দুল্লাহ। নগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, সাদিক এখন দলীয় কর্মকাণ্ডে ভীষণ মনোযোগী হয়েছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। প্রতিদিনই মহানগর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। 

এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম ঝন্টু বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও এ আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থান রয়েছে। বিএনপি থেকে কেউ প্রার্থী হলে তাকে টেক্কা দেওয়ার মতো সাংগঠনিক শক্তি সাদিক আব্দুল্লাহ ছাড়া কারও নেই। 

শামীম-সাদিকের পাশাপাশি এ আসন থেকে আগামীবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন স্বাধীন বাংলা প্রথম রাষ্ট্রপ্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী ঢাকা জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, জেবুন্নেচ্ছা আফরোজ, সদর উপজেলা পরিষদের সাইদুর রহমান রিন্টু, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক কাউন্সিলর এসএ জাকির হোসেন। এ ছাড়া প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিলেও গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছেন আরও বেশ কয়েকজন। আবার স্থানীয় আওয়ামী লীগে গুঞ্জন রয়েছে, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এ আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে এ বিষয় নিয়ে আলোচনায় থাকা কোনো প্রার্থী এখনই মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

জেলা আওয়ামী লীগের তালুকদার ইউনুসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় সভানেত্রী মাঠপর্যায়ের কয়েকটি জরিপ করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সমর্থন ও মনোনয়ন বোর্ডের মতামতের ওপর ভিত্তি করে প্রার্থী বাছাই করেন। এবারও তার ব্যত্যয় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনের আরও কয়েক মাস বাকি। এখনই এ নিয়ে মন্তব্য করার সময় হয়নি। মনোনয়ন পেতে অনেকেই লবিং-তদবির করতেই পারেন, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। 

এদিকে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে সাংগঠনিকভাবে এখন কিছুটা বিপর্যয়ের মধ্যে আছে দলটি। একসময় এ আসনের কর্তৃত্ব ছিল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের হাতে। তিনি এ আসন থেকে চারবার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২২ সালে বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের পর স্থানীয় রাজনীতিতে একক আধিপত্য হারান সরোয়ার। বরিশাল বিএনপির কর্তৃত্ব এখন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহানের হাতে।

আগামী নির্বাচনে মজিবর রহমান সরোয়ারের পাশাপাশি বিলকিসও দলের মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়াও আলোচনায় আছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপিত এবায়েদুল হক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন। আপাতত সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যস্ত থাকায় আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতা বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সম্ভাব্য প্রার্থীরা। 

এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বরিশাল সদর আসনটি বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ আসন। এখান থেকে অনেকেই বিএনপির মানোনয়ন প্রত্যাশা করেন। কে মানোনয়ন পাবেন তা ঠিক করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে এ মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের একমাত্র লক্ষ্য এখন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে সফল হওয়া।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা