প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৩১ পিএম
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৩২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
পেশাজীবী নেতা কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমসহ ১৫ রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে আদালতের সাজার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সংগঠনটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী এক যৌথ বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, সব প্রতিবাদী কণ্ঠ নির্মূল করা, সরকারি নীল নকশা অনুযায়ী আদালতকে ব্যবহার করে পেশাজীবী ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে এ রায় দেওয়া হয়েছে। যা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। এর আগে ‘দৈনিক আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও ‘যায়যায় দিন’ সম্পাদক শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় ৭ বছরের ফরমায়েশি সাজা দেওয়া হয়। একইভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বেশ কয়েকজন জাতীয় নেতার বিরুদ্ধে ফরমায়েশি সাজা দেওয়া হয়েছিল। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে ভিন্নমত দমন এবং জনপ্রিয় রাজনীতিকদের নির্বাচনে অযোগ্য করে ক্ষমতা দখল করা।
পেশাজীবী নেতারা বলেন, দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে সরকার সব ক্ষেত্রে বিচার বিভাগকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। আমরা অবাক বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে জনগণের মৌলিক, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারগুলো হরণ করা হচ্ছে। পেশাজীবীসহ গণতন্ত্রকামী মানুষকে বিচার বিভাগ দিয়ে চরমভাবে হয়রানি-নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। যার ফলে দেশে একটা বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।
মৌলিক অধিকার বাধাগ্রস্ত হলে মানুষের আদালতের শরনাপন্ন হয়। আজ উল্টো আদালতই মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে গণমাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা।
বিএসপিপি’র বিবৃতিতে বলা হয়, ফরমায়েশি সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম একজন পেশাজীবী নেতা, হাবিবুর রহমান হাবিব নব্বইয়ের গণঅভ্যূত্থানের অন্যতম নায়ক, মোহাম্মদ শাহজান প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক সংসদ সদস্য, আহসান হাবিব লিঙ্কন সাবেক সংসদ, বেলাল আহমেদ জাতীয় নেতা, বাকিরা সবাই দেশ প্রেমিক রাজনীতিক। যারা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, গুম, খুন ও বিনাবিচারে মানুষ হত্যা বন্ধসহ এক দফার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। সোচ্চার ছিলেন বর্তমান সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশানের বিরুদ্ধে।
পেশাজীবীদের শীর্ষ এই দুই নেতা জানান, কথায় কথায় যেভাবে ভিন্নমতাবলম্বীদের ফরমায়েশি সাজা দেওয়া হচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে সরকার দেশে ভিন্নমতের কোন অস্তিত্বই রাখতে চান না। যে আদালত হওয়ার কথা মানুষের ভরসাস্থল আজ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ফরমায়েশি সাজা দেওয়ার কারণে সে আদালত আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পেশাজীবীদের এই দুই নেতা অবিলম্বে এই ফরমায়েশি রায় বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, এধরণের ফরমায়েশি রায়ের কারণে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের সর্বশেষ আশাটুকু শেষ হয়ে যাচ্ছে।
পেশাজীবীদের এই দুই নেতা আইনের শাসনের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা তুলে ধরে বলেন, আইনের শাসনের মূল কথা হলো আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি থেকে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের জন্য আইন একইভাবে প্রযোজ্য হবে।
কিন্তু এখন সমাজে এর কোনো প্রতিফলনই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে ভিন্নমত দমন ও ক্ষমতা দখলের অস্ত্র হিসেবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ থেকে অন্যায়, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য দূর হয়। ফলে সমাজে স্থিতিশীলতা আসে। আইনের শাসন না থাকলে সমাজে অনাচার অরাজকতার সৃষ্টি হয়। নাগরিক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সামাজিক মূল্যবোধ, সাম্য কিছুই থাকে না। এর ফলে অবিশ্বাস, আন্দোলন ও বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে। আর বিশৃঙ্খলা, অশান্তি ও হানাহানি সমাজের শক্ত ভিতকে দুর্বল করে তুলে।
আইনের শাসন সভ্য সমাজের মানদণ্ড উল্লেখ করে বিএসপিপির এই দুই নেতা বলেন, আইনের শাসনে বিশ্বের ১৪০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৭তম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের আইনে শাসন সূচক ২০২২ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।দিন দিন আরও অবনতি হচ্ছে। এটা জাতি হিসেবে আমাদের কলঙ্কিত করছে। ত্রিশ লাখ শহীদের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা কি আমাদের কাম্য ছিল?
তাই দেশের সকল নাগরিককে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।