প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ২০:০০ পিএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ২০:৩৪ পিএম
বিএনপি শুধু তারেক রহমানের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হবে নাকি রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকবে, সেটি বিএনপির ভাবা উচিত বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) জহির রায়হান কালার ল্যাব মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র লীগের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজারের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এবং চলচ্চিত্র লীগের প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মনি। বক্তব্য দেন চলচ্চিত্র লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, সহসভাপতি দিলারা ইয়াসমিন, পরিচালক এসএ হক অলীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা দেবু প্রমুখ।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আসলে তারেক রহমান চান তিনি নিজে যত দিন নির্বাচন করতে পারবেন না, তত দিন বিএনপির কেউ নির্বাচন করতে পারবে না। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর বা জাতীয় সংসদ নির্বাচন, কোনোটিই না। এমনকি এমপি নির্বাচিত হলেও শপথ নিতে দেয় না। মির্জা ফখরুল সাহেব এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন, শপথ নিতে দেয় নাই। আবার দলের অন্যরা সংসদ সদস্য হওয়ার কয়েক দিন পরে বলে যে সংসদে থাকা যাবে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে আমার প্রশ্ন, যে দল আপনাদের কোনো নির্বাচন করতে দেয় না, সেই দল কেন করেন। আপনারা শুধু তারেক রহমানের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হবেন নাকি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকবেন, সেটি নিয়ে ভাবা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের এই উন্নয়ন-অগ্রগতি আরও বেশি হতে পারত যদি বিএনপি ও তার মিত্ররা দেশে সাংঘর্ষিক রাজনীতি না করত। বিএনপি-জামায়াত, তাদের মিত্ররা ও টেলিভিশনের পর্দা গরম করা কেউ কেউ কোনো উন্নয়ন দেখতে পায় না। ফখরুল সাহেব পদ্মা সেতু দিয়ে পার হয়েও ওপারে গিয়ে বলেন দেশে কোনো উন্নয়ন হয় নাই। ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে গিয়ে বলেন দেশে কোনো উন্নয়ন হয় নাই, কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।’
বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য উল্লেখ করতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ৫৬০টি নতুন মসজিদ বানান আর বিএনপি ৫০০ জায়গায় একযোগে বোমা ফাটায়। জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেন, আর বিএনপি বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালিয়ে দেয়। জননেত্রী শেখ হাসিনা স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেন, আর বিএনপি ৫০০ স্কুলঘর একসঙ্গে পুড়িয়ে দেয়, সঙ্গে বইও পুড়িয়ে দেয়। আমরা যখন জঙ্গি ধরি, তখন তারা বলে যে দেশে কোনো জঙ্গি নাই। এই অপরাজনীতি যদি দেশে না থাকত, দেশ আরও বহুদূর এগিয়ে যেত। জঙ্গি পোষণ, জঙ্গি পালন, সন্ত্রাসী তোষণ ও সন্ত্রাসী পালন এই রাজনীতিই বিএনপি করে।’
বিএনপির কর্মপন্থার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি মানুষের কাছে যায় না, তারা প্রতিদিন কোনো না কোনো দূতাবাসে ঘুরে বেড়ায়। এখন তারা চুপসে গেছে। চেহারা সব মলিন। কারণ বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে দেখতে পেল যে তারা পরীক্ষায় পাস করে নাই, ফেল করেছে। আপনারা জঙ্গিদের নিয়ে রাজনীতি করবেন, জোটের মধ্যে তালেবানদের রাখবেন, জঙ্গি ধরলে বলবেন নাটক, দেশকে সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত করবেন এবং মানুষের গাড়ি-ঘোড়া পোড়াবেন, মানুষকে অবরুদ্ধ করে রাখবেন, পুলিশের ওপর হামলা পরিচালনা করবেন, আপনার সঙ্গে জনগণও থাকতে পারে না বিদেশিরাও থাকতে পারে না। যারা অপরাজনীতি করে তাদের সঙ্গে কেউ থাকতে পারে না, সেই কারণে আজকে বিএনপির এই দশা।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ’’আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনে অবদান রেখেছে, স্বাধীনতা-সংগ্রামে অবদান রেখেছে, স্বাধীনতার পর দেশ গঠনেও অবদান রেখেছে। সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা জানেন বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দেশ গঠনের লক্ষ্যে সিনেমা নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তখন ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘ওরা এগারো জন’ এমন সিনেমা নির্মিত হয়েছে, যেগুলো দেশ গঠনে অবদান রেখেছে।’’
বঙ্গবন্ধু ও রাজনীতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ’রাজনীতিবিদ ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে হয়তো ক্ষমতায় যায়, কিন্তু ইতিহাসের পাতায় স্থান পায় না। বঙ্গবন্ধু কখনও ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি। সব সময় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। সে কারণে বঙ্গবন্ধু যেমন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, তেমনি দেশমাতৃকার তরে যারা রাজনীতি করে, বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে তাদের অনেক কিছু শেখার আছে। রাজনীতি একটি ব্রত, দেশসেবা, মানবসেবা, সমাজসেবার ব্রত।‘
তিনি বলেন, ’দুঃখজনক হলেও সত্য, বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ সেটা মনে করেন না, মনে রাখেন না। এটিই আজকের দিনের বাস্তবতা। চট্টগ্রাম থেকে অনেকেই মন্ত্রী হয়েছেন, কারও কথা কেউ মনে রাখেনি। কিন্তু দেশপ্রেমী সূর্যসেন ইতিহাসের পাতায় আছেন এবং ইতিহাস যত দিন থাকবে সূর্যসেনও তত দিন থাকবেন।‘