প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:২৯ পিএম
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৫২ পিএম
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রবা ফটো
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে ‘অবাক’ হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যখন সুষ্ঠুভাবে আমরা নির্বাচন করছি, তখনই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা, এর অর্থটা কী? দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন?’
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন, তিনি অবাক হচ্ছেন – নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন? আমরা তার কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি। বাংলাদেশের সব মানুষ জানে দেশে ভোট হয় না, তারা ভোট দিতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘দুটো নির্বাচন উনাদের অধীনে হয়েছে। একটা হয়েছে ২০১৪তে, আরেকটা ‘১৮তে। ‘১৪তে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছিলেন। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনো লোক ছিল না। কোনো রাজনৈতিক দল সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নাই। যার জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করতে হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা বিষয় সব সময় আমাদের মনে রাখতে হবে। নির্বাচনেরে মূল বিষয়টা হচ্ছে – ভোটাররা ভোট দেবে। ভোটাররা তাদের মতামত ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটাবে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী সেই মতামতের ভিত্তিতে সংসদ গঠন হবে। সেই সংসদ দেশ চালাবে।’
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘২০১৮তে কী হয়েছে? আগের রাতে ভোট দেখিয়েছে, ভোট করেছে। তার আগে থেকে অর্থাৎ শিডিউল ঘোষণার কয়েক দিন পর থেকে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে ফেলেছে। এমনকি ২৯ জন প্রার্থীকেও গ্রেপ্তার করেছে। নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) কাজে লাগিয়েছে। এমনকি বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে সেই ফলাফল তাদের পক্ষে নিয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখনও নির্বাচনসংক্রান্ত ৫০টি মামলা হাইকোর্টে আছে। সেগুলোর বিচার হয়নি। তাহলে গোটা ব্যবস্থাটা কী? গোটা ব্যবস্থাটা হচ্ছে – একটা দলকে নির্বাচিত করা। একটা দলকে সমস্ত সুব্যবস্থা করা যাতে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে।’
এমন একটা প্রেক্ষাপটে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আসছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, এই নির্বাচনে তখনই যাওয়া সম্ভব হবে, যখন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে। কারণ, আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি তাতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় থাকে, তাহলে সেই নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠু হতে পারে না। সে কারণে আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দল একত্র হয়ে এক দফা দিয়েছি। সেখানে পরিষ্কার করে বলা হযেছে, নির্বাচনের আগেই এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা আর আমরা এমনি এমনি বলিনি। সমস্ত রাজনৈতিক দল নির্বাচন খেলা করার জন্য বলেনি। এ দেশের মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা তা পূরণ করার জন্যই এখানে একটা নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার। এটা শুধু আমরা নই, সমগ্র বিশ্ব বলছে। তাই উনি যখন বলেন, এত ভালো নির্বাচন করছি আমরা সেখানে আজকে প্রশ্ন উঠে কেন। আপনি একটু দয়া করে সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, ওই জিনিসটা তো আপনারা করেন না। আপনারা সব সময় মানুষকে বোকা বানানোর জন্য যা কিছু বলতে থাকেন, আরেকটা বশংবদ মিডিয়া গ্রুপ আছে, তারা ওটাই প্রচার করতে থাকে সারা দিন ধরে।’
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারকে আবার নির্বাচিত করতে আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেন জামালপুরের ডিসি ইমরান আহমেদ। সমালোচনা শুরু হওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করে বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করেছে সরকার।
এ ঘটনাকে সরকারের ‘আইওয়াশ’ বলে বর্ণনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ডিসি কথা বলেছে। কিন্তু গ্রেপ্তার সব করছে এসপি। এই এসপি শেরপুরে ছিল। সেখানে কোনো কর্মসূচি করতে দেয়নি। সে ঘোষণা দিয়ে বলে, বিরোধী দলকে কোনো কর্মসূচি করতে দেব না। এজন্যই বললাম, এগুলো আইওয়াশ। একটা-দুইটা ব্যবস্থা নিয়ে বলবে, দেখ কেমন ব্যবস্থা নিলাম। তাও আবার নির্বাচন কমিশন চিঠি দিয়েছে। সরকার নিজে কোনো চিঠি দেয়নি। দ্যাটস টোটালি অ্যান আইওয়াশ।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৭ ধারার মামলায় বৃহস্পতিবার দণ্ডপ্রাপ্ত মানবাধিকার সংগঠক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিনের মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ তাদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।