দীপক দেব
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩ ১০:০৩ এএম
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৩ ১০:৫৪ এএম
প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে ভারত। জি-২০ বৈঠকের আগে এক কূটনৈতিক নোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকার ও নির্বাচন নিয়ে দেশটির একটি কূটনৈতিক নোট রাজনীতিতে যুক্ত করেছে নতুন এক মাত্রা। অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, ভারত যদি এমন কিছু যুক্তরাষ্ট্রকে বলেও থাকে, তবে তা তাদের ‘নিজেদের স্বার্থে’ই বলেছে।
দলটির কূটনৈতিক তৎপরতায় সম্পৃক্ত নেতারা আরও বলছেন, ভারত এই নোটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দিয়েছে, এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। শেখ হাসিনাকে সরিয়ে যে শক্তি ক্ষমতায় আসতে চায়, তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে এ অঞ্চলে আবারও উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটবে। আর আঞ্চলিক নিরাপত্তার নানা দিক বিবেচনায় ভারতের এ অবস্থান সঠিক।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে গত ৬ থেকে ৯ আগস্ট ভারত সফর করে আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। তিন দিনের ভারত সফরে এই প্রতিনিধিদল ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি জেপি নাড্ডাসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে বৈঠক করে। এসব বৈঠকে আসন্ন সংসদ নির্বাচন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কোনো কোনো দেশের তৎপরতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক নোট ওই সফর ও বৈঠকের আলোচনারই ধারাবাহিকতার ফসল।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের এই ভারত সফরের পরপরই জাতীয় শোক দিবসের স্মরণসভায় গত ১৬ আগস্ট দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কয়েকটি দেশের তৎপরতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন তৎপরতা ও পদক্ষেপে ভারত এতদিন নীরবতা দেখালেও প্রতিনিধিদলের সফর ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রকৃত চিত্র অনুধাবন করে এই কূটনৈতিক নোট দিয়েছে।
‘বিএনপি নেতারা হাত-পা গুটিয়ে ফেলেছেন’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে এক অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আঞ্চলিক রাজনীতির বিষয়ে এই ভূখণ্ডে ভারত এবং আমেরিকার অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। তাই ভারত আমেরিকাকে কিছু বললে নিজেদের স্বার্থেই বলেছে। এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ নয়।’ তিনি বলেন, ‘ভারত কী বার্তা দিয়েছে, এটা তাদের ব্যাপার। অথচ সেখানে বিএনপি নেতারা মন্তব্য করছেন। অবস্থাটা এমন যে, ভারতের বার্তায় এরা ভয়ে হাত-পা গুটিয়ে ফেলেছেন। ভারতভীতিতে তাদের ঘুম ভেঙে যায়।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি আমেরিকার দিকে তাকিয়ে আছে, কখন নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি দেবে তার আশায়। তাকাতে তাকাতে চোখের পাওয়ার কমে গেছে। এখন আর কিছু দেখতে পায় না। আর আওয়ামী লীগ তাকিয়ে আছে দেশের জনগণের দিকে।’
‘নোট যদি দিয়েও থাকে, সঠিক কাজই করেছে’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান গতকাল শনিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভারতের এই কূটনৈতিক নোটের বিষয়টি নিয়ে দেশটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে আমি মনে করি, আঞ্চলিক উন্নয়নের স্বার্থে ভারত যদি এমন একটি নোট লিখেও থাকে, তা অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়ই হবে। কারণ বাংলাদেশে যদি একটি গণতান্ত্রিক ও উন্নয়নকামী সরকার থাকে, তাহলে আশপাশের দেশের সঙ্গে সব ক্ষেত্রেই যোগাযোগ বাড়বে। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি-জামায়াত পক্ষ যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশে কী হবে সেই মডেল কিন্তু সবার সামনে রয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বিএনপি-জামায়াতের সেই মডেল সরকার ক্ষমতায় এলে এ দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এই মডেল সরকার এলে ভারতের ক্ষতি হবে। যুক্তরাষ্ট্রেরও ক্ষতি হবে। তাই ভারত সরকার কূটনৈতিক চ্যানেলে যদি এমন কিছু করে থাকে, তাহলে সঠিক কাজই করেছে বলে আমি মনে করি।’ তিনি প্রত্যাশা করেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের এই নোট পর্যালোচনা করে সঠিক পদক্ষেপ নেবে।
এদিকে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে জি-২০ বৈঠক শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এ সম্মেলনে অংশ নেবেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই সম্মেলন চলার সময় বাংলাদেশের নির্বাচন এবং উপমহাদেশের ভূরাজনীতি নিয়ে সমান্তরাল বৈঠক হতে পারে। যার ক্ষেত্র তৈরি করতেই এই কূটনৈতিক নোট দেওয়া হয়েছে।