বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:০৩ পিএম
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৪৪ পিএম
বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর এই সেলফি তুলেছেন সাদ্দাম হোসেন। সংগৃহীত ছবি
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কয়েকদিন ধরে চলে আসা বিরোধ মিটেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নির্দেশে’। নেতারা এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার পরে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের সঙ্গে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
বৈঠকে আট নেতাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন বলে একমত হন। বৈঠক শেষে তারা সেলফি তুলেছেন; যা তারাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন।
সাদ্দাম হোসেন সেলফি পোস্ট করে লিখেছেন ‘Together we will’ অর্থাৎ আমরা একসঙ্গে থাকব, ঢাবি শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘শুভ সকাল’, সাধারণ সম্পাদক লিখেছেন ‘United we stand, divided we fall’।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয় প্রতিদিনের বাংলাদেশের। তারা বলেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে দেখা করেন। সেখানে দেখা করে তারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর উত্তর, মহানগর দক্ষিণের মতবিরোধের কথা জানান। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেন। যদি দ্রুত সমাধান না করা হয় তাহলে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়েও বলেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে এই বৈঠক করে এক থাকার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হয় ছাত্রলীগের নেতারা।
ছাত্রলীগের মধ্যে বিরোধ দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাটিয়ে নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য প্রশংসা করেছেন সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এত দ্রুত সময়ে মতবিরোধ কাটিয়ে ছাত্রলীগের যে ঐক্যবদ্ধতার শক্তি তা ফুটে উঠেছে। ভবিষ্যতে ছাত্রলীগের সবাই এক হয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবে বলে আশা করছেন তারা।
কয়েক মাস ধরে ছাত্রলীগের বিরোধ শীতল থাকলেও এই দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পেয়েছে ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক ছাত্র সমাবেশের পর। কমিটির ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিরোধ তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ দুই নেতার অনুসারীদের কম পদায়ন, অধিভুক্ত সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অধীনে আনা নিয়ে বক্তব্য জোরালো করতে থাকে ঢাবি ছাত্রলীগ। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় ঢাবি ছাত্রলীগের সঙ্গে বিরোধে যোগ হয় মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ছাত্রলীগের।
ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত ১ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্র সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বাইরে কাউকে বক্তব্য না দেওয়া, সাত কলেজ ছাত্রলীগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বক্তব্যসহ সাম্প্রতিক বিরোধ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সামনাসামনি বসেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। সেখানে সাত কলেজ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র দেখে সিদ্ধান্ত জানান। সমাবেশে বক্তব্য না দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী সভায় তাদের (ঢাবি, উত্তর, দক্ষিণ) বক্তব্যের সুযোগ দেওয়ার কথা বলেন। পরবর্তীতে দ্রুততম সময়ে সকল বিরোধ মীমাংসা করে এক হয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেন, যদি বিরোধ না কাটিয়ে এক হয়ে কাজ না করতে পারে তাহলে কমিটির বিষয়ে কড়া হতে বাধ্য হবেন তিনি। এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল একসঙ্গে বসেছিলেন নেতারা।’
গতকালের সভার বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। তবে তাদের বক্তব্য অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে ফেসবুক পোস্ট থেকে।