× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নির্বাচনী কূটনীতি

শিরীন-আমুর ভারত সফরে কৌতূহল, যাবেন কাদেরও

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০০:৫৭ এএম

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০১:০৪ এএম

শিরীন-আমুর ভারত সফরে কৌতূহল, যাবেন কাদেরও

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। কখনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ও ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে, কখনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে, আবার কখনও ভারতের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন এই দুই দলের নেতারা। আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা বোঝা গেলেও ওই সব বৈঠকের ভেতরের খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

কূটনৈতিক এমন তৎপরতার মধ্যেই আওয়ামী লীগের দুই নেতার ভারত সফর আলোচনায় এসেছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু এখন নয়াদিল্লি অবস্থান করছেন। তাদের এই সফর ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ভারত সফরে যেতে পারেন এমন আভাস মিলেছে। যদিও দলটির নেতারা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। অবশ্য তার মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দিন-তারিখ ঠিক না হলেও এ রকম একটি সফর হতে পারে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আগামী ২৪ অক্টোবর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস যাচ্ছেন। সেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠক হবে। 

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের নজর এখন বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতির ওপর। যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও তাদের মিত্ররা নির্বাচন নিয়ে সরকারকে চাপে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে এ দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসানীতি আরোপ করেছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও আরোপের কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর দেশগুলোতে। কয়েক দিন ধরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার গুঞ্জন-গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে। সুতরাং নির্বাচন ঘিরে বহুমাত্রিক তৎপরতা সামনে আরও বাড়বে বলে মনে করেন তারা।

ভারতে শিরীন-আমু, যেতে পারেন কাদের

গত ১০ অক্টোবর দিল্লি সফরে গেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী। স্পিকারের দপ্তর জানিয়েছে ১৯তম জি-২০ পার্লামেন্টারি স্পিকার সম্মেলনে (পি-২০) অংশ নিতে তিনি ভারতে গেছেন। আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার ভারতে অবস্থান করবেন। আজ ১৩ এবং আগামীকাল ১৪ অক্টোবর দ্বারকার নবনির্মিত যশভূমি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের তিন দিন আগেই স্পিকার দিল্লি পৌঁছান। ভারতে অবস্থানকালে স্পিকারের কর্মসূচির মধ্যে ১৯তম জি-২০ পার্লামেন্টোরি স্পিকার সম্মেলনে (পি-২০) অংশ নেওয়ার ‘আদার এনগেজমেন্ট’ লেখা রয়েছে। স্পিকারের দপ্তরের কর্মকর্তারা ওই ‘আদার এনগেজমেন্ট’ নিয়ে কথা বলতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, নয়াদিল্লিতে সম্মেলনের পাশাপাশি স্পিকার সে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে কার কার সঙ্গে বৈঠক করবেন সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য ওই কর্মকর্তা দিতে পারেননি।

একই দিন ১০ অক্টোবর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুও ভারত সফরে গেছেন। আমির হোসেন আমুর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতার সঙ্গে ভারতের রাজনীতিবিদদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। যেহেতু তিনি দিল্লি সফরে গেছেন সেখানে দেশটির রাজনীতিবিদদের অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে, কথা হবে এটাই স্বাভাবিক। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ভারতের সরকার ও বিজেপির কয়েক শীর্ষ নেতার সঙ্গে নয়াদিল্লিতে আমুর বৈঠক হয়েছে। ১৪ থেকে ১৬ অক্টোবরের মধ্যে যেকোনো দিন তিনি দেশে ফিরে আসবেন বলে জানায় ওই সূত্রটি। 

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর দিল্লি সফর নিয়ে আলোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ভারত সফরে যেতে পারেন এমন কথা শোনা যাচ্ছে। যদিও দলটির নেতারা এ নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাচ্ছেন না। 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক পার্টির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা সুতরাং তার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। তা ছাড়া তার দিল্লি সফর নিয়ে দলের মধ্যে যেহেতু এখনও কোনো আলোচনা হয়নি তাই আমি এ বিষয়ে অবগত নই।’ 

তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের শিগরিরই দিল্লি সফরে যাবেন। তবে কবে নাগাদ যাবেন, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি ওই সূত্রটি।

গত জুলাই মাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের ভারত সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও সেই সময় সফরটি হয়নি। পরে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে ৬ আগস্ট দিল্লি সফরে যায় আওয়ামী লীগের ৫ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। সেই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে ছিলেনÑ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত। সফরে সরকারি ও রাজনৈতিক বিষয়ে কয়েকটি বৈঠকের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, তখন দলটির সাধারণ সম্পাদক না গেলেও এবার তিনি দিল্লি সফরে যেতে পারেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সেখানকার নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন। 

রাজনৈতিক মহলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতাদের এ ধরনের সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দলটির নেতারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন। দলীয়ভাবেও বিভিন্ন দেশে সফর করছেন দলটির নেতারা। 

এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম সহযোগী চীন সফর করে এসেছে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গত মে মাসের শেষদিকে চীন সফরে যায় আওয়ামী লীগের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেনÑ আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সুফরা বেগম রুমি, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, পারভীন জামান কল্পনা, আনোয়ার হোসেন, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য তরুণ কান্তি দাস এবং এ কে ফাইয়াজুল হক রাজু। এর আগে চীনা রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে এক নৈশভোজে অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সাংগঠনিক কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে এসব সফর বলে জানান আওয়ামী লীগের নেতারা।

ব্রাসেলসে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ইউরোপীয় কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের বৈঠকে অংশ নিতে আগামী ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে যাচ্ছেন। ২৫ ও ২৬ অক্টোবর গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের বৈঠক হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা এ সময় ব্রাসেলসে উপস্থিত থাকবেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইইউভুক্ত দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হতে পারে। 

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আগে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের পর ব্রাসেলসে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইইউ অব্যাহতভাবে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। তাই গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের বৈঠককে কাজে লাগিয়ে ইইউভুক্ত দেশের শীর্ষ নেতাদের কাছে নির্বাচন নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে পারেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক না পাঠানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্তরণ সামনে রেখে জিএসপি প্লাস আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইউরোপের বাজারে অগ্রাধিকার বাজারসুবিধা (জিএসপি) ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাবে বাংলাদেশের পণ্য। এরই ধারাবাহিকতায় জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে হলে বাংলাদেশকে অনেকগুলো শর্ত মেনে চলতে হবে। এসব শর্তের অন্যতম হচ্ছে গণতন্ত্র, সুশাসন তথা সুষ্ঠু নির্বাচন। ফলে ব্রাসেলস সফরের সময় শ্রম অধিকার, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নসহ সুশাসনের বিষয়ে ইইউভুক্ত সদস্যদেশগুলোর নেতাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে নিজের অবস্থানটা আরও স্পষ্ট করতে চাইবেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা