প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৫:০৯ পিএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৭:২৯ পিএম
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের জীবন নয়, রাষ্ট্রসহ হাজারও শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন না। আমরা রাষ্ট্র নিয়ে উদ্বিগ্ন, হাজারও শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রাশেদ ইকবাল বলেন, ‘এক যুগের বেশি সময় ধরে আমাদের অনেক নেতাকর্মী বাড়িতে যেতে পারে না। অনেকে দুই ঘণ্টা নিদ্রায় যেতে পারে না। সব সময় রাষ্ট্র বাহিনী আমাদের পেছনে ধাওয়া দিয়ে বেড়াচ্ছে।’
ছাত্রদলের ছয় নেতাকর্মীকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি ‘বিএনপি সহিংসতার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করছে’ বলে বক্তব্য দিয়েছেন। আর এই বক্তব্যের পরই তার বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণে মাঠে নেমে পড়েছে কিছু অতি উৎসাহী গোয়েন্দা কর্মকর্তা।’
‘তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে গ্রেপ্তার করে। সহসভাপতি আবুল হাছান চৌধুরীকেও তুলে নিয়ে যায় ডিবি। জিসানকে খুঁজতে তার বাসায় গেলে কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি হাসানুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আর রিয়াদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আরিফ বিল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। বেআইনিভাবে দীর্ঘ সময় আটক রাখার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরব হয়ে উঠলে একপর্যায়ে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের নাটক সাজিয়ে তাদের গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়,’ যোগ করেন তিনি।
রাশেদ ইকবাল অভিযোগ করেন, ‘হেফাজতে থাকার সময়ে ছাত্রনেতাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছাত্রনেতা জিসানের শরীরের জমাট বাঁধা কালচে রক্তের ছাপগুলোই যেন আজকের বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। এই রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবার বদলে আজকের বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে কিছু আওয়ামী লুটেরার অবাধ লুটপাটের জায়গা, প্রশাসনের কিছু দলবাজ অতিউৎসাহী সদস্যের নাটক মঞ্চস্থ করার ক্ষেত্র।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল মাগুরা জেলা শাখার মহম্মদপুর উপজেলার ৪ নম্বর রাজাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু তৈয়ব মোল্লা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়ে তিন দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গতকাল মারা গেছে। গত ১৯ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি আবুল হাসান চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল হোসেন মামুন, প্রচার সম্পাদক ওমর সানী, সহসাধারণ সম্পাদক মীর ইমরান হোসেন মিথুন, সহসাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান, সহসভাপতি হাসানুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আর রিয়াদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার যুগ্ম আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন আনান, যাত্রাবাড়ী থানার যুগ্ম আহবায়ক সুমন সরকার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আরিফ বিল্লাহ, ছাত্রনেতা রাব্বি, মোংলা সরকারি কলেজ শাখার আহ্বায়ক আসলাম হোসেন চয়ন, নেত্রকোণা জেলা শাখার সহসভাপতি সজল তালুকদার, নেত্রকোণা সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সৈয়দ মোকসেদুল আলম রাজীব, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলা শাখার সদস্য সচিব মো. হাবিব সিকদার, যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার শাহেদ মুন্না, জামালপুর জেলা শাখার সহসাধারণ সম্পাদক মো. স্বপন মাহমুদ, জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফিরোজ কবির, ময়মনসিংহের পাগলা থানার ছাত্রনেতা আবদুল্লাহ খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তেজগাঁও কলেজ শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, অষ্টগ্রাম উপজেলা শাখার সদস্য সচিব আল মাহমুদ মোস্তাক, সিলেট জেলা শাখার সহদপ্তর সম্পাদক জয়নাল আবেদিন রাসেলকে। সারা দেশের একাধিক জেলা ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা কারাবন্দি আছেন। পদযাত্রা কর্মসূচিতে হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, বরগুনাসহ বিভিন্ন স্থানে নৃশংস হামলা করে অসংখ্য ছাত্রনেতাকে আহত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ এই অবৈধ সরকার আর তার মোসাহেবরা মিলে আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা আমাদের ভাবতে হবে। আমরা কোনোভাবেই উত্তর কোরিয়ার কাতারের রাষ্ট্র হতে চাই না। আজ বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশকে নিয়ে ক্রমাগত উদ্বেগ জানাচ্ছে, স্যাংশন আসছে, ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। এই সব কিছুরই মূল হচ্ছে, একতরফা অবৈধ কারচুপি, ভোট চুরির নির্বাচন। একজন ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতায় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বিলোপ করেই দেশকে আজকের পর্যায়ে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’
ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, ‘গণতন্ত্রের পক্ষে আমাদের যে রক্তস্নাত পথচলা, সেই পথচলা কোনো কিছুতেই থামবে না, থামানো যাবে না। তবে একই সঙ্গে বলতে চাই, আমাদের সহযোদ্ধাদের প্রতি বিন্দু রক্ত, প্রতি ফোঁটা চোখের জল আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। যারা আজকে ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে, মোসাহেবির নেশায় বুঁদ হয়ে, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাদের মতো বক্তব্য দিয়ে নিজেদের ফ্যাসিবাদের বড় দোসর প্রমাণের প্রতিযোগিতা করছেন, তারা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার পর, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পর আপনাদের অবশ্যই এসব অপকর্মের জবাবদিহি করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিজয় আমাদের অনিবার্য। রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে সেই অবশ্যম্ভাবী বিজয় অচিরেই অর্জিত হবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সহসভাপতি তানজিল হাসান, তবিবুর রহমান সাগর, রিয়াদ ইকবাল, নিজামউদ্দিন রিপন, মহিবুবব মিয়া, আক্তারুজ্জামান আক্তার, নাসির উদ্দিন নাসির, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুর রিয়াদ, ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক মানসুরা আলম, সহকর্মসূচি প্রণয়ন ও পরিকল্পা সম্পাদক তাইফুর রহমান ফুয়াদ প্রমুখ।