প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:২৫ পিএম
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:১৭ পিএম
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের একাংশের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রবা ফটো
সরকার রাষ্ট্রকে নির্যাতনের কারখানায় পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমরা এক ঘোর অন্ধাকারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। রাষ্ট্র এখন আর রাষ্ট্র নেই। রাষ্ট্র এখন পুরোপুরিভাবে একটা যন্ত্রণা, অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের কারখানা হয়ে গেছে।’
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন—ডিইউজের একাংশের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা রাষ্ট্র তখনোই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সফল হতে পারে, যখন তার তিন স্তম্ভই কাজ করে। যেখানে একটা স্তম্ভ পুরোটাই তারা দখল করে নিয়েছে। আমি সোজা কথায় বলি, বাংলাদেশের আত্মাটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা যে আত্মাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি, কাজ করেছি, লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি, সেই আত্মা বিনষ্ট করে দিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে অনেকে বলছেন যে—বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই। আমি তো বলি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে কি না আমি তো জানি না। যারা বিচারক এই সমাজের স্বাধীনতাটাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।’
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কিছু কিছু গণমাধ্যমের শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন, তারা জানেন, তাদের সহকর্মী, বড় বড় পত্রিকার এডিটর, বড় বড় চ্যানেলের এডিটর তারা আজকে উর্দির ভূমিকা পালন করছেন। আমাদের চেয়ে তারাও কম যান না। আমি লজ্জা পাই, যখন টেলিভিশনে দেখি তাদের কয়েকজন প্রতিথযশা সম্পাদক এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তারা যখন এই ভয়াবহ অত্যাচার-নির্যাতন, গণতন্ত্র হত্যার যে কর্মযজ্ঞ তাকে সমর্থন করছেন। এটাই এখন হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কথা বাদ দেন। আমরা রাস্তার কর্মী, মাঠের কর্মী, মাঠের মধ্যে লড়াই করি, জেলে যাই, অনেকের ফাঁসিও হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে আমাদের ঈশ্বরদীর প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী ৩০ বছর আগে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে নাকি ঢিল মেরেছিল। ৩০ বছর পরে বিচারকরা শাস্তি দিয়েছেন। ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। আমাদের হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ৭০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে—এটা ইতিহাস।’
সরকারের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করে দিয়েছে। এ রকম ৬৪৮ জনকে গুম করেছে। সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে, এক্সট্রা জুডিসিয়াল কিলিং করেছে, আমাদের সম্পাদক শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। দেশে আছেন এমন অনেক সম্পাদক-সাংবাদিককে নিগৃহীত হতে হয়েছে, কারাগারে যেতে হয়েছে। এই একটু আগে একজন আমার সঙ্গে দেখা করলেন যে, মাসখানেক আগে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়েছিল, এক মাস জেলে থেকে বেরিয়েছেন। কত বলব, কার কথা বলব? অত্যাচার-নির্যাতন এমন একটা পর্যায় চলে গেছে, এখান থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের উপস্থাপনায় আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে রুহুল আমিন গাজী, এম আবদুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, এমএ আজিজ, আবদুল হাই শিকাদার, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কাদের গনি চৌধুরী, বাকের হোসাইন, ইলিয়াস খান, মোরসালিন নোমানী, রাশেদুল হক, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জামায়াতে ইসলামীর মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।