× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নেতাকর্মীদের ওপর ‘গুপ্ত হামলায়’ চিন্তিত বিএনপি

বাছিল জামাল

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৫৭ এএম

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফাইল ছবি

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফাইল ছবি

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের ওপর চোরাগুপ্তা আক্রমণ এবং বাড়িতে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, আগুন ও লুটপাটে চিন্তিত বিএনপি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক ও গ্রেপ্তারের পাশাপাশি নতুন করে ‘গুপ্ত হামলা’ শুরু হওয়ায় সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন সংগঠিত করা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে দলটি। নেতারা বলছেন, গত এক মাসে এ রকম অন্তত ২০টি গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপির দুই নেতা নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। ফলে অনেক স্থানে নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্কও তৈরি হয়েছে। এর ফলে অনুপস্থিতি বাড়ছে এবং আন্দোলন কর্মসূচি অনেকটা ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছে। এর বাইরে যারা গ্রেপ্তার এড়িয়ে আত্মগোপনে থেকে আন্দোলন সংগঠিত করায় ভূমিকা রাখছেন, তাদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হওয়ায় সামনে যে কঠোর আন্দোলনের ছক কষছে বিএনপি, তাতে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন নেতারা।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অভিযোগ, নতুন করে আন্দোলন সংগঠনের মুহূর্তে নেতাকর্মীদের ওপর গুপ্ত হামলার পেছনে ক্ষমতাসীনরাই জড়িত। দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, আটক এবং সাজা দিয়ে সরকার আন্দোলন দমাতে পারছে না। এমতাবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে আন্দোলন দমানোর কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপির সক্রিয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলার প্রবণতা শুরু হয় গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে। ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর হামলার ঘটনা বাড়তে থাকে। বিএনপির দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গত পাঁচ সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, যশোর, লালমনিরহাট, সিলেট ও ঢাকায় বিএনপির অন্তত ৯৩ জন নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। পাশাপাশি গত দুই মাসে রাজশাহী, নাটোর এবং নওগাঁয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে অন্তত ২০টি গুপ্ত হামলা হয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন বিএনপির দুই নেতা। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীরও কয়েকজন নেতার হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সেই সব ঘটনায় কোনো রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। বাড়ি বাড়ি যারা হামলা করতে যাচ্ছে, তাদের মুখোশ পরা থাকে। কোনো ক্ষেত্রে হেলমেট পরে, কোনো ক্ষেত্রে মুখ আড়াল না করেই হামলা হচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রে ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যাচ্ছে হামলাকারীরা। 

সর্বশেষ গত ২১ নভেম্বর সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কারাবন্দি মির্জা আব্বাসের বাসা লক্ষ্য করে দুটি ককটেল হামলা হয়। মির্জা আব্বাসের স্ত্রী ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস পরে সাংবাদিকদের বলেন, হেলমেট পরা দুজন এসে ককটেল ছুড়ে মারেন। কিছুটা দূরে মোটরসাইকেলে আরও কয়েকজন ছিলেন। পুলিশ তাদের না ধরে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। অবশ্য পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, এটা তার (আফরোজা) রাজনৈতিক বক্তব্য। 

একই দিন সিলেট সিটি করপোরেশনের বিএনপির সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বাসভবন লক্ষ্য করে ককটেল হামলা হয়েছে। এর আগে গত ১৮ নভেম্বর যশোরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের বাড়িতেও ককটেল হামলা চালানো হয়েছে। শহরের ঘোপ এলাকার বাড়িতে একে একে অন্তত ১৫টি ককটেল ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। পাশের বাড়ি তরিকুল ইসলামের ভাই মরহুম সিরাজুল ইসলামের বাড়িতেও একই সময় ককটেল হামলা চালানো হয়।

গত ১৫ নভেম্বর রাতে বগুড়ার শেরপুরের মান্দাইল গ্রামের ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আব্দুল মতিনকে (৫৫) ছুরিকাঘাত ও পিটিয়ে হত্যা করে সরিষাখেতে ফেলে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা। মামলার কারণে তিনি বাড়িতে থাকতেন না। এ ছাড়া গত ১৮ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে নওগাঁ ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সভাপতি কামাল আহমেদকে (৫২) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নওগাঁ পৌরসভার ইয়াদ আলীর মোড় এলাকায় হেলমেট ও মাস্ক পরা কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার ওপর হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

নিহত বিএনপি নেতা নওগাঁ ট্রাক বন্দোবস্তকারী সমিতির সাবেক সভাপতি। এ ছাড়া তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন নওগাঁ নজরুল একাডেমির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) নওগাঁ জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, গুপ্ত হামলা বেড়ে চলছে। রাজনীতিতে এটি নতুন সংযোজন। পুলিশ কিছু বলে না, বরং বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানো হচ্ছে। সেখানে তাদের না পেলে স্বজনদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী গতকাল ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বলেন, গত ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৮৭৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোট মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এ ছাড়া ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এর ৪-৫ দিন আগে থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত ১৫৮৯০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের (সাংবাদিক একজন)। 

রিজভী বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত করার মাধ্যমে আবারও জোর করে ক্ষমতা দখলের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রশাসন ও দলীয় সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ে সেনাদল তৈরি করেছে বর্তমান ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠী। আর এজন্যই সারা দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়েছে। দেশের জনগণ এবং বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের ভয় পাইয়ে দিতে শুরু হয়েছে সন্ত্রাসী হামলা, মামলা, গুম, খুন ও গ্রেপ্তারের মতো নির্মম কর্মকাণ্ড। এ ছাড়া শুরু হয়েছে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা ও বোমা বিস্ফোরণের কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক ঘটনা।’

তিনি বলেন, ‘তবে সরকারকে বলতে চাইÑ এভাবে ভীতির পরিবেশ তৈরি করে আগামী নির্বাচন একতরফাভাবে করতে দেবে না দেশের জনগণ। দেশে মানুষের ভোটাধিকার ও মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে তাতে নামসর্বস্ব কতিপয় রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর নির্বাচনী মাস্টারপ্ল্যান তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।’ 

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূলের মানুষের প্রাণের আন্দোলন। অন্যদিকে রয়েছে রাইফেল, বুলেট, টিয়ার গ্যাস, গ্রেনেড নিয়ে সরকারের মারমুখী প্রশাসন। সারা দেশে গ্রামেগঞ্জে পুলিশ বাহিনী গভীর রাতে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। তাদের সহায়তা দিচ্ছে সরকারি দলের সন্ত্রাসী বাহিনী। কিন্তু এখন আবার আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গুপ্ত হামলা হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী গুপ্ত হত্যার শিকার হচ্ছেন। এসব কারা করছে, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ক্ষমতাসীনরা আন্দোলন দমাতে না পেরে এমন ঘৃণ্য পথ ধরেছে। তারপরও আমাদের আন্দোলন এগিয়ে যাবে। আমাদের নেতাকর্মীরা কোনো দমনপীড়নের কাছেই মাথা নত করবেন না। আমরা পূর্ণ ধৈর্য বজায় রেখে আমাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই ‘গুপ্ত হামলা’ শুরু হলো কেনÑ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল‍্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের দুই দলের মধ্যে একটা টানাপড়েন চলছে। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক সহিসংসতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি না থাকলে হামলা-সহিংসতা বেড়ে যায়।’ 

তিনি বলেন, ‘এখন যে গুপ্ত হামলা ও হত্যা চলছে, এর পেছনে দুই দলের নেতাদের একে অন্যকে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলা। এতে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে রাজনৈতিক উন্মাদনা তৈরি হয়। আর এতে অপরাধস্পৃহা বেড়ে যায়। এসব সমস্যা গণতান্ত্রিকভাবেই সমাধান করতে হবে। গণতান্ত্রিক স্পেস তৈরিসহ তার চর্চা অব্যাহত রাখলে এ প্রবণতা কমবে বলে প্রত্যাশা করি।’

এদিকে বিএনপি তার চলমান সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ডাকা কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনার চিন্তা করছে। বিক্ষোভ, গণজমায়েত কিংবা নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়ার যায় কি না, তা আলোচনায় রয়েছে। নেতারা জানিয়েছেন, আন্দোলনের চলমান কর্মসূচিকে দুই পর্বে ভাগ করা হচ্ছে। প্রথম পর্ব চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এ পর্বে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিই অব্যাহত থাকবে। পর্বটি মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে। এরপর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। তা চলবে ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন পর্যন্ত।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা