প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:২২ পিএম
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:২৭ পিএম
ধাপে ধাপে কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে প্রথম ধাপের চূড়ান্ত আন্দোলন। চলবে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এর মধ্য দিয়ে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। এরই মধ্যে কর্মসূচিও নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী সোমবার আনুষ্ঠানিকাভাবে তা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপের কর্মসূচি তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত কর্মসূচি চলবে অক্টোবরে মাঝামাঝি পর্যন্ত। এ কর্মসূচি পরে জানানো হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এক দফা দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে বিএনপি ও দলটির মিত্ররা। মহাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি ও গণমিছিলের মতো টানা কর্মসূচি পালনের পর এবার চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ সময়ে কী ধরণের কর্মসূচি পালন করা হবে তা নিয়ে গত সপ্তাহে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। গত মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটির সদস্যদের এক বৈঠকের পর সম্ভাব্য কর্মসূচি কী হতে পারে তা প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয় লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। ওই প্রস্তাব নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন তারেক রহমান। ওই বৈঠকে দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শীর্ষনেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তারা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বৈঠকে অংশ নেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হওয়া বৈঠক চলে মধ্যরাত অবধি। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির নেতাদের প্রস্তাব অনুযায়ী কর্মসূচি উত্থাপন করা হয়।
ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ বিএনপির ও সহযোগী সংগঠনের আরও ১০-১২ জন সিনিয়র নেতা। এছাড়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরাও বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন নেতা জানান, আপাতত বৃহত্তর ১৯টি জেলায় সমাবেশ হবে। পরবর্তীতে জেলার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে রোডমার্চ হবে জেলা পর্যায়ে। এরই মধ্যে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে আজ থেকে দুদিন রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করবে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। অন্য বিভাগেও এই রোডমার্চ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী মার্চগুলো বিএনপির ব্যানারে করার প্রস্তাব রয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আগামী সোমবার লাগাতার আন্দোলনের পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিও মিত্র দলগুলোকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। ঘোষণার আগে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আশা করছি রবিবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনো হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার যত ধরনের কর্মসূচি রয়েছে, তার সবকটিই আমরা নেব। শান্তিপূর্ণ কমসূচির মাধ্যমে সরকারকে এক দফা মানবে বাধ্য করা হবে। সরকারের আচরণই কর্মসূচির প্রকৃতি নির্ধারণ করবে বলেও জানান তিনি।
বিএনপির মিত্র জোট ও দলের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানান, চলতি মাসে শ্রমিক ও ছাত্র সমাবেশ হবে। আন্দোলনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এ দুটি সমাবেশ হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের নিয়ে এবং ২৪ বা ২৫ সেপ্টেম্বর ছাত্রদের নিয়ে সমাবেশের চিন্তা রয়েছে। এর বাইরে প্রথম ধাপে অন্য কোনও কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা নেই।
রংপুরে রোডমার্চ কাল
উত্তরের দুই বিভাগে দুইদিনের রোডমার্চের অংশ হিসেবে শনিবার রংপুর বিভাগে এ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। আগামী রবিবার রোডমার্চ হবে রাজশাহী বিভাগে।
যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু জানান, রংপুর থেকে রোডমার্চ যাবে দিনাজপুর পর্যন্ত। আর বগুড়া থেকে শুরু হয়ে রাজশাহীতে গিয়ে রোডমার্চ শেষ হবে। প্রতিটি রোডমার্চের শুরু ও শেষে দুটি জনসভা হবে এবং পথে আরও কিছু পথসভা হবে। গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ যে যার মতো করে এই রোডমার্চ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলের সিনিয়র নেতারা এ কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন।